ঢাকা,সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

করোনার কারণে চকরিয়ায় নির্বাচন স্থগিত

ভোটারদের পৌষ মাস, প্রার্থীদের সর্বনাশ!

এম.আর মাহমুদ ::

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তপশীল অনুযায়ী নির্বাচনের সভা আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করলেও শেষ পর্যন্ত করোনা মহামারির কারণে পৌর ও ইউপি নির্বাচন স্থগিত করেছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে পহেলা এপ্রিল। ঘোষিত তপশীল অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ১১ এপ্রিল। প্রার্থীরা গত ২৫ মার্চ থেকে প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে প্রচার-প্রচারণায় চষে বেড়াচ্ছিল মাঠে-ময়দানে। হঠাৎ করে করোনার অগ্রযাত্রা লাগামহীন ঘোড়ার মত ছুটে চলার কারণে নির্বাচন কমিশন ভোটারদের প্রাণে বাঁচানোর জন্য নির্বাচন স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে।

সরকার জাতির পিতার শত জন্মবার্ষিকী সুন্দরভাবে সম্পন্ন করেছেন। দাওয়াত দেওয়া বিদেশী মেহমানরা যথাসময়ে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে যোগদান করেছে। এক্ষেত্রে সরকার শতভাগ সফল। এক্ষেত্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগমনকে কেন্দ্র করে হেফাজতে ইসলামসহ সমমনা কিছু ইসলামী দলের অতি বাড়াবাড়ির কারণে বেশ কিছু মায়ের বুক খালি হয়েছে, যা দুঃখজনক। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে স্বাধীন দেশের ভূ-খন্ডে এমন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ছিল জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক।

পৌর ও ইউপি নির্বাচন স্থগিত হওয়ার সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে ‘মুসলমানদের পবিত্র রজনী শবে বরাতের রাতে’ এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর প্রার্থীরা চরমভাবে হতাশ হয়েছে। তাদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে।

অপরদিকে সুচতুর ভোটারেরা এ সংবাদ পেয়ে মহানন্দে উল্লাসিত হয়েছে। কারণ ক’দিন পরেই রমজান, রমজানের শেষে পবিত্র ঈদুল ফিতর। এদিকে পাগলা ঘোড়ার মত লাগামহীনভাবে ছুটে চলছে করোনা মহামারি। এখন ভোটারদের কাছে প্রার্থীরা নির্ধারিত। কারণে অকারণে সহায়তার জন্য ছুটে যাবে প্রার্থীদের দরবারে। প্রার্থীরা অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভোটারদের মনজয় করার জন্য সহায়তার হাত বাড়াতে বাধ্য হবে। ফলে তাদের ভোটের ব্যয় বেড়ে যাবে ২/৩ গুণ বেশি। করার কিছু নাই, হজম করতেই হবে। ছোট একটি গল্প না বললে হয় না ‘দুটো বড় পাতিল নিয়ে বিক্রির জন্য যাচ্ছিলেন এক পোনা ব্যবসায়ী। নদী পার হতে গিয়ে ফেরি নৌকায় উঠে বসে। নদী ভর্তি পানি, নৌকা ভর্তি মানুষ। এরই মধ্যে পোনা ব্যবসায়ী তার পাতিল দুটি নড়াচড়া করছিল। এমন সময় নৌকার মাঝি বলে বসল, আপনারা নড়াচড়া করবেন না মাঝপথে বিপদ হতে পারে। তারপরও পোনা ব্যবসায়ী পাতিল দুটি নড়াচড়া করছিল। এসময় একজন নৌযাত্রী বলে বসল, ডুবে গেলে কি করবি? পোনা ব্যবসায়ী জবাব দিল খেয়াঘাটের নৌকা ডুবলে মরে যাব। কিন্তু পাতিল নড়াচড়া না করলে আমার পোনাগুলো মরে যাবে। এক্ষেত্রে বলতে হয় প্রার্থীরা মহাবিপদে।

করোনা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা স্বাস্থ্য বিভাগ ও বিজ্ঞজনেরা আগে বলে আসছিল। কিন্তু নির্বাচন কমিশন আমলে সেটা নেয়নি। কারণ দেশে করোনার প্রতিষেধক টিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে। এতে অনেকেই মনে করেছে টিকা দিলেই শেষ আর করোনা হবে না। তবে একটি কথা না বললে হয় না ‘জয় কালে ক্ষয় নাই, মরণ কালে ঔষধ নাই।’

আবার নির্বাচন কমিশন করোনা উপেক্ষা করে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে নির্বাচন সম্পন্ন করে দেখিয়েছে। সারাদেশে যা হওয়ার তা-ই হয়েছে, বেশিকিছু হয়নি। তবে ভোট কেন্দ্রে উপস্থিতি চোখে দেখার মত ছিল না। তারপরও বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন স্থগিত করার যথেষ্ট যৌক্তিকতা রয়েছে। কারণ সাবধানের মাইর নাই।

কাল্পনিক এক দেশের রাজা শখ করে সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া দিন ঠিক করলেন। রাজ দরবারের প্রধান আবহাওয়াবিদকে ডেকে জানতে চাইলেন, আগামীকাল আবহাওয়া কেমন থাকবে? তিনি বললেন রাজা মহাশয় আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে। কোন ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কা নেই। রাজা এমন আবহাওয়া বার্তা পেয়ে পরদিন উজির-নাজির নিয়ে মাছ ধরতে সমুদ্রের দিকে রওনা দিলেন। পথিমধ্যে একপাল ছাগল নিয়ে এক রাখাল দেখ্ভাল করছিল। সে রাজাকে দেখে কুর্নিশ করে বললেন, মহাশয় আপনারা যাচ্ছেন কোথায়? রাজা অকপটে জবাব দিলেন আমরা সমুদ্রে মাছ ধরতে যাচ্ছি। তখন রাখাল বলে বসলেন, আজ যাওয়া ভাল হবে না। কারণ ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কা আছে। রাজা রাখালকে ধমক দিয়ে বলল, আমার আবহাওয়াবিদ বলেছেন আজ সারাদিন আকাশ শুষ্ক থাকবে কোন ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কা নেই বলে রাজা দলবল নিয়ে সমুদ্রের দিকে রওনা দিলেন। সমুদ্রে যাওয়ার পর প্রচন্ড বৃষ্টি ও ঝড় শুরু হলো। তারা কাক ভেজা ভিজে তীরে চলে আসলেন। সাথে নিয়ে গেলেন ওই রাখাল বালককে। পরে রাখাল বালককে আবহাওয়া বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিয়ে আগের আবহাওয়াবিদকে তাড়িয়ে দিলেন রাজদরবার থেকে। কিছুদিন পর রাজা সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত আবহাওয়াবিদের কাছে জানতে চাইল, আজকের দিনটা কেমন যাবে? তখন সে কাকুতি-মিনতি করে বলল হুজুর আমি এসব জানি না। তখন রাজা বলল, ওই দিন কিভাবে বলেছিলে আজ বৃষ্টি হবে? এবং ঠিকই বৃষ্টি হয়েছিল। এখন বলতে পারছ না কেন? তখন সে অনভিজ্ঞ রাখাল বালক বললেন, হুজুর যে দিন আমার ছাগলের পাল ঘন ঘন প্রস্রাব করে, তখন আমি ধরে নিই সেদিন দেশে বৃষ্টি হবে। আমি সেভাবেই অনুমান করে বলেছি। নির্বাচিত স্থগিত করা প্রসঙ্গে মন্তব্য করা নি®প্রয়োজন।

 

পাঠকের মতামত: