কক্সবাজার প্রতিনিধি ::
গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়া নিষেধ আছে : উপ-পরিচালক
গত দুইমাস ধরে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ে ঝুলছে তালা। সরকারি নাম্বারে কল দিলেও রিসিভ করেননা কেউই। দিনের পর দিন নানা কাজে এসে সেবা না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে সেবা গ্রহীতা ও ভোক্তাদের। অভিযানে পড়েছে ভাটা। ফলে ডিলারসহ কথিত ব্যবসায়ীরা হয়ে উঠেছে আরও বেপরোয়া। এলপিজি, ফিলিং স্টেশন, চিকিৎসা, পণ্য, ওষুধ ও সেবা খাতের সব জায়গায় চলছে নৈরাজ্য। হোটেল রেস্তোরাঁগুলোতে আরও খারাপ অবস্থা। প্রতিদিন অহরহ অভিযোগ উঠলেও লাগাম টানতে নেই কেউই।
অথচ দেশের পর্যটন শিল্পের অন্যতম ভুমিকা পালন করে যাচ্ছে কক্সবাজার। যেখানে দেশি-বিদেশি পর্যটক ভরপুর থাকে এই শহরটি। যেখানে দেশের রাজস্ব খাতে প্রতিবছর যোগ হয় হাজার কোটি টাকা। নামীদামী হোটেলের পাশাপাশি নামকরা রেস্তোরাঁও আছে বেশ কয়েকটি। এছাড়া ছোট-বড় আরও শতাধিকের উপরে খাবারের দোকান আছে। খাবার-দাবার নিয়ে অভিযোগ থাকে প্রায়শই। যেখানে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে ভোক্তারা।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে, ভোক্তা অধিকার চট্টগ্রামের উপ পরিচালক মোঃ ফয়েজ উল্লাহ বলেন, এখনো পর্যন্ত কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। আমাদের অফিসের একজন অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। গত দুই মাসে অভিযান তেমন একটা চোখে পড়েনি এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অভিযোগ কি আপনাকে বলে করতে হবে? আপনাকে কেন অভিযোগ করবে। ভোক্তারা করবে ওয়েবসাইটে। কথা বলার মাঝখানে তিনি এই প্রতিবেদকের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। বলেন, কি জানতে চান, আপনি অভিযোগ আমলে নেওয়ার কে, কেন আপনাকে অভিযোগ করবে। আমিতো সংবাদকর্মী হিসেবে আপনাকে কল করতে পারি এখানে ভুলটা কোথায়? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, গণমাধ্যম কর্মীকে বক্তব্য দেওয়া নিষেধ আছে। ঠিক আছে বলে লাইন কেটে দেন।
সিনিয়র সাংবাদিক তোফায়েল আহমেদ বলেন, একজন গণমাধ্যম কর্মী নিউজের স্বার্থে যে কাউকে কল করতে পারে এতে দোষের কিছু নেই। তিনি বলেন, প্রতিদিন নিত্যনতুন মানুষ আসছে কক্সবাজারে। তাদের খাবারের মান নিয়ন্ত্রণ, যাচাই-বাছাই করা ভোক্তা অধিকার আইনের একটি অংশ। আর গুরুত্বপূর্ণ এই শহরটিতে ভোক্তাদের অভিযোগ শুনার কেউ নেই, এটা খুবই দুঃখজনক।
এদিকে অসংখ্য অভিযোগ জমা পড়েছে ভোক্তা অধিকার জেলা অফিসে। কিন্তু সেইভাবে অভিযান পরিচালনা হচ্ছে না বলে জানান ভোক্তা অধিকার জেলার অতিরিক্ত দায়িত্ব পাওয়া চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মোঃ দিদার হোসেন। তিনি বলেন, অক্টোবরের ৬ তারিখ আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ২৫ অক্টোবর লাবনী পয়েন্ট কাসুন্দি রেষ্টুরেন্টে অভিযান পরিচালনা করি। তাদের ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আমাদের ডি ডি স্যারের অনুমতি নিয়ে অভিযানে যেতে হয়।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আবু সুফিয়ান বলেন, এখানো নতুন করে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। চট্টগ্রাম থেকে যাকে দেওয়া হয়েছে তিনি অভিযান পরিচালনা করছেন।
জানা যায়, ওজনে জ্বালানি তেল কম দেওয়ার অভিযোগ এনে এক লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয় নাহার ফিলিং স্টেশনের কাছ থেকে। পরে ওই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজারের হাতে ২০ হাজার টাকার জরিমানার রশিদ ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ওই সময় অভিযোগ উঠেছে, অভিযানকারী ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তা এবং তার নিজস্ব দালাল ভাগ করে নিয়েছেন বাকি এক লাখ টাকা। এ নিয়ে জানাজানি হওয়ার পর বিষয়টি জেলা প্রশাসনের নজরেই আসে। তখন জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে (৮ সেপ্টেম্বর) এক লাখ টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক মো. ইমরান হোসাইন।
এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরসহ বিভিন্নমহলে বিরূপ মন্তব্য শুরু হয়। এই ঘটনার পর তাকে শাস্তি হিসেবে বদলিও করা হয়। কিন্তু গত দুই মাস পার হয়ে গেলেও কাউকে ওই পদে বসানো হয়নি। ফলে ভোক্তা পর্যায়ের হয়রানি ক্রমশই বাড়ছে।
অভিযোগ উঠেছে, মুদির দোকান, রেস্তোরাঁ, ইট ভাটা, ফিলিং স্টেশনসহ সব জায়গায় নিজেদের ইচ্ছামত দাম নিচ্ছে। যেখানে মানা হচ্ছেনা কোন নিয়মনীতি।
সরকার ২০০৯ সালে ভোক্তা অধিকার আইন পাস করে। যেখানে খাদ্য, চিকিৎসা, পণ্য, ওষুধ ও সেবা খাতের ভোক্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
পাঠকের মতামত: