ডেস্ক নিউজ :
ঢাকঢোল পিটিয়ে অভিযান করে মাদকের মামলায় আটক আসামিদের ছেড়ে দিচ্ছে সরকার। সম্প্রতি সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ১৪২ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়; যার এক-তৃতীয়াংশ মাদক মামলার আসামি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আটক ব্যক্তিদের বেশির ভাগই ১৫ দিন বা এক মাস আগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাঁদের প্রায় সবারই বয়স ১৮ থেকে ৪০-এর মধ্যে।
অথচ ২০১২ সালে কারাবন্দীদের বিষয়ে দেওয়া এক নির্দেশনায় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, মাদকের মামলায় আটক কোনো আসামি সরকারের বিশেষ বা সাধারণ ক্ষমাসুবিধা পাবেন না। কিন্তু কারাগারে বন্দীদের সংখ্যা কমানোর এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে গত ১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ওই আসামিদের মুক্তি দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী বলেন, বয়স্ক, অসুস্থ, সাজার মেয়াদ শেষ এবং লঘু অপরাধে আটক যাঁরা, তাঁদেরই মুক্ত করা হবে। বিশেষ করে যাঁদের সাজার মেয়াদ পার হয়ে গেছে, তাঁরাই মুক্ত হবেন এই প্রক্রিয়ায়।
কিন্তু সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া ১৪২ জনের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মুক্তি পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৬০ জনই মাদক মামলার আসামি। যাঁদের বেশির ভাগই আগস্ট-সেপ্টেম্বরে গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ ছাড়া তাঁদের মধ্যে যৌতুক মামলা ও ১৯৭৪ সালের বিশেষ আইনে আটক হওয়া আসামিরাও ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৩৬ জনকে মামলা থেকে একেবারে অব্যাহতি ও ১০৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে জামিন দেওয়া হয়েছে। মুক্তি পেয়েছেন যাঁরা, তাঁদের মধ্যে অসুস্থ, বয়স্ক বা অনেক দিন আটক আছেন, কিন্তু বিচার হচ্ছে না—এমন কারও নাম দেখা যায়নি। এ ছাড়া চুরি, ডাকাতি বা লঘু অপরাধে আটক এমন ব্যক্তিদেরও মুক্ত করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে মাদক মামলায় ৫৩ হাজার ৭২৬ জন আটক রয়েছেন। এর মধ্যে হাজতি ২৭ হাজার ৪১৫ জন। কারাগারের চাপ কমাতে এই হাজতিদের মধ্যে প্রায় সবাইকে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের হওয়া মামলায় গত বছর ৬০ শতাংশ আসামি ছাড়া পেয়েছেন। এর মধ্যে ২০১৩ সালে ৪৬ শতাংশ আসামি ছাড়া পেলেও গত বছর এই হার বেড়ে হয়েছে ৬০ শতাংশ। গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০১৭ সালে মামলা হয়েছে সবচেয়ে বেশি—১ লাখ ৬ হাজার ৫৪৬টি। গ্রেপ্তার হন ১ লাখ ৩২ হাজার ৮৯৩ জন। ২০১৬ সালের তুলনায় গত বছর মামলার সংখ্যা প্রায় ৩৭ হাজার বেশি ছিল।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত হচ্ছে বয়স্ক ও অসুস্থ আসামিদের মুক্ত করা। কিন্তু এখন যদি এসে মাদক মামলার আসামিদের আটকের পরপরই এভাবে ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে আর এসব অভিযান করে কী হবে?
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এই প্রক্রিয়ায় দোষ স্বীকার করে মুচলেকা দিলে জামিন বা মুক্তি মিলছে লঘু অপরাধে কারাগারে ছয় মাস থেকে তিন বছর ধরে আটক আছে এমন হাজতিদের। সরকারের দাবি, ছোট অপরাধে তাঁরা বেশি সময় সাজা খেটে ফেলেছেন, তাই তাঁদের মুক্তি বা জামিন পেতে সহযোগিতা করছে তারা।
পাঠকের মতামত: