ঢাকা,বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪

মৃত্যুর খবরেই কবর খননে হাজির, ডুলাহাজারার একদল স্বেচ্ছাসেবী

নিজস্ব প্রতিবেদক :: কবর খনন করা নিঃসন্দেহে নেকীর কাজ, এজন্য ঐ ব্যক্তি অশেষ ছওয়াবের অধিকারী হবেন। কেননা মহান আল্লাহ বলেন- নেকীর কাজে তোমরা পরস্পর সহযোগিতা কর…’ (মায়েদাহ -২)। এছাড়া প্রবাদ আছে- ১০১ টি কবর খনন করলে আল্লাহ খননকারীর সকল গুনাহ মাফ করে দেবেন। অথচ চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা-খুটাখালিতে প্রায় এক যুগ ধরে ইন্তেকাল করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য স্বেচ্ছাসেবীতে কবর তৈরী করছে একদল লোক।

মানবতার সেবা,পরকালের নাজাত এ শ্লোগানকে বুকে ধারন করে নির্বিচ্ছিন্ন ভাবে ছুটে চলছে শোকাতুর পরিবারের কবর স্থানে। খবর পাওয়া মাত্র মরদেহের মাপ-ঝোপ করে দা-কুড়াল-খন্তা নিয়ে দলবেঁধে নেমে পড়ছে কবর খননে। মরহুমের স্বজনদের চাহিদার ভিত্তিতে কবর স্বেচ্চাসেবীরা তৈরী করছে সেলু কবর,বীর কল, সিন্দুক কবর। জানাযা মাঠে মরদেহ আসার আগেই প্রস্তুত করছে নির্দেশিত কারুকার্য খচিত চমৎকার কবর।

শুধু তাই নয়-এই স্বেচ্ছাসেবী কবর খননকারীরা নিজেদের নিয়ে গঠন করেছে কবর খনন এসোসিয়েশন। বর্তমানে অর্ধ-শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক এই এসোসিয়েশনের সদস্য। যারা কিনা বিগত এক যুগে প্রায় আড়াই হাজার মুসলিম মৃত মানুষের কবর খঁুড়ার গর্বিত সদস্য।

পরকালে ছওয়াবের আশায় এরা ইতোমধ্যে কবর খনন করেছে ডুলাহাজারার কালজয়ী পুরুষ, সাবেক দু’ চেয়ারম্যান,পীরে কামেল মরহুম মাওলানা আবদুর রশিদ (রঃ), পীরে কামেল মরহুম মাওলানা এনামুল হক (রঃ), খুটাখালীর পীর সাহেব হাফেজ মাওলানা আবদুল হাই (রঃ) এর মত ধর্মীয় নেতাদের কবর। তেমনি তারা প্রতিনিয়ত কবর খনন করছে-মৃত্যুরকোলে ঢলে পড়া অসহায় নারী.পুরুষ,শিশু কিংবা কোন বেওয়ারিশ বনি আদমের কবর। দাফন-কাফনের আর্থিক সংগতি না থাকলে শুধু কবর খনন নয়-কাপড়, আতর, সুরমা, চাটাল, বঁাশ-বক্সেরও ব্যবস্থা করছে তারা। ধর্মীয় এই মহৎ কাজটি আঞ্জাম দিতে এই মহতি স্বেচ্ছাসেবীরা নিজেদের অর্থে ক্রয় করেছে ২০ হাজার টাকার কবর খননের যন্ত্রপাতি।

তাদের অন্যতম মানবিকতা হচ্ছে কবর খননের বিনিময়ে শোকাতুর পরিবারের কোন চা-নাস্তা খায় না, যাতায়াত খরচ নেয় না। মাসিক ২০ টাকা হারে সদস্য ফি নিয়ে খরচের চাহিদা মেটাচ্ছে নিজেরাই।

এ ব্যাপারে কথা হয়-ডুলাহাজারা কবর খনন এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি চল্লিশ বছর বয়সী, তিন সন্তানের জনক মোহাম্মদ আবদুল গফুরের সাথে। তিনি জানান-মানবিক মূল্যবোধের তাগিদ থেকে পরকালে নাজাত লাভের আশায় আমি ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে অধ্যয়ণকালেই কবর খঁুড়া শুরু করেছি। পরবর্তীতে বৃহত্তর ডুলাহাজারায় যারা কবর খনন করতো তাদের সংগঠিত করে কবর খনন এসোসিয়েশনে রুপ দিয়েছি।

বর্তমানে এসোসিয়েশনের সদস্য সংখ্যা ৫০ জন। সহ-সভাপতি রহমত উল্লাহ জানান- আমাদের মুঠোফোন নাম্বার গুলো অধিক পরিচিত। কবর খননের প্রয়োজনে কল করলেই নিজের কাজ ফেলে রেখে আমরা ছুটে যাই।

এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক জাফর আলম জানান- আমরা মূলতঃ ডুলাহাজারা, খুটাখালি ইউনিয়ন এবং তদপাশ্ববর্তী লামার ফঁাসিয়াখালী ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামে কবর খনন করি। রিকুয়েস্টে চকরিয়ার অনেক এলাকায় আমাদের কবর খঁুড়তে যেতে হয়। কবর খনন এসোসিয়েশনের অর্থ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম চকরিয়া নিউজকে জানান, কবর খননের পর অনেকে খুশি মনে পয়সা-কড়ি দিতে চায়,কিন্তু নিই না। তবে আমরা আমাদের এসোসিয়েশনটি সরকারী নিবন্ধনের আওতায় আনতে সবার সহযোগিতা চাই। এদিকে ডুলাহাজারা ইউনিয়নের কাটাখালি গ্রামের সদ্য মরহুম কামাল উদ্দিনের পুত্র সমাজ সেবক মোহাম্মদ ইলিয়াছ কালু চকরিয়া নিউজকে জানান-এই মানবিক, ধর্মীয় স্বেচ্চাসেবকরা কবর খনন করে শোকাতুর পরিবারে টেনশন কমিয়ে দিচ্ছে। নিঃসন্দেহে ইহকাল ও পরকালের জন্য তারা ভাল কাজ করছে।

পাঠকের মতামত: