রোহিঙ্গা বিতাড়নের পর অন্যান্য এলাকায় সংখ্যালঘু নিপীড়ন, দুই কাচিন খ্রিস্টানকে হত্যা
আহমদ গিয়াস, কক্সবাজার ::
এর আগে আইডিপি ক্যাম্প থেকে নিজ বাড়িতে যেতে চাইলে তাদের সেনাবাহিনী বেশ কয়েকবার বাধা দেয়। এরপরও ঘরে পোষা প্রাণীর পরিচর্যার কথা বলে যেতে চান তারা। কয়েক ঘণ্টা পর সেনাবাহিনী তাদের যেতে দিলেও পথিমধ্যে আটক করে পরবর্তীতে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে। বর্তমানে কাচিনের বিভিন্ন এলাকায় সেনাবাহিনীর সাথে কাচিনের বেশ কয়েকটি সশস্ত্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর লড়াই চলছে।
মিয়ানমারের গণমাধ্যম সূত্রমতে, গত বছরের ২৫ আগস্টের পর থেকে আরসা বড় কোনো সফল হামলা চালাতে সক্ষম না হলেও অন্যান্য বিদ্রোহী সংগঠনগুলো প্রায় নিয়মিতই সরকারি বাহিনীর ওপর ভয়াবহ হামলা চালাচ্ছে এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটাচ্ছে। গত ডিসেম্বর মাস থেকে ৩টি রাজ্যে বিদ্রোহী বাহিনীর ভয়াবহ হামলা মোকাবেলা করছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এতে বেশ কয়েকজন সেনা সদস্য হতাহত হওয়া ছাড়াও তাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
গত আগস্টে আরাকানে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযান শুরু হলে নির্যাতনের ভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ৭ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। এভাবে স্বাধীনতার পর বিভিন্ন অপারেশনে বাংলাদেশে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে আরো ৫ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। বর্তমানে বারো লক্ষাধিক রোহিঙ্গার ভার বইছে বাংলাদেশ। এরপরও রোহিঙ্গা স্রোত অব্যাহত রয়েছে। রোহিঙ্গা বিতাড়নের পর সেনাবাহিনী উত্তর আরাকানে তাদের অবস্থান সুসংহত করার পর দেশের অন্যান্য রাজ্যেও নতুন নতুন সেনাক্যাম্প স্থাপন, টহল বৃদ্ধি ও অপারেশন চালাচ্ছে। বর্তমানে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত উত্তর আরাকান শান্ত থাকলেও রাখাইনের রাজধানী সিতওয়ে বা আকিয়াবসহ দক্ষিণাঞ্চলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সেখানে আরাকান ন্যাশনাল কংগ্রেস বা এএনসির সশস্ত্র শাখা আরাকান আর্মির খুব প্রভাব রয়েছে।
আরাকানের স্বাধীনতা হারানোর ২৩৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে পুলিশের অনুমতি ছাড়াই র্যালি করতে গিয়ে গত ৩১ ডিসেম্বর পুলিশের গুলিতে নিহত হয় ৭জন রাখাইন। এই ঘটনার জের ধরে রাখাইনের রাজধানী আকিয়াবে সংসদ ভবনের তিন দিকে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি একযোগে বোমা হামলা চালানো হয়। এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়। এই ঘটনায় এ পর্যন্ত ৭জন রাখাইনকে সন্দেহভাজন আসামি হিসাবে আটক করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আরাকান ন্যাশনাল কাউন্সিলের (এএনসি) একজন শীর্ষস্থানীয় নেতাও রয়েছেন। এএনসির সশস্ত্র শাখার নাম আরাকান আর্মি। তারা বার্মিজদের ওপর প্রতিশোধ নিতে নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
মিয়ানমারের শক্তিশালী গণমাধ্যম ইরাওয়াদ্দির খবরে প্রকাশ, গত ৫ মার্চ কারেন রাজ্যের পাপুন জেলার লু থ শহরতলীতে শক্তিশালী কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন বা কেএনইউর যোদ্ধাদের সাথে সেনাবাহিনীর গোলাগুলি হয়েছে। সেখানে ৩০ হাজার শক্তিশালী সদস্যের কারেন যোদ্ধাদের সাথে সেনাবাহিনী মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাদের অবস্থা সুসংহত করার জন্য একটি সড়ক নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিলে নতুন এই উত্তেজনা শুরু হয়। উত্তেজনার কারণে সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি বন্ধ থাকলেও সেখানে সেনাবাহিনীর তাদের জনবল বৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছে।
এর আগে জানুয়ারি মাসের প্রথম দিন ও ১৬ ডিসেম্বর মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চীয় কাচিন রাজ্যে ডেমোক্রেটিক কাচিন বুড্ডিস্ট আর্মির (ডিকেবিএ) সাথে সেদেশের সেনাবাহিনীর দীর্ঘ সময় ধরে লড়াই হয়। একই সময়ে এই রাজ্যের মানশি শহরতলীতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে লড়াই করতে হয়েছে কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্ট আর্মির (কেআইএ) সাথে। গত ২৭ ডিসেম্বর কিউকমি ও নামশান শহরতলীতে টাআং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) যোদ্ধাদের সাথে সেনাবাহিনীর কয়েক ঘণ্টাব্যাপী যুদ্ধ হয়েছে। এতে বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এসব এলাকায় এখনো তীব্র উত্তেজনা চলছে। পৃথকভাবে গত নভেম্বর ও ডিসেম্বরে সেনাবাহিনীকে মোকাবেলা করতে হয়েছে রাখাইন রাজ্যের রাখাইন সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির বেশ কয়েকটি শক্তিশালী হামলা। এই সংগঠনটি মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় ৭টি বিদ্রোহী সংগঠনের একটি এলায়েন্সের সদস্য।
সূত্রমতে, মিয়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চলে স্বশাসন ও স্বাধীনতার দাবিতে লড়াইরত অন্তত ২১টি নৃতাত্ত্বিক সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে মাত্র ৮টি গ্রুপ থেইন শেইন ও বর্তমান সু চি সরকারের আমলে সরকারের সাথে অস্ত্রবিরতি চুক্তিতে এলেও বাকি বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর সাথে প্রায়ই লড়াই হচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর। আবার অস্ত্র বিরতি চুক্তিতে আসা বাহিনীগুলোও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেদের মধ্যে লড়াই করছে। গত ৪ মার্চ মন রাজ্যে নিউ মন স্টেট পার্টির সশস্ত্র শাখা মন ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির সাথে কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন (কেএনইউ) এর সশস্ত্র শাখা কারেন ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির গোলাগুলি হয়। এতে উভয় পক্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
এসব সংঘর্ষের কারণে একদিকে প্রতিবেশী দেশগুলো মিয়ানমারের শরণার্থীর বোঝা বইছে, অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। এছাড়া অনেকেই চিরতরে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে।
আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের সাম্প্রতিক এক হিসাব মতে, মিয়ানমারের শরণার্থীদের সবচেয়ে বড় বোঝাটি বহন করছে বাংলাদেশ। বর্তমানে বাংলাদেশেই রয়েছে অন্তত সাড়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গা। এখনো নতুন শরণার্থী আসছে। এছাড়া প্রতিবেশী মালয়েশিয়াতে প্রায় ২ লাখ, ভারতে প্রায় ৪০ হাজার, থাইল্যান্ডে ৫ হাজার, ইন্দোনেশিয়ায় ১ হাজার রোহিঙ্গা অভিবাসী রয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর বাইরে পাকিস্তানে সাড়ে ৩ লাখ, সৌদি আরবে দুই লাখ (কারো মতে ৫ লাখ) ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১০ হাজার রোহিঙ্গা রয়েছে। এসব দেশের বাইরে জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডাসহ পশ্চিমা বিভিন্ন দেশে বাস করে আরো প্রায় অর্ধ লাখ রোহিঙ্গা।
রোহিঙ্গা মুসলিম ছাড়াও মিয়ানমারের উত্তর–পূর্বাঞ্চলের খ্রিস্টান অধ্যুষিত কারেন ও কাচিন অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষও এখন থাইল্যান্ড ও চীনের শরণার্থী। ভিয়েতনাম ও লাউসেও রয়েছে কয়েক হাজার শরণার্থী। এমনকি ভিন্নমতের বুড্ডিস্ট রাজনীতিকরাও শরণার্থী হয়েছে জান্তার নির্যাতনে। আবার মিয়ানমারের অভ্যন্তরে শরণার্থীর মতো আছে আরো ১ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা। এরা রাখাইনের রাজধানী আকিয়াবের আইডিপি ক্যাম্পে আছে।
মিয়ানমারে দীর্ঘ সামরিক শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ঠ হয়ে দেশত্যাগকারী মানুষের সংখ্যা আরো অনেক বেশি। এরা প্রতিবেশী বা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পরবর্তীতে স্থায়ী নাগরিক হয়ে ওসব দেশের বোঝা বাড়িয়েছে।
- চকরিয়া সদরের কাঁচাবাজার অবৈধ সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি
- চকরিয়ার নতুন নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতিকুর রহমানের যোগদান
- চকরিয়ায় মহামারি প্রার্দুভাব মোকাবেলায় গৃহপালিত তিন শতাধিক গরু-ছাগলকে টিকাদান
- চকরিয়ায় পুলিশের অভিযানে দুই পলাতক আসামি গ্রেফতার
- চকরিয়ায় মোটরসাইকেল আরোহী ওষুধ কোম্পানির ম্যানেজারসহ তিনজন নিহত
- চকরিয়া ক্বিরাত সংস্থার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন
- চকরিয়ায় ডাম্পা,ট্রাক-মোটরসাইকেলের ত্রি-মূখি সংঘর্ষে নিহত-১,আহত-২
- ঈদগাহ জাহানারা ইসলাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া পুরস্কার বিতরন
- পোকখালীতে ছোট ভাইয়ের লাঠির আঘাতে বড় ভাই নিহত
- চকরিয়া পেকুয়ার প্রবাসিদের নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিতকল্পে হেল্পডেক্স চালু
- চকরিয়ায় মহাসড়কে গাড়ির ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই যুবক নিহত
- চকরিয়া পেকুয়ার প্রবাসিদের নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিতকল্পে হেল্পডেক্স চালু
- টেকনাফে সাবেক ওসি রনজিতের অবৈধ সম্পদ জব্দের আদেশ
- প্রধান নির্বাচন কমিশনার হলেন কক্সবাজারের সন্তান এ এম এম নাসির উদ্দীন
- চকরিয়া উপজরলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু তাহের চৌধুরীর ইন্তেকাল
- চকরিয়ায় জেলা পরিষদের জায়গা থেকে আ.লীগের কার্যালয় উচ্ছেদ
- চবি ছাত্রশিবিরের ১৭ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ
- কক্সবাজারে নানা আয়োজনে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপন
- সেন্টমার্টিন ভ্রমণে বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার দাবিতে কাফনের কাপড় পরে সড়ক অবরোধ
- জেলায় টিসিবির পণ্য পাচ্ছে ১ লাখ ১৫ হাজার পরিবার
- আওয়ামী শাসন আইয়্যামে জাহেলিয়াতকেও হার মানিয়েছে -রামু’তে জেলা জামায়ত আমীর
- কক্সবাজারে শঙ্কার মাঝেও বাণিজ্য মেলার অনুমতি, প্রধান সমন্বয়ক আ.লীগ নেতা!
পাঠকের মতামত: