মহেশখালী প্রতিনিধি :: ‘ভাই, হুনেন এই লাইনে কিছু খারাপ লোক চলে আসছে! এজন্য আমাদের বদনাম হচ্ছে। গাড়ির মালিকরা অনেকে আমাদের বিশ্বাস করতে চায় না। টাকা দেয়ার পর যে গাড়ি ফেরত পাবে- এই ভরসা পায় না। কিন্তু আমরা এরকম না। এক জবান আমাদের। টাকা দিবেন গাড়ি ফেরত পাবেন। কোনো চিন্তা কইরেন না। টাকা পাঠায়া দেন।’
সিএনজি গাড়ি চুরি করে নিয়ে যাওয়ার পর মালিকের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে মোবাইল ফোনে এভাবেই কথা বলছিল চোরচক্রের একজন। গাড়ির মালিক দুশ্চিন্তায়। টাকা দিয়েও যদি গাড়ি ফেরত না পান। বিশ্বাস রেখে টাকা পাঠাতে বলেছে চোরচক্রের সদস্য। দাবিকৃত টাকা পেলে ফেরত দেয়া হয় গাড়ি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমও ঘটে।
সম্প্রতি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে গাড়ি চোরচক্র। খোদ চন্দনাইশ-বাঁশখালী থেকে সিএনজি ট্যাক্সি চুরির ঘটনা ঘটছে। এসব গাড়ি এনে বিক্রি করেছে মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী চোর সিন্ডিকেটকে। এসব চোর সিন্ডিকেট গ্যারেজের আড়ালে চোরাই গাড়ি এনে মাতারবাড়ীসহ বিভিন্নস্থানে বিক্রি করে আসছিলেন।
তবে চোরাইকৃত গাড়ি বিক্রি করে ভাগবাটোয়ারায় না মেলায় সিন্ডিকেটের এক সদস্য মাতারবাড়ী বাসিন্দা মনির গাড়ির মালিকদের বিষয়টি জানিয়ে চোরাইকৃত গাড়ির সন্ধান দেন এবং স্থানীয় মেম্বার ও জনতার সহযোগিতায় গত সপ্তাহে মাতারবাড়ী থেকে সিএনজি ট্যাক্সি উদ্ধার করা হয়। একে একে ৩টি গাড়ি উদ্ধার করা হয়েছে। গাড়ি উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন গাড়ি সমিতির শ্রমিক নেতা সরওয়ার আলম।
অভিযুক্ত সিন্ডিকেটের সদস্যরা হলেন বাঁশখালীর বাসিন্দা বর্তমান মাতারবাড়ী নতুনবাজার ওয়ার্কশপের ইঞ্জিনমিস্ত্রী কাইছার, মাতারবাড়ী ৪নং ওয়ার্ড মনহাজী পাড়ার বাসিন্দা মনির ও সজীব। তবে মনির সজীব এক সময় গাড়ি চালালেও এখন গাড়ি ব্যবসার আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে চোরাইকৃত গাড়ি এনে মাতারবাড়ী মজুদ করে আসছিলেন এবং গাড়িগুলো বিক্রি করে অবশেষে ধরা পড়ল।
গাড়ির মালিকরা স্থানীয় মেম্বার আব্দুল কুদ্দুচ ও মোহাম্মদ আলীসহ গাড়ি সমিতির নেতাদের সহযোগিতায় গাড়িগুলো উদ্ধার করে নিয়ে গেছে। তবে নতুনবাজার ওয়ার্কশপের ইঞ্জিনমিস্ত্রী কাইছার চোরাইকৃত গাড়ি সব কিছু অদল-বদল করে চেহারা পাল্টিয়ে দিতেন এমনটি জানিয়েছেন শ্রমিক নেতাদের একজন। সে চোরাইকৃত গাড়ির সিন্ডিকেটের সদস্য না হলে এসব গাড়ির পাটর্সসহ কেন বদলাতেন এমনি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সচেতন মহলের।
জানা গেছে, গাড়ির রাখার স্থানে চারদিকে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা, সড়কে জনসমাগম তার পরও মুহূর্তের মধ্যেই পার্কিং থেকে হাওয়া হয়ে যাচ্ছে গাড়ি।
এমনকি চালককে অজ্ঞান করে, মারধর করে গাড়ি নিয়ে যায় চক্রটি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার মধ্যেই ঘটছে এসব ঘটনা। চুরির তুলনায় গাড়ি উদ্ধারের সংখ্যা খুবই কম। চোরচক্র নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করছে। যে কারণে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পেরে উঠছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তাই সাধারণত থানা-পুলিশমুখো হতে চান না চুরি যাওয়া গাড়ির মালিকরা। বরং চুরি যাওয়া নিজের গাড়িটি টাকার বিনিময়ে ফিরিয়ে নেন চোরের কাছ থেকে। এক্ষেত্রে চোরেরাই কৌশলে যোগাযোগ করে। রয়েছে চোরের দালালপক্ষ। চোরের কাছ থেকে কমিশনের বিনিময়ে তারা মালিক ও চোরের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে।
মহেশখালী মাতারবাড়ী পুলিশ ক্যাম্পের আইসি এসআই ইমরান জানান, এবিষয়ে খবর নিয়ে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাঠকের মতামত: