ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ব্যয় কমাতে আরেকটি কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা

মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় হবে ১৩ টাকা। আমদানি করা কয়লা দিয়ে এই দামে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে তার ব্যয় দাঁড়াবে বর্তমানে ফার্নেস অয়েল দিয়ে উৎপাদিত বিদ্যুতের চেয়েও বেশি। অস্বাভাবিক এই দাম কমাতে তাই কৌশলগত সিদ্ধান্ত হিসেবে নতুন আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে চায় সরকার। আর প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য নতুন করে জমি অধিগ্রহণেরও দরকার পড়বে না। তাই এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে দাতা সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) কাছে ঋণ সহায়তা চাইবে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরের সময় বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে যে আলোচ্য সূচি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে তাতে বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।
আলোচ্য সূচিতে বলা হয়েছে, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে আনতে সেখানে আরও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা প্রয়োজন। কারণ হিসাবে বিদ্যুৎ বিভাগ প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জমি অধিগ্রহণ, উন্নয়ন, ক্ষতিপূরণ, কয়লা আনার জন্য চ্যানেল খনন, কয়লা খালাসের জন্য জেটি এবং অন্য অবকাঠামো নির্মাণ, সংযোগ সড়ক নির্মাণ, বিদ্যুতায়নসহ সব কিছু জাইকার অর্থায়নে করা হচ্ছে। সঙ্গত কারণে একই ক্ষমতার অন্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে এর উৎপাদন ব্যয় দ্বিগুণ হবে।
বলা হচ্ছে, আমদানি করা কয়লা থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় দাঁড়াবে সাড়ে ৬ টাকার মতো। সেই হিসাবে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় হবে ১৩ টাকা—যা দেশে উৎপাদিত তরল জ্বালানি (ফার্নেস অয়েল) থেকেও বেশি। এখানে আরও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হলে সেটিও একই অবকাঠামো ব্যবহার করতে পারবে। এতে কেন্দ্রটির উৎপাদন ব্যয় কমে আসবে।
মাতারবাড়িতে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ (সিপিজিসিবিএল)। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি জাইকার অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে। এখানে আরও একটি এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে চায় সরকার।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, তারা এরইমধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে (ইআরডি) মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ফেইজের অর্থায়নের অনুরোধ জানিয়েছে। ইআরডি জাপান দূতাবাসের মাধ্যমে জাইকাকে চিঠি দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরে বিষয়টি দুই দেশের সরকার প্রধান পর্যায়ে আলোচনা হবে। এতে তৃতীয় ও চতুর্থ ইউনিটের অর্থায়ন সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। উন্নয়ন প্রকল্প অনুযায়ী, প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। এরমধ্যে জাইকা ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দিচ্ছে। বাকি সাত হাজার ৪৫ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার ও সিপিজিসিবিএল এর নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হচ্ছে।
জাপানের সুমিতমো করপোরেশন, তোসিবা করপোরেশন ও আইএইচআই করপোরেশনের কনসোটিয়াম কেন্দ্রটি নির্মাণ করছে। এজন্য এক হাজার ৬০৮ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সাধারণত এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি কেন্দ্র নির্মাণের জন্য সাড়ে ৩০০ একর জমি প্রয়োজন হয়। তবে এখানে প্রায় তিনগুণ জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া সাড়ে সাত কিলোমিটার একটি চ্যানেল খনন করা হচ্ছে।যে চ্যানেল দিয়ে দেশের অন্যসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লাও খালাস করা হবে।সরকার বলছে, এই চ্যানেলে একটি কয়লা বন্দর নির্মাণ করা হবে। এজন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ একটি সমীক্ষা পরিচালনা করছে। গভীর সমুদ্রবন্দরের সকল সুবিধা সম্বলিত এই বন্দরটিতেও জাপান বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, মাতারবাড়ি ছাড়াও দেশে রামপাল এবং পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। কয়লাচালিত এই দুইটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষমতা এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট করে। এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্রেও সমান ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুইটি ইউনিট নির্মাণ করা হয়। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় হবে সাড়ে ৬ টাকা। ফলে মাতারবাড়িতে উৎপাদন ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ।
স্বাভাবিকভাবেই চ্যানেল খনন এবং অন্য অবকাঠামো নির্মাণ করতে গিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ব্যয় দ্বিগুণ হয়েছে। যাতে ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের ওপর প্রভাব পড়ছে। ফলে এখানে আরও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা না হলে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির শিকার হবে সিপিজিসিবিএল বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, এটি অর্থনৈতিকভাবে ভায়াবল করার জন্যই আরও দুইটি ইউনিট নির্মাণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এখন তো দুইটি ইউনিট। আরও দুইটি হলে এ কেন্দ্রটি অর্থনৈতিকভাবে ভায়াবল হবে। নয়তো খরচ অনেক বেশি পড়বে। আর এখানে বন্দর, চ্যানেলসহ বেশ কিছু অবকাঠামো করতে হয়েছে ফলে খরচ একটু বেশিই হচ্ছে। ফলে একই অবকাঠামোতে যদি বেশি কেন্দ্র হয় তাহলে খরচ কমে যাবে।
প্রসঙ্গত, ত্রিদেশীয় সফরের উদ্দেশে আজ মঙ্গলবার (২৮ মে) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের মধ্যে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুও আছেন। ১২ দিনের এই সফরে তিনি সৌদি আরব ও ফিনল্যান্ডও সফর করবেন।

পাঠকের মতামত: