সেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও, কক্সবাজার- ২৯ জানুয়ারী ::
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের ভোমরিয়া ঘোনা ও ফুলছড়ি রেঞ্জের বিভিন্ন বনবিট থেকে শত শত গাছ রাতের আঁধারে পাচার করছে বনদস্যুরা। পাহাড় বেষ্টিত দূর্গম এই বনে বিগত ৪২ বছর ধরে বেড়ে উঠা মূল্যবান গাছগাছালি ধীরে ধীরে সাবাড় করে দিচ্ছে নামধারী হেডম্যান ভিলেজাররা। দল বেঁধে পাহাড়ে ঢুকে প্রতিদিন ১শ থেকে দেড়শ’র বেশি গাছ কেটে চোরাই পথে বাজারে বিক্রি করছে শক্তিশালী চক্র। আর তাদেরকে মদদ দিচ্ছে স্থানীয় বনবিভাগের অসাধু কর্মকর্তা ও রাজনীতিকরা। অভিযোগ উঠেছে গত কয়েক মাসে চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী মেধাকচ্ছপিয়া ন্যাশনাল পার্ক থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকার গর্জন গাছ পাচার হয়েছে।
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ফুলছড়ি রেঞ্জের আওতাধীন মেদাকচ্ছপিয়া বনবিটে হাজার হাজার মাদার ট্রি গর্জন বাগান রয়েছে। গত ১ বছরে এলাকার কিছু প্রভাবশালী মহলের ইন্ধনে এলাকার কিছু লোক বনের রক্ষিত গর্জন গাছ কাটা শুরু করেন। সে থেকে চলে আসছে মাদার ট্রি গর্জন গাছ কাটার ধুম। নিরবে গত কয়েক বছর ধরে গর্জন গাছ উজাড় করছে কাঠ চোরেরা। ফলে মেদাকচ্ছপিয়া বনবিট এখন অনেকটি বিরাণ ভুমিতে পরিনত হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, এ বিটের গাছ পাচার করে খুটাখালীর অনেকেই বাড়ি-গাড়ি, জমি জমার মালিক বনে গেছেন। শুধু তাই নয় বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীরাও হয়েছেন লাখপতি।
এলাকাবাসীর মতে, খুটাখালীতে ক’জন প্রভাবশালী ব্যাক্তি ও তাদের স্বজনরা নানা ভাবে প্রভাব খাটিয়ে লোকজন দিয়ে পাহাড় থেকে গাছ কেটে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। মাঝে মধ্যে সারা রাত ধরে গাছ কাটা হয় এ বনে। গত কয়েক মাসে প্রায় এ বন থেকে অর্ধ কোটি টাকার গর্জন গাছ পাচার করা হয়েছে বলে জানান তারা।
সূত্রে জানা যায়, প্রতি রাতে মেদাকচ্ছপিয়া বনবিট, খুটাখালী বনবিট, ফুলছড়ি বনবিট, নাপিতখালী বনবিট, মেহের ঘোনা বনবিট ও ভোমরিয়াঘোনা বনবিটের টহলরত বনরক্ষি ও পুলিশকে টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করা হয়। রাতের আঁধারে কাটা গাছ যাতে নির্বিঘেœ বাইরে নেয়া যায় সে জন্য স্থানীয় চোরাকারবারি চক্র ভোমরিয়াঘোনা- ফুলছড়ি রেঞ্জ অফিস ও পুলিশকে টোকেনের মাধ্যমে টাকা প্রদান করে। ঐ চোরাকারবারিরা চকরিয়া ও কক্সবাজার মডেল থানার পুলিশের হাতে টাকা পরিশোধ করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে বন দস্যুরা রাজনৈতিক ভাবে বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও কাঠ পাচার নিয়ে তারা এক। ঈদগাঁও, ইসলামপুর ও খুটাখালীতে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের কয়েকজন নেতা কাঠ পাচার করে রাজকিয় কায়দায় জীবন যাপন করছে বলেও জানা গেছে। আবার কিছু পাচারকারী বনাঞ্চল থেকে কাঠ বের করে স্বল্প মূল্যে বিক্রি করে স্থানীয় কিছু সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীদের কাছে।
বৈধ কাঠ ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদগাঁও- নতুন অফিস- ইসলামপুর বাজার ও খুটাখালী বাজারে কয়েক শ ফার্ণিচার দোকান গড়ে উঠেছে। এসব কারখানার মালিকরা প্রতি মাসে বন বিভাগের লোকদের টাকা দিয়ে থাকেন। অন্যদিকে এ দু জায়গায় গড়ে উঠেছে ১৫টির অধিক সমিল। এসব সমিল ঘিরেই পরিচালিত হচেছ অবৈধ কাঠ ব্যবসা।
এব্যাপারে ভোমরিয়াঘোনা রেঞ্জ কর্মকর্তা জানান, দূর্গম পাহাড়ি এলাকায় স্বল্প সংখ্যক লোক দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। ফুলছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা বনরক্ষিদের ঘুষ গ্রহণ বিষয়ে জানান, যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের প্রধান বন সংরক্ষক বলেন, কাঠ পাচারের সাথে সংশ্লিষ্ট বন বিভাগের কোন কর্মকর্তা কর্মচারী জড়িত নেই।
পাঠকের মতামত: