ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

মুক্তির সভাপতি শিবুলাল দেবদাসের বিরুদ্ধে কোটি টাকার মানহানি মামলা

অজিত কুমার দাশ হিমু, কক্সবাজার ::
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) মুক্তি কক্সবাজারের সভাপতি শিবুলাল দেবদাসের বিরুদ্ধে কোটি টাকার মানহানি মামলা দায়ের করেছেন সংস্থাটির সাধারন সম্পাদক ও কক্সবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা এডভোকেট রনজিত দাশ।

সোমবার (১৯ আগস্ট) কক্সবাজার সদর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ৪র্থ আদালতে তার পক্ষে মামলাটি দায়ের করেন এডভোকেট মোহাম্মদ জাকারিয়া।

বিজ্ঞ বিচারক তামান্না ফারাহ্ মামলাটি দন্ড বিধি আইনের ৫০০/৫০১ ধারায় বিবাদী শিবুলাল দেবদাসের বিরুদ্ধে আমলে নিয়ে সমন জারীর আদেশ প্রচার করেন। যার মামলা নং সি.আর ৯৯৬/১৯(সদর) এবং আগামী ৩ নভেম্বর মামলার পরবর্তী দিন ধার্য্য করেন।

মামলার আর্জি সূত্রে জানা যায়, বাদী কক্সবাজার জেলার সুপরিচিত ও স্বনামধন্য আইনজীবী। কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, একজন পরিচ্ছন্ন ভাবমুর্তি ও ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ এবং দেশব্যাপী সম্মানিত ব্যক্তি, হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিত্ব, কক্সবাজার জেলা পূজা কমিটির সভাপতি হন। তিনি একাধারে স্বচ্ছ রানীতিবিদ, স্বদেশ প্রেমিক, ধর্মীয় অনুভূতিতে অমিত অনুপ্রাণিত ও দেশব্যাপী সুপরিচিত, সম্মানিত ব্যক্তি।

অপরদিকে মামলার আসামী শিবুলাল দেবদাস একজন গোড়ামিতে আচ্ছন্ন ব্যক্তি, দেশ ও জাতির সর্বনাশ সাধনকারী, দেশের অর্থ পাচারকারী, কুখ্যাত ধর্মপাপী। তিনি বেসরকারী এনজিও “মুক্তি” কক্সবাজারের সভাপতি এবং মামলার বাদী ওই সংস্থার সম্পাদক। সংস্থার সভাপতি ধর্মীয় গোড়ামির কারণে বাদীর পেশাগত, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, ব্যক্তিত্ব, ধর্মীয় সম্প্রীতি, আদর্শ, মান-সম্মান, যশ-খ্যাতি ইত্যাদিতে ঈর্শ্বান্বিত হয়ে বাদীর মান সম্মান ও ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করার কুমানসে গত ১৮ আগষ্ট কক্সবাজার থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক কক্সবাজার৭১’ পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় এবং জাতীয় অনলাইন জাগো নিউজ ২৪ ডটকম এ “মুক্তি কক্সবাজার সভাপতি দুই দেশের নাগরিক” শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে “এডভোকেট রনজিত দাশ মুক্তি কক্সবাজারের সম্পাদক। কোরবানি ঈদে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিতরণ করা ২২টি পশুর টেন্ডার তিনি নিজের পছন্দের লোকদের দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু টেন্ডারের নিয়মানুসারে না পাওয়ায় সংস্থার বিরুদ্ধে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে দাতা সংস্থার লোকজনের সামনে হামলা করায়। এটি এনজিও ব্যুরোসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্থরে জানাজানি হলে তারা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছে” এ ধরনের বক্তব্য প্রচার করায় সংক্ষুব্দ হয়ে বাদী এডভোকেট রনজিত দাশ আসামী শিবুলাল দেবদাসের বিরুদ্ধে এই মামলাটি করেন।

এদিকে মামলার বাদী এডভোকেট রনজিত দাশ বলেন, আমি গরুর টেন্ডার নিয়ে কোন ধরনের বির্তক সৃষ্টি করিনি। আমার পছন্দের লোককে গরুর টেন্ডার নিয়ে দিতে চাইনি এবং কোন সন্ত্রাসী পোষণ করিনা।

তিনি আরও বলেন, আমি একজন আইনজীবী। সম্পূর্ণ হীনমন্যতা, বিবেকহীনতা ও ঈর্শ্বা পরায়ন হয়ে আসামী শিবুলাল দেবদাস আমার মানহানী করেছেন এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে চরমভাবে আঘাত করেছেন। আসামীর উক্তরূপ মানহানীকর অপরাধে আমার একশত কোটি টাকার মানহানী করেছেন। তাছারা আসামীকে কেন আমার বিরুদ্ধে পত্রিকায় মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন জিজ্ঞাসা করলে আসামী শিবুলাল দেবদাস আমাকে প্রাণ নাশের হুমকি প্রদান করেন। এতে আমি সংক্ষব্দ হয়ে দেশের একজন সম্মানিত নাগরিক হিসাবে প্রচলিত আইনের আশ্রয় গ্রহন করেছি।

মামলার বিষয়ে শিবুলাল দেবদাসের বক্তব্য নিতে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে বার বার কল করেও রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

উল্লেখ্য যে, কক্সবাজার থেকে পরিচালিত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) ‘মুক্তি কক্সবাজার’ এর সভাপতি শিবু লাল দেবদাস বাংলাদেশ ও ভারত (পশ্চিমবঙ্গ) উভয় দেশের নাগরিকত্ব বহন করছেন এমন অভিযোগের ভিত্তিতে দেশের বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে তা সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর প্রশাসন নড়েছড়ে বসেছেন।

এছাড়া উক্ত শিবুলাল দেবদাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর আইন পেশায় জড়িত হয়ে এবং এনজিও থেকে আয় করা বিপুল পরিমাণ টাকা অবৈধপথে ভারতে পাচারের অভিযোগও পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কক্সবাজার পৌর এলাকার লালদীঘির পশ্চিমপার বঙ্গবন্ধু সড়কের বাসিন্দা মৃত উজ্জল পালের ছেলে স্বরূপম পাল।

অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন, কক্সবাজার পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের গোলদীঘির পশ্চিমপার এলাকার হরিদাস দেবদাসের ছেলে শিবু লাল দেবদাস (৬১) ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বাসিন্দা। ২০১৯ সালে প্রণীত ভারতের (৫২৫) পশ্চিমবঙ্গের উত্তর-২৪ পরগনা জেলার বারাসাত (সদর) মহকুমার মধ্যগ্রাম থানা ও পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাবুনগর এলাকার (৭০০১২৯) ভোটার তিনি। তার ভোটার নম্বর ২২৪ ওয়াইসিডাব্লিউ ১৫০৩৩১৭, বাড়ি নম্বর# এন০২৬৬। একই ভাবে তার স্ত্রী সীমা দেবদাস (৫১) এবং ছেলে অমর্ত্য দেবদাসও সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা। স্ত্রীর ভোটার নম্বর-২২৫ ভিএইচএম ১৭৪৯৪৪৯, বাড়ি নম্বর-এন ০২৭৬, আর ছেলের ভোটার নম্বর-২২৩ ওয়াইসিডাব্লিউ ১৯৬৪৯৭২, বাড়ি নম্বর-এন ০৩৬১।

একই সঙ্গে শিবু লাল দেবদাস বাংলাদেশের নাগরিক। তার জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি) নম্বর-১৯৫৮২২২২৪০৯৩৬৭৮৮৮। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ভোটার লিস্টে ৩৬৭৮৮৮ নম্বর ফরম মূলে তার নাম রয়েছে। কক্সবাজার পৌরসভার গোলদিঘীর পশ্চিমপাড় (১৩৭৭) এলাকার ১১৭ সিরিয়ালের ভোটার নম্বর-২২১৩৭৭৩৬৭৮৮।

স্বরূপম পাল আরও উল্লেখ করেছেন, শিবু লাল দেবদাস একজন শিক্ষিত ব্যক্তি ও দেশের প্রচলিত আইন সম্পর্কে অভিজ্ঞ। কিন্তু তিনি দ্বৈত ভোটার হওয়ার ব্যাপারে দেশের প্রচলিত আইনের বিধি-বিধান অনুসরণ না করে তথ্য গোপন করেছেন। এরই মাঝে তিনি সেরকারি সংস্থা মুক্তি কক্সবাজারের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবির উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরে মুক্তি কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতা সংস্থার একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এতে বরাদ্দ পাচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এসব ব্যয়ের লভ্যাংশ বা কাজ ফাঁকির মাধ্যমে বিপুল টাকা অবৈধভাবে ভারতে পাচার করছেন। সেখানে (ভারতে) তিনি নিজের, স্ত্রী ও সন্তানের জন্য আলাদাভাবে বিলাসবহুল বাড়ি তৈরি করেছেন বলে খবর রয়েছে। সেখানে ভোটার তালিকায়ও তাদের আলাদা বাড়ি নম্বর উল্লেখ রয়েছে। দ্বৈত নাগরিকত্ব ও তথ্য গোপন করে এখানকার আয় বিদেশে পাচার করা রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের স্বার্থ বিরোধী কাজ। তাই তার বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করেছেন স্বরূপম পাল।

পাঠকের মতামত: