নিজস্ব প্রতিবেদক, মাতারবাড়ি থেকে ::
অবশেষে বহুল প্রতীক্ষিত, জাইকার সর্বোচ্চ বিনিয়োগে মহেশখালীর মাতারবাড়িতে নির্মিতব্য ১২০০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের এখন ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের অপেক্ষায়। আগামী জানুয়ারি ২৫ আল্ট্রা সুপার ক্রিটিকাল প্রযুক্তিতে পরিবেশবান্ধব এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, জাইকার প্রকল্পের মধ্যে শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রকল্প হচ্ছে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প। এই প্রকল্পকে ঘিরে জাপান সরকার জাইকার মাধ্যমে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। ২০২৩ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে।
মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি ইউনিয়নে ১৪১৪ একর জমির ওপর নির্মিত হচ্ছে এই বিদুৎকেন্দ্র। নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এরমধ্যে জাপান সরকারের কাছ থেকে ঋণ সহায়তা হিসেবে পাওয়া যাবে ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি তিন লাখ টাকা। আর সরকার যোগান দেবে সাত হাজার ৪৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা। ২০২৩ সালের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করে এই কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বঙ্গোপসাগর ও কোহেলিয়া নদীর তীর ঘেঁষে বিশাল এলাকাজুড়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। কয়েক শ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি দিয়ে চলছে ভরাট কাজ। কাজ করছেন কয়েক’শ শ্রমিক। মাটি ভরাট, বালু উত্তোলন, মাটি কাটা, প্রকল্পের বিভিন্ন কার্যালয় স্থাপনসহ বিশাল এলাকাজুড়ে চলছে শুধুই উন্নœয়ন কর্মযজ্ঞ। জাপানি ও বাংলাদেশি কয়েক’শ প্রকৌশলী এসব কাজ তত্ত্বাবধান করছেন।
কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের সাগরের মহেশখালী চ্যানেলে জেটি নির্মাণের লক্ষ্যে কৃত্রিমভাবে খাল খনন করা হয়েছে। কয়লাবাহী জাহাজ ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেশিন ও যন্ত্রপাতি খালাস করার জন্য জেটি নির্মাণ কাজ আগে করা হয়েছে বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
২০১৪ সালের শেষ দিকে প্রকল্পের ভৌত অবকাঠামা নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে বলে জানায় বিদ্যুৎবিভাগ। কিন্তু দেশে জঙ্গি হামলার কারণে জাপানি প্রকৌশলী ও কর্মকর্তারা কাজ করা থেকে বিরত থাকেন। এতে ভৌত অবকাঠামোর কাজ অনেকটা পিছিয়ে পড়ে। গত জুন মাসে ভৌত অবকাঠামোর কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু জঙ্গি হামলার কারণে তা অনেকটা পিছিয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আগ্রহের কারণে এবং প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক নির্মাণ কাজ শুরুর জন্য তিন–চার মাস থেকে প্রকল্পের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, কয়লাভিত্তিক এ বিদুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে আল্ট্রা সুপার ক্রিটিকাল প্রযুক্তিতে। প্রকল্প এলাকায় সড়ক নির্মাণ, টাউনশিপ গড়ে তোলাসহ আনুষঙ্গিক কাজের ১৮ শতাংশ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাতারবাড়িতে গিয়ে এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোয়াসু ইজুমি প্রকল্পের প্রকৌশলী ও শ্রমিকদের কাজে খুশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতি দেখে জাপান সরকার প্রকল্পের ঋণ সহায়তা দিয়েছে।
উদ্বোধনের আগে গতকাল (শুক্রবার) প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোয়াসু ইউজুমি, জাইকার জাইকার চিপ রিপ্রেজেন্টেটিভ টাকাতুসি নিশিকাতা, পিডিবি চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ, কোল পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডের এমডি আবুল কাশেম। এছাড়াও বিদ্যুৎ বিভাগ ও সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মহেশখালী–কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফর ও জনসভা ঘিরে কক্সবাজার জেলা ও মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী মহেশখালীর উন্নয়নে উদার মনোভাব দেখিয়েছেন। অবহেলিত এই উপকূলীয় এলাকাকে ঘিরে বিদ্যুৎকেন্দ্র, অর্থনৈতিক জোন, গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছেন। এজন্য মহেশখালীবাসী প্রধানমন্ত্রীর আগমনে অধীর আগ্রহে রয়েছেন।
প্রকল্প সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের আগাস্টে মাতারবাড়িতে বিদুৎকেন্দ্র নির্মাণে ৩৬ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করে সরকার।
গত বছর ২৭ জুলাই এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য জাপানি কনসোর্টিয়াম সুমিতোমো করপোরেশন, তোশিবা করপোরেশন ও আইএইচআই করপোরেশন’র সঙ্গে চুক্তি করে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড।
এই বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়াও মহেশখালীতে গভীর সমুদ্র বন্দর, এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও নগর গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছে সরকার।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে উন্নয়নের অন্যতম মাইলফলক। কৃত্রিম ডিপ সি, ল্যান্ড বেসড এলএনজি টার্মিনাল, কোল টার্মিনাল নির্মাণে মহেশখালীসহ দেশকে দ্রুত উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
নসরুল হামিদ বলেন, প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে এই মেগা প্রকল্পটি। এ পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ। ভৌত অগ্রগতি ১৮ শতাংশ। এ প্রকল্পের আওতায় চ্যানেল ও জেটি নির্মাণ, কোল ইয়ার্ড নির্মাণ, পল্লী বিদ্যুতায়ন, টাউনশিপ নির্মাণ, পল্লী বিদ্যুতায়ন কাজের আওতায় চকোরিয়া–মাতারবাড়ি ১৩২ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণ এবং ১৩২/৩৩ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন একটি সাবস্টেশন নির্মাণ করা হবে।
পাঠকের মতামত: