নিজস্ব প্রতিবেদক, কুতুবদিয়া ::
দেশব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া-মগনামা চ্যানেলে বোট (ডেনিস) চলাচলে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। দীর্ঘদিন ধরে প্রতি ৩০মিনিট পরপর বোট (ডেনিস) চলাচল চালু ছিল। তবে হঠাৎ কোন এক অজানা কারণে ওই নিয়ম পরিবর্তন করে এক ঘন্টা পরপর যাত্রী পারাপারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঘাটের ইজারাদার। মাঝখানে ৩০ মিনিট অন্তর বোট চলাচল বা পারাপার বন্ধ থাকায় নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন কুতুবদিয়ার বিভিন্ন শ্রেণীর পেশাজীবীসহ সাধারণ যাত্রীরা।
এছাড়া ঘাট পারাপারে পূর্বে প্রতি ঘন্টায় জনপ্রতি ৩০টাকা ভাড়া নির্ধারণ থাকলেও তেলের দাম বৃদ্ধির পর চলতি সপ্তাহ’র শুরু থেকে১০টাকা বাড়িয়ে ৩০টাকার পরিবর্তে ৪০টাকা করে ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে ইজারাদারের বিরুদ্ধে।
জানা যায়, গত ০৭-আগস্ট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের নিয়ে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় সংক্রান্ত এক মত বিনিয়ম সভা অনুষ্টিত হয়। অনুষ্টিত মত বিনিময় সভায় নতুন ভাড়া নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত কুতুবদিয়া-মগনামা চ্যানেল পারাপারে ঘাটের ইজারাদারদের আগের নিয়মে ভাড়া আদায়ের নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশিদ। এবং জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় যাত্রী পারাপারে নতুন ভাড়া নির্ধারণের বিষয়ে আগামী ১০দিন পর পূনরায় বৈঠক হবে মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
এদিকে ঘাট পারাপারে জেলা প্রশাসক কতৃক পূর্বের নিয়মে ভাড়া আদায়ের নির্দেশনা থাকলেও তা কোন ভাবেই মানছে না ইজারাদার কতৃপক্ষ।নিয়মের তোয়াক্কা না করেই তাদের খেয়ালখুশি মতো যাত্রী পারাপার করছে। গতকাল সরেজমিনে তথ্যানুসন্ধানে গিয়ে দেখা গেছে,ঘাট পারাপারে যাত্রীদের এক চরম দুর্দশার চিত্র।
যাত্রীর চাপ থাকলেও নানা অজুহাতে এক ঘন্টার আগে বোট ছাড়ে না চালকেরা। অনেকে রোগী নিয়ে জরুরী প্রয়োজনে আগের মতো প্রতি ৩০মিনিট পরপর ঘাট পার হতে পারছে না। কেউ জরুরী প্রয়োজনে ঘাট পার হতে চাইলে গুনতে হচ্ছে হচ্ছে ১০০০ থেকে ১২০০টাকা পর্যন্ত। আগের নিয়মে ঘাট পারাপার বন্ধ রাখায় ক্ষু্ব্ধ সাধারণ যাত্রীরা। যাত্রীদের অভিযোগ, কোন কারণ ছাড়াই প্রতি আধা ঘন্টা পরপর বোট চলাচল বন্ধ করে ঘন্টায় জনপ্রতি ৩০টাকার পরিবর্তে ৪০টাকা করে ভাড়া আদায় করছেন ইজারাদার।
দরবার ঘাটে বোট (ডেনিস)’র জন্য অপেক্ষারত সাইফুল ইসলাম নামের এক যাত্রী বলেন, চট্টগ্রাম যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে ঘাটে রওয়ানা দিয়েছি। তবে মাত্র পাঁচ মিনিট দেরি হওয়ায় বোট পায়নি। আধা ঘন্টা পরপর বোট চলাচল বন্ধ রাখায় পারাপারের জন্য পুরো একঘন্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এতে সময়ের অপচয়সহ দুর্ভোগের শিকার হন বলে জানান সে।
বড়ঘোপ ঘাট থেকে মগনামামুখী নুরুল ইসলাম নামের আরো এক যাত্রী বলেন, নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় কৌশলে প্রতি ৩০মিনিট পরপর (রিজার্ব) বোট চলাচল বন্ধ রেখেছে ইজারাদার। এখন ঘাটে আসতে ঘড়ির কাটা ঘন্টা অতিক্রম করলে পরবর্তি এক ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। যাত্রী থাকলেও ঘন্টার আগেই বোট ছাড়ে না।পরবর্তী বোটে নিয়ম ভঙ্গ করে শতাধিক যাত্রী বোঝাই করা হয়। এতে সাগরের মাঝখানে ভয়াবহ দূর্ঘটনার শঙ্কা থাকে।
ইজারাদার সূত্রে জানা গেছে, দরবার ও বড়ঘোপ ঘাটের পৃথক ইজারাদার রয়েছে। তৎমধ্যে নুরুল ইসলাম ভুট্টো দরবার ও কামরুল সিকদার বড়ঘোপ ঘাটের ইজারাদার হিসেবে দায়িত্বে রয়েছে। মুঠোফোনে যাত্রীদের অভিযোগ ও ঘাট পারাপারের এসব অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথমে হট্টগোলে পড়েন তারা।
ইজারাদার কামরুল সিকদার বলেন, আবহাওয়া খারাপ হওয়ার কারণে প্রতি ৩০মিনিট পরপর বোট চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে প্রতি একঘন্টা পরপর ৩০ টাকার পরিবর্তে ১০টাকা বাড়িয়ে ৪০টাকা ভাড়া আদায়ের বিষয়ে যাত্রীদের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ পাইনি বলে জানান সে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপংকর তঞ্চঙ্গ্যার নিকট মুঠোফোনে জানতে চাইলে কল রিসিভ না হওয়ায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
পাঠকের মতামত: