ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

মাতামুহুরীর নদীর দু’তীরে চলছে তামাকের আগ্রাসন

tamak,.নিজস্ব প্রতিনিধি, চকরিয়া :::

মাতামুহুরী নদীর দু’তীরের বিস্তীর্ণ উর্বর জমিতে ব্যাপকভাবে চলছে তামাকের আগ্রাসন। এতে কক্সবাজারের চকরিয়া ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় তামাকের বিষক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ছে। বৃষ্টির পানিতে তামাকের বিষ মাতামুহুরী নদীতে নেমে আসছে। তামাকের ক্ষতিকর প্রভাবে নদী খাল বিলের মাছ ও বোরো ধানের ফলন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এলাকার মানুষসহ পশু পাখিও হুমকির মুখে পড়েছে। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট গবেষকরা জানিয়েছেন; বৃষ্টির সময় তামাকের জমি ধৌত পানি নদীতে নেমে আসায় এ ক্ষতিকর প্রভাব আরও ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে।
গবেষণা সংস্থা উবিনীগ(উন্নয়ন বিকল্পের নীতিনির্ধারণী গবেষণা)’র গবেষক বীজ বিস্তার ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড. এমএ সোবাহান জানান; তামাক খেতে(ক্ষেত) চাষীরা ৮ ধরণের রাসায়নিক কীটনাশক (বিষ) ব্যবহার করে। ওই বিষের প্রতিক্রিয়া জমিতে অনেক দিন ধরে থেকে যায়। বিষক্রিয়া প্রাণী কুলের জন্য খুবই ক্ষতিকর। বৃষ্টির পানিতে ওই বিষ নদীতে চলে আসলে ক্ষতির প্রভাব চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তামাকের জমিতে মাত্রারিক্ত বিষ প্রয়োগ হলে ওই বিষক্রিয়ার পানি নদীতে পড়লে মাছ মরে যায়। কম বিষ প্রয়োগেও মাছের ডিমের ক্ষতি হয়। ধানের ফলন কমে যায়। পশু পাখিরও ক্ষতি হয়। এমন কি মানুষের ক্যান্সার সহ অনেক রোগ হতে পারে। তাছাড়া তামাকেও রয়েছে ক্ষতিকর নানা প্রভাব। মাতামুহুরী নদীতে প্রতি বছর মাছ মরে যাওয়ার ঘটনা তামাকে ব্যবহৃত রাসায়নিক কীটনাশকের বিষক্রিয়া।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কক্সবাজারের চকরিয়া, বান্দরবানের লামা ও আলীকদম উপজেলায় মাতামুহুরী নদীর দু’তীরের বিস্তীর্ণ উর্বর জমিতে তামাকের চাষ করা হয়েছে। এমন কি তামাকের চাষ থেকে নদীর তীরের জমি থেকে শুরু করে নদীর চর, বনভূমি, নদীর ঢালু কিছুই বাদ যায়নি। কক্সবাজারের চকরিয়া, বান্দরবানের লামা ও আলীকদমের শেষ প্রান্ত মিয়ানমারের সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছেছে এ তামাক চাষ। বেসরকারী সংস্থা উবিনীগ (উন্নয়ন বিকল্পের নীতিনির্ধারণী গবেষণা)’র দেয়া তথ্য মতে চকরিয়া, লামা ও আলীকদম উপজেলায় প্রায় ৩২ হাজার একর জমিতে তামাকের চাষ করা হয়েছে। এখন তামাক তোলার ভর মৌসুম চলছে। তামাক চাষীরা জানায়, তামাক তোলার আগ মুহুর্তে গত মার্চ মাসে দুই দিনের বৃষ্টি, গত ৪ ও ৫ এপ্রিলের প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে তামাক চাষ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃষ্টিতে তামাকের পাতা নষ্ট হয়ে গেছে। তামাকের এসব পঁচাপাতা জমিতে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানায়; এ অবস্থায় বৃষ্টিতে তামাকের জমি ধৌত পানি মাতামুহুরী নদীতে নেমে এসেছে। এসব দুষিত পানি চকরিয়া ও পেকুয়ার বোরো ধান খেতে উঠে ফলন নষ্ট করছে। বোরো ধানের শীষ বের হওয়ার সময় ও ধান পাকার সময় তামাক জমি ধৌত পানির কারণে বোরো ধানের ফলন কমে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। এলাকাবাসি জানায়; এ বছর ৩১মার্চ ও ১ এপ্রিল মাত্র দু’দিনে বিষক্রিয়ায় মাতামুহুরী নদীতে কোটি কোটি টাকার মাছ মরে গেছে। এ নদীতে এই সময়ে প্রতি বছর একইভাবে ব্যাপক হারে মাছ মরে যাওয়ার ঘটনা ঘটে আসছে। এলাকাবাসি জানায়, মাতামুহুরী নদীতে প্রতি বছর এ সময়ে এসে মাছ মরে যাওয়ার ঘটনা ঘটলেও সংশ্লিষ্টরা অজ্ঞাত মৎস্য শিকারিকে বিষ দিয়ে মাছ মারার দোষারোপ করে প্রকৃত ঘটনা আড়াল করছে।
চকরিয়া উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিমুল হক জানান; তামাক চাষীরা তাদের তামাকে ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহার করে থাকে। ওই কীটনাশকের বিষক্রিয়ায় মাছ মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে আসছে প্রতিবছর। এই কীটনাশক বেচাবিক্রিতে কোন নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। তার মতে এ কারণে মাঝে মধ্যে মৎস্য শিকারিরাও এ বিষ প্রয়োগ করে মাছ নিধনের সুযোগ নিচ্ছে। মৎস্যজীবিরা জানায়, মাতামুহুরী নদী, খাল বিলেও এখন মাছের দেখা মিলছে না। তামাকের বিষক্রিয়ার প্রভাবে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে।
চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আতিক উল্লাহ জানান; তামাকে ব্যবহৃত বিষক্রিয়ায় ধানের ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ বিষের কারণে জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে। মাছ, পশু পাখী, এমন কি এলাকার মানুষও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সাইফুর রহমান জানান; কয়েক বছর ধরে মাতামুহুরী নদীতে ব্যাপক ভাবে মাছ মরে যাওয়ার ঘটনা ঘটে আসছে। এ বছরও মাতামুহুরী নদীর মাছ ব্যাপকভাবে মরে গেছে। এতো মাছ কি কারণে মারা গেছে তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে।

পাঠকের মতামত: