ঢাকা,রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

মহেশখালীতে লবণ চাষীকে “ক্রসফায়ারে দিমু” এসআই রাজুর হুমকি ’

‘তুই জমিনে দ্বিতীয়বার নামলে খোদার কসম ক্রসফায়ারে দিমু

আরফাতুল মজিদ, কক্সবাজার ::

কক্সবাজারের মহেশখালী হোয়ানক পানিরছড়া এলাকায় লবণ মাঠ নিয়ে দু’ পক্ষের বিরোধ চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। বিরোধের বিষয়টি ইতোমধ্যে থানা ও আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। তারপরও লবণ মাঠ নিয়ে চলছে দুই পক্ষের শক্ত অবস্থান। এর মধ্যে খতিয়ানভুক্ত লবণ মাঠের মালিক দাবিদার আব্দুল মালেক গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার বিজ্ঞ আদালতের আশ্রয় নেন।
আদালত বিষয়টি বিবেচনা করে ওই লবণ জমিতে ১৪৪ ধারা জারি করেন। পাশাপাশি মহেশখালীর সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) বিষয়টি সরেজমিনে তদন্তপূর্বক মতামতসহ রিপোর্ট দেয়ার জন্য নির্দেশ দেন এবং মহেশখালী থানার ওসিকে ওই বিরোধীয় জায়গায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখারও নির্দেশ দেন। আব্দুল মালেক বলেন, আদালত ১৪৪ ধারা জারি করার কপিটি থানার ওসি এএসআই জাহাঙ্গীরকে দেখভালের দায়িত্ব দেন। কিন্তু গত ২০ ফেব্রুয়ারি থানার অপর এসআই রাজু আহমদ গাজীর নেতৃত্বে এই লবণ মাঠে তা–ব চালানো হয়েছে। তা–ব চালানোর আগে এসআই রাজু আমাকে মোবাইল ফোনে বিভিন্নভাবে গালিগালাজসহ ক্রসফায়ারের হুমকি দেন। যার কল রেকর্ড রয়েছে। একাধিক কল রেকর্ডের ৪ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের একটি তথ্য এই প্রতিবেদকের হাতে পৌঁছে। এসআই রাজুর গালিগালাজ ও হুমকি হুবহু তুলে ধরা হলো। ‘কেটে দিলে কেন সোনা! এতো লবণ বিক্রি করে, এতো মানুষের সম্পদ জোর করে খাওয়ার পর টাকা শুকিয়ে যায়। আজ আমি কাগজ নিয়ে যাওয়ার পর তুই যদি দ্বিতীয়বার আর এই জমিনে নামলে খোদার কসম কইলাম তোরে জিন্দা থেকে পিন্দা কইরা দিমু। আর না হয় তোরে পানির ভিতরে চুবাইয়া দিমু। তুই থানায় এসে হাজির হয়ে যা, রাত আটটার মধ্যে। তুই না এলে আদালতে যা। কথা শুন। আদালতে যদি আসামি হাজির না হয়, একতরফা বিচার হয়ে যায় না। তোরে ফোন করেনি সজিব? এসআই সজিব ফোন করে নাই? কারে পাঠাবি তুই? কালাম মেম্বার কেন ফোন দিবে? তোর কাগজ তুই নিয়ে আসবি। আমি মেম্বার চেয়ারম্যান পাত্তা দিই না। আমি তারেক চেয়ারম্যানরে ঢুকায় দিছি। তুই আয়। তোর বউয়ের কাছে তুই না ঘুমাবি, আমি ঘুমাইলে হইবো। তোর ওয়ারেন্ট থাকলে থানায় হাজির হ। কোর্টে সেরেন্ডার কর আজকেই। কোনো কথা নেই, জমিনে দ্বিতীয়বার তুই নামবি না। তুই নামলে তোরে বালিশ ছাড়া হুতাই দিমু। মাথার নিচে বালিশ দেয় না মানুষে! তোরে বালিশ ছাড়া হুতাই দিমু। কথা বুঝতে পারোনি। বালিশ ছাড়া হুতাই মানে, তোরে ক্রসফায়ার দিমু। তোর ওয়ারেন্ট কয়টা আছে। কি মামলা আছে। আচ্ছা তুই থানায় আয় আগে। তোর মার্ডার কেইস আমি দেখমু। তোর ওয়ারেন্ট যদি থাকে, সেটা আমি দেখমু। আমি তোরে যেটা বলছি সেটা কর তুই। আমি যদি তোরে ডেকে এরেস্ট করি তাহলে আমি মানুষের জন্ম না। আমি তোরে কথা দিলাম, তুই টেলিফোনে রেকর্ড করে রাখ। কথা শুন তুই। রেকর্ড করে রাখ। ওয়ারেন্ট থাকার পর তোরে যদি আমি এরেস্ট করি, আমি মানুষের জন্ম না। আরে তুই থানায় আয়। বিকালে আয়। আরে তোরও অধিকার আছে আমার কাছে, তারও অধিকার আছে আমার কাছে। তুই থানায় আয়। যা দেখার আমি দেখব। তোরে যদি কেউ এরেস্ট করে, তাহলে তোর হ্যান্ডকাপ আমার হাতে লাগাবো আয়।’
প্রায় সাড়ে ৫ মিনিটে এমন হুমকি দেন এসআই রাজু। আব্দুল মালেক আরো বলেন, আমার নামে থানায় একটি ষড়যন্ত্রমূলক হত্যা মামলা রয়েছে। ওই মামলার কারণে আমি লবণ মাঠে যেতে পারছি না। এই সুযোগে প্রতিপক্ষ জাফর আলম, নুরুল কবির বাশি ও আব্দুল মান্নান আমার লবণ মাঠ দখলের চেষ্টা চালায়। যার ধারাবাহিকতায় মহেশখালী থানার বহু বিতর্কিত এসআই রাজুর মাধ্যমে আমাকে হুমকি দেয়। অথচ এসআই রাজু লবণ মাঠ নিয়ে কোনো তদন্তের দায়িত্বও পায়নি। অপরাধীদের সাথে সখ্যতা করে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেন।
এ বিষয়ে মহেশখালী থানার এএসআই জাহাঙ্গীর বলেন, একটি পক্ষ আদালতের আশ্রয় নিয়েছে। আদালত এ বিষয়ে থানার ওসিকে ওই জায়গায় শান্তি–শৃংখলা বজায় রাখার বিষয়ে অবগত করেন। আর ওসি এ বিষয়ে আমাকে দেখভাল করার জন্য নির্দেশ দেন। কিন্তু এই জমি নিয়ে এসআই রাজু মোবাইলে হুমকি দেয়ার বিষয়ে আমি অবগত নই। এ নিয়ে আমার বলার কিছু নেই।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে এসআই রাজু আহমদ গাজীর মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে প্রতিবেদকের পরিচয় দিয়ে মোবাইলে ম্যাসেজও দেয়া হয়। তারপরও কোনো সাড়া নেই। এতে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মহেশখালী থানার ওসি প্রদীপ কুমার বলেন, ওই লবণের মাঠের বিষয়ে আমি অবগত আছি। আব্দুল মালেক নামে এক ব্যক্তি কিছু অসহায় মানুষের কাছ থেকে এসব লবণ মাঠ অবৈধভাবে দখল নিয়ে রেখে দিয়েছে। তিনি খুব খারাপ লোক। তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ পাঁচটি ওয়ারেন্ট রয়েছে। তাকে খুঁজে পাচ্ছি না। তিনি পলাতক। তাকে ধরতে বিভিন্ন ধমক দেয়া হচ্ছে।
এসআই রাজু অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ ক্রসফায়ারের হুমকির বিষয়ে তাহলে আপনি অবগত আছেনÑ এমন প্রশ্নে ওসি প্রদীপ কুমার বলেন, ‘এই বিষয়টি আমি জানি না। যদি এমন হুমকি দেয়, তাহলে কাজটি ভালো করেনি। তারপরও বিষয়টি আমি দেখতেছি।’
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল বলেন, আপনি আমার কাছে কল রেকর্ডটি পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। যদি এমন হুমকি দেয়ার বিষয়টি প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে নিয়ম অনুসারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পাঠকের মতামত: