ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

মাতারবাড়িতে ২ মাস ধরে পানিবন্দী ২৫ হাজার মানুষ

মহেশখালী প্রতিনিধি ::

অপরিকল্পিত বাঁধ দেওয়া ও ভরাট করার কারণে মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি ইউনিয়নের প্রায় ৫শ পরিবারের ২৫ হাজার মানুষ দুই মাস ধরে পানিবন্দী। মাতারবাড়ীতে দেশের সর্ববৃহৎ কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প হওয়ার সুবাদে প্রকল্পের চতুর্দিকে মাটি ভরাট করছে জাইকা কোল–পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি। মাটি ভরাট করতে গিয়ে পূর্বের যেসব স্লুইসগেট ও চিংড়ি ঘেরের কালভার্ট ছিল তা বন্ধ করে দিয়েছে কোল–পাওয়ার জেনারেশন কর্তৃপক্ষ। পানি নিষ্কাশনের জন্য বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় মাতারবাড়িতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী পানি নিষ্কাশনের বিকল্প ব্যবস্থা চায়।

পানিবন্দী লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তারা দীর্ঘদিন যাবৎ পানির সঙ্গে বসবাস করে এলেও কোনো ধরনের পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে উচ্ছেদকৃত ৪৫ পরিবারের সদস্যরা জানান, মাতারবাড়ীতে বড় বড় দুটি বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ২ হাজার ৬০০ একর জমি তারা সরকারের ডাকে সাড়া দিয়ে অধিগ্রহণের জন্য ছেড়ে দিয়েছেন। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী মাতারবাড়ির মানুষকে সব ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারের সুযোগ দিলেও এক শ্রেণির দালাল সাধারণ জনগণকে অধিকার বঞ্চিত করে নিজেদের পকেট ভারি করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী মাতারবাড়ির জন্য ৩ হাজার টাকা করে প্রায় সাড়ে তিন হাজার পরিবারের জন্য ঈদের শুভেচ্ছা উপহার পাঠালেও ক্ষতিগ্রস্ত ও উচ্ছেদকৃত ৪৫ পরিবারের অনেক সদস্য তা পায়নি।

মাতারবাড়ি সাইরার ডেইল এলাকার ইউপি সদস্য ও মানবাধিকার সুরক্ষা কর্মী হামেদ হোসাইন চকরিয়া নিউজকে বলেন, মাতারবাড়ির মানুষের কষ্ট দেখার কেউ নেই। পানিবন্দী হয়ে পড়ায় টয়লেট ব্যবহার ও নলকূপের পানি পান করতে পারছে না তারা। ফলে ডায়রিয়াসহ নানা রোগ দেখা যাচ্ছে। এছাড়াও গত গ্রীষ্ম মৌসুমে সাগরের লোনা পানি লবণ মাঠে তুলতে না পারায় দুই প্রকল্পের বাইরে শত শত একর লবণ মাঠে লবণ চাষ করতে পারেনি স্থানীয়রা। চলতি বর্ষায় বৃষ্টির পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় মাতারবাড়ীতে ২৫ হাজার মানুষ দুই মাস ধরে পানিবন্দি হয়ে দিন কাটাচ্ছেন। পানিবন্দী লোকজন সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে বলেন, বিদ্যুৎ প্রকল্পের অবকাঠামোগত কাজের পাশাপাশি এলাকার লোকজনকে পানিবন্দী থেকে মুক্ত করা হোক।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মাতারবাড়ী দক্ষিণ রাজঘাট, সাইরার ডেইল ও ফুলজানমুরা এলাকার মানুষের কষ্ট আর স্কুল মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াতের অসুবিধা হচ্ছে।

রাঙ্গাখালী বাঁধের ওপর কোল–পাওয়ার কর্তৃক স্লইচ গেইট নির্মাণের বরাদ্দ হলেও বর্ষার পানি বেড়ে যাওয়ায় তা আর নির্মাণ করা যাচ্ছে না বলে জানান স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহ। তবে আপাতত পানি নিষ্কাশনের জন্য শীঘ্রই কালভার্ট বসানোর ব্যবস্থা করা হবে।

মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কালাম চকরিয়া নিউজকে জানান, মাতারবাড়িতে পানিবন্দী মানুষের কষ্ট দূর করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে কাজ শুরু করবেন।

পাঠকের মতামত: