আতিকুর রহমান মানিক, কক্সবাজার :::
কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে হচ্ছে প্রায় বার হাজার একর অায়তনের পৃথক ৪ টি অর্থনৈতিক অঞ্চল। বাস্তবায়নাধীন মাতারবাড়ী ও মহেশখালী কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রস্তাবিত এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদ্যুৎ সুবিধা পাওয়া যাবে। বিনিয়োগ ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য প্রস্তাবিত এসব অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে নতুন আশাবাদ তৈরি হয়েছে। আগামী ১৫ বছরে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু করা সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) নতুন করে মহেশখালী সহ আরো ৯টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান চূড়ান্ত করেছে। এর মধ্যে সরকারিভাবে বাস্তবায়ন হবে পাঁচটি, আর বাকি চারটি করবে দেশের স্বনামধন্য বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও শিল্পগ্রুপ।
গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর মতিঝিলে বিনিয়োগ বোর্ড কার্যালয়ে সাত সদস্যের স্থান নির্বাচন কমিটি এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রস্তাব অনুমোদন দেয় বলে জানা গেছে। এই নিয়ে ২০১০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৬৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান চূড়ান্ত করল কমিটি। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
বেজা সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য স্থান চূড়ান্ত করতে নির্বাচন কমিটির সামনে মোট ১৩টি প্রস্তাব ওঠানো হয়। সেখান থেকে যাচাই-বাছাই করে ৯টি স্থান চূড়ান্ত করে কমিটি। যার মধ্যে সরকারি পর্যায়ে পাঁচটি, আর চারটি বেসরকারি পর্যায়ে।
সরকারি পর্যায়ে পাঁচটির মধ্যে অন্যতম হলো মহেশখালীর একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল, যার আয়তন প্রায় নয় হাজার একর। কক্সবাজার শহর থেকে সড়ক ও নৌপথে ৪০ কিলোমিটার দূরে প্রস্তাবিত এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে নৌ ও সাগরপথে যোগাযোগ থাকায় অত্যন্ত সহজে ও কম খরচে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহন করা যাবে।
মহেশখালী উপজেলার হামিদেরদ্বিয়া, কুতুবজোম ও ঘটিভাঙ্গা মৌজার ৮ হাজার ৭৮৪ একর এলাকাজুড়ে এ অঞ্চলটি গড়ে তোলার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ অঞ্চলে বাস্তবায়নাধীন হোয়ানক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে। নৌ-পথে চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ ভালো। এ ছাড়া চরভরাট শ্রেণির জমি হওয়ায় এতে বৈধ বসতি নেই। প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে ভালো নৌ-যোগাযোগ, প্রচুর খাস জমি ইত্যাদি কারণে মহেশখালীতেই ৪টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার চিন্তা করা হচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, কক্সবাজার সদর থেকে সড়কপথে ৪০ কিলোমিটার ও নৌপথে ৪ কিলোমিটার দূরে মহেশখালী উপজেলার ছোট মহেশখালী, পাহাড় ঠাকুরতলা ও গোরকঘাটা মৌজা জুড়ে ১ হাজার ৪৩৮ একর এলাকায় একটিভেট অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর নাম হবে মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চল-১। মহেশখালীর উত্তর নলবিলা মৌজার ৮২৭ একর জমি জুড়ে মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চল-২ নামে আরেকটি অঞ্চল প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়েছে। প্রস্তাবিত এলাকাটি মহেশখালী চ্যানেলের পাড়ে ও বদরখালী সেতু দ্বারা সারাদেশের সড়ক সংযোগের সঙ্গে যুক্ত। মহেশখালীর ধলঘাটা মৌজার ৬৭৬ একর এলাকাজুড়ে মহেশখালী-৩ নামে আরও একটি অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।
সূত্রমতে, তিনটি অঞ্চলেই যথাক্রমে মহেশখালী ও মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সুবিধা পাওয়া যাবে। দেশের দুই সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে এর নৌ যোগাযোগও ভালো। পাশাপাশি জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বসতি বা আবাদি জমি নষ্ট করতে হবে না।
বেজার একাধিক কর্মকর্তা বলেন, অনেক বিচার-বিশ্লেষণ, যাচাই-বাছাই করেই কেবল অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য স্থান চূড়ান্ত করা হয়। যেখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল করা হবে সেখানে যাতায়াতব্যবস্থা ভালো কি না, জমি ঠিক আছে কি না, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির ব্যবস্থা আছে কি না এবং ওই স্থানে ব্যক্তিমালিকানাধীন কারো বাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান কিংবা স্থাপনা আছে কি না এসব বিষয় দেখেই কেবল অনুমোদন দেওয়া হয়। লবন, মৎস্য ও মিষ্টি পান উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত সাগরদ্বীপ মহেশখালী থেকে প্রতিবছর বিপুল পরিমান রাজস্ব যোগ হচ্ছে জাতীয় অর্থনীতিতে। এখানে রয়েছে পর্যটন শিল্পের অমিত সম্ভাবনা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রাচীন তীর্থস্হান আদিনাথ মন্দির, রাখাইন পল্লী ও ক্যাংসহ দর্শনীয় বিভিন্নস্হান দেখতে প্রতিনিয়ত মহেশখালী ছুটে যান দেশী-বিদেশী পর্যটকরা। এছাড়াও রয়েছে ভার্জিন অাইল্যান্ড সোনাদিয়া। পরিযায়ী পাখির বিচরনস্হল ও সামুদ্রিক কাছিমের ডিম পাড়ার উপযোগী পরিবেশ রয়েছে নয়নাভিরাম সোনাদিয়া দ্বীপে।
পাঠকের মতামত: