আয়লান কুর্দি থেকে ওমরান দাকনিশ। দুজনই সিরিয়ার শিশু, বয়সও একই—পাঁচ। আর দুই শিশুই সুন্দর পৃথিবীর বিপরীতে ব্যর্থতার মূর্ত ছবি হয়ে কাঁদিয়েছে বিশ্বকে।
চলতি বছরের শুরুর দিকে ভূমধ্যসাগরে মৃত শিশু আয়লান কুর্দি কাঁদিয়েছিল বিশ্বকে। এবার কাঁদাল যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ারই আরেক শিশু ওমরান দাকনিশ। রয়টার্সের প্রকাশ করা ওমরানের ছবিটি দেখে যে কেউই চমকে উঠবেন প্রথমে। বিমান হামলায় প্রাণে বেঁচে যাওয়ার পর রক্তাক্ত, সারা গায়ে ধূলিমাখা ভীত শিশুটি একটি অ্যাম্বুলেন্সের সিটে বসে রয়েছে। ভিডিওতে দেখানো হয়, ওই অ্যাম্বুলেন্সের সিটে বসেই শিশুটি নিজের মুখে হাত বুলিয়ে রক্ত দেখতে পেয়ে চমকে ওঠে।
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান লিখেছে, পাঁচ বছরের শিশু ওমরান যেন সিরিয়ার বিধ্বস্ত রূপের নির্মম চিত্র। গতকাল বুধবার ছবিটি প্রথম প্রকাশিত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবিটি হাজার হাজার শেয়ার হয়েছে। টুইটারে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফের প্রতিনিধি রাফ স্যানশেজ প্রথম ওমরানের ছবিটি পোস্ট করেন। পরে সেখানেও ১০ হাজার বার ছবিটি রিটুইট হয়েছে।
গার্ডিয়ান জানায়, গত মঙ্গলবার আলেপ্পোয় বিমান হামলার পর একটি বিধ্বস্ত ভবন থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। এরপর তার ভিডিও আর ছবি প্রকাশ করে সিরিয়ার বিদ্রোহীরা। বুধবার আলেপ্পো শহরে সামরিক বাহিনীর বিমান হামলায় পাঁচ শিশু আহত হয়। এদের মধ্যে ওমরানও একজন।
বিদ্রোহীদের একটি মিডিয়া সেন্টার জানিয়েছে, বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত আলেপ্পোর কোটের্জি জেলার একটি ভবনে রাশিয়ান বিমান হামলার পর ওই শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। সেই সময় এই ছবিটি তোলা হয়। ওই হামলায় তিনজন নিহত আর ১২ জন আহত হয়।
ভিডিওতে দেখা যায়, একটি বিধ্বস্ত ভবন থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে আনা হচ্ছে। এরপর একটি অ্যাম্বুলেন্সের আসনে রক্ত আর ধুলোমাখা শিশুটিকে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এরপর সে খানিকক্ষণ শান্ত হয়ে বসে থাকে। তারপর নিজের মুখে হাত বুলিয়ে, হাতে রক্ত দেখতে পেয়ে চমকে যায়। এরপর সেই রক্ত সে অ্যাম্বুলেন্সের সিটে মুছে ফেলার চেষ্টা করে।
ওসামাব আবু আল-ইজ্জ নামের একজন চিকিৎসক বার্তা সংস্থা এপিকে জানিয়েছেন, শিশুটিকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে আনা হয়। তবে তার মাথায় বড় ধরনের কোনো জখম হয়নি। বিরোধী সিরিয়ান ন্যাশনাল কাউন্সিলের একজন সদস্য বলছেন, এই ছবি প্রমাণ করছে, সিরিয়ায় কী ভয়াবহতা চলছে।
আলেপ্পোর স্থানীয় একটি হাসপাতালে ওমরানকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তার পরিবারের সদস্যদের কী হয়েছে, তা এখনো জানা যায়নি।
আলেপ্পোতে কয়েক সপ্তাহ ধরেই সিরিয়ার বিদ্রোহী আর সরকারি বাহিনীর মধ্যে লড়াই চলছে। সহিংসতায় কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
পাঠকের মতামত: