কক্সবাজার প্রতিনিধি ::
কক্সবাজারের বিভিন্ন পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে ৩ লাখেরও বেশী মানুষ। ঝূঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারি এসব মানুষদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে জেলা প্রশাসন নানা উদ্যোগ নিলেও কিছুতেই সরতে রাজি হচ্ছে না এসব লোকজন।
পাহাড় কাটাসহ নানা কারণে গত ৭ বছরে পাহাড় ধ্বসে পর্যটক, সেনা সদস্যসহ মারা গেছে শতাধিক মানুষ। এরপরেও পাহাড়ে ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা লোকজন মরতে রাজী কিন্তু পাহাড় ছাড়তে রাজী নন। এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড়ে ঝুকিপূর্ণ ভাবে বসবাসরত লোকজনকে নিরাপদস্থানে সরানোর চেষ্টা করলেও তারা জীবনের ঝুকি নিয়ে বরাবরেই পাহাড়ে অবস্থান করছে।
জেলা প্রশাসক বলছেন, পাহাড়ে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারদের তালিকা করে সরিয়ে নেয়া হবে। প্রয়োজনে পুনর্বাসন করা হবে। ইতিমধ্যে’ই কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং ঝুকিপূর্ণদের তালিকা তৈরা করা হয়েছে।
সরেজমিনে শহরের বৈদ্যঘোন, ঘোনার পাড়া, পাহাড়তলী, রুমালিয়ারছড়া, কলাতলীসহ বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, লোকজন শুধু ঝুকিপূর্ণভাবে পাহাড়ে অবস্থান করছেনা। তারা ওই ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় পাহাড় কেটে প্রতিনিয়ত ঘর তৈরী করছে। অন্যদিকে পাহাড় ধ্বস ও বৃষ্টির কারনে পাহাড় ধ্বসের ঝুঁকির কারনে লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটসহ পৌরকর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছে তাদের ঝুকিপূর্ণ এলাকা থেকে সরিয়ে নিতে। কিন্তু এসব লোকজন কোনভাবে সরছে না।
শহরের বৈদ্যঘোনার শাহজাহানের স্ত্রী রোজিনা আক্তার বলেন, ‘এই পাহাড় ছেড়ে আমরা কোথায় যাব। আমাদের’ত শহরে থাকার কোন জায়গা নেই। তাই মরলেও এখানে থাকতে হবে। বাচঁলেও এখানে থাকতে হবে। এছাড়া শহরে ভাড়া ঘরে থাকারমত কোন সামর্থ নেই। তাই বাধ্য হয়ে এই পাহাড়েই থাকতে হচ্ছে’।
ঘোনার পাড়ার লিয়াকত মিয়া জানান, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে। কিন্তু মাইকিং করলেও বউ-বাচ্চা আর ঘরের জিনিস-পত্র নিয়ে কোথায় যাব। সরকার যদি আমাদের থাকার ব্যবস্থা করে দিত তাহলে যেতে পারতাম।’
কলাতলী এলাকার রফিকুল ইসলাম নামে এক স্কুল শিক্ষক জানান, ‘আজকের দিনে পাহাড় কাটা নিয়ে যে সচেতনতামূলক কর্মকান্ড কারা হচ্ছে, লোকজনকে সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তা আসলেই দূর্ভাগ্যজনক। কারন প্রতিবছর দেখা যায় বৃষ্টি’র সময় প্রশাসন খুব তৎপর। আর বৃষ্টি চলে গেছে আবার স্বাভাবিক। এটা উচিত নয়। এই সচেতনতা যদি আগে থেকে করা হত অন্তত এতগুলো মানুষ মারা যেতনা।’
এ ব্যাপারে কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহবুবুর রহমান জানান, পৌরসভা নিজ উদ্যোগে সকল কাউন্সিলরকে নিয়ে ৮ টি কমিটি গঠন করেছে। ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসরতদের তালিকা তৈরী করা হয়েছে। ঝুকিপূর্ণভাবে প্রায় ২শত বাড়ির তালিকা করা হয়েছে। তাদের দ্রুত উচ্ছেদ করা হবে। আর পুর্নবাসন করা হবে।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কাজী মোঃ আব্দুর রহমান জানান, পাহাড়ে ঝূঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারিদের সরিয়ে নিতে মাইকিং, সচেতনতামূলক প্রচারণা সহ নানা তৎপরতা চালাচ্ছে প্রশাসন। যার জন্য একটি টিম গঠন করা হয়েছে। অতিঝুঁকিপূর্ণ যেসব বসতি রয়েছে তাদের ইতিমধ্যেই তালিকা তৈরী করা হয়েছে এবং যেকোন মুহুর্তে তাদের অপসারণ করা হবে। প্রয়োজনে প্রশাসন কঠোর হবে।
উল্লেখ্য, গত ২০১০ সালের জুন মাসে কক্সবাজারে স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড় ধসে মারা যায় সাত সেনা সদস্যসহ ৫৬ জন। আর ২০১৫ সালের জুলাই মাসে শহরের বাহারছড়ায় ভয়াবহ পাহাড় ধ্বসে একই পরিবারের ৩ জন সহ নিহত হয় ৫ জন। এর পর থেকে অব্যাহতভাবে হিমছড়ি ইসিবির আর্মী ক্যাম্প, সার্কিট হাউজ এলাকা, সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের হোয়াইক্যাং ও উখিয়ায় পাহাড় ধস হয়েছে বেশ কয়েকবার।
পাঠকের মতামত: