চকরিয়া প্রতিনিধি ::
প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো কক্সবাজারের চকরিয়ার খোদারকুম দিঘি ভরাট হয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করেই জলাশয়টি ভরাট করা হচ্ছে। এ নিয়ে আপত্তি পরিবেশ অধিদপ্তর ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষের। তবে এরপরও থামেনি দিঘি ভরাটের প্রক্রিয়া।
উপজেলা ভূমি অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় ৫৪ শতক আয়তনের খোদারকুম দিঘিতে অর্ধশত লোকের জমি আছে। কাগজপত্রে এসব জমি খাই (গর্ত) ও নাল (সমতল) জমি হিসেবে দেখানো হয়েছে। এ কারণে দিঘির জমি বিক্রি ও ভরাট ঠেকানো যাচ্ছে না। অথচ উপজেলার প্রবীণ ব্যক্তিরা বলছেন, ২০০ বছর আগে মাতামুহুরী নদীর গতিপথ পরিবর্তনের কারণে দিঘিটি সৃষ্টি হয়েছে। প্রাকৃতিক এই জলাশয় উপজেলার অন্যতম ঐতিহ্যের অংশ।
স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তি হারাধন দাশ (৭০) একসময় ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি বলেন, প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়েছে বলেই এই কুমের (জলাধার) নাম হয়েছে খোদারকুম। ২০০ বছর ধরে এ কুমের পানি ব্যবহার করে আসছে স্থানীয় বাসিন্দারা। সম্প্রতি পৌর এলাকায় জায়গার দাম বেড়ে যাওয়ায় কিছু মানুষ জলাশয় ভরাট করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে খোদারকুমের দক্ষিণ পাশের কিছু অংশ ভরাট করে দোকান নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, খোদারকুম দিঘির উত্তর পাশে কয়েকটি পাকা বসতবাড়ি, পশ্চিম অংশে কিছু ধানখেত ও কয়েকটি বসতবাড়ি রয়েছে। আর পূর্ব পাশে চকরিয়া-বদরখালী সড়ক। দিঘির দক্ষিণ অংশে চলছে ভরাটের কাজ। সেখানে কিছু শ্রমিক বালু ফেলছিলেন। ভরাট করা অংশে টিন ও কাঠ দিয়ে দোকান নির্মাণও শুরু হয়েছে। ভরাটকাজে নিয়োজিত একজন শ্রমিকের (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু দিঘিতে বালু ফেলার কাজ করছি। মো. আলমগীর নামের এক ব্যক্তি আমাদের দিঘি ভরাট করার কাজে নিযুক্ত করেছেন।’ শ্রমিকেরা জানান, মো. আলমগীরসহ এলাকার বেশ কয়েকজন ব্যক্তি দিঘি ভরাটের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।
জানতে চাইলে মো. আলমগীর বলেন, তিনি একজনের কাছ থেকে দিঘিসংলগ্ন ১০ শতক জায়গা কিনেছেন। জায়গাটি দিঘির বাইরে পড়েছে। তবে নিচু জমি হওয়ায় বর্ষাকালে বৃষ্টি হলেই ওই জায়গায় দিঘির পানি চলে আসে। তখন দিঘিটি বড় দেখায়। এখন শুষ্ক মৌসুম দিঘির পানি ওখানে নেই। তাই জায়গাটি তিনি ভরাট করে উঁচু করছেন।
ঐতিহ্যবাহী এই দিঘি ভরাটে অনুমোদন নেই পৌর কর্তৃপক্ষেরও। চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী বলেন, খোদারকুম দিঘি চকরিয়া পৌরসভা এলাকার ঐতিহ্য। সম্প্রতি দিঘিটি ভরাট করা হচ্ছে বলে স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেছেন। দিঘি ভরাটের জন্য কেউ পৌরসভা থেকে অনুমতি নেননি। দিঘি ভরাটের কারণে পরিবেশ যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি সৌন্দর্যহানি ঘটছে বলে জানান মেয়র।
দিঘি ভরাটকে বেআইনি আখ্যা দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তরও। পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক সাইফুল আশ্রাব বলেন, কোনো দিঘি যদি ব্যক্তিগতও হয়ে থাকে, সেটিও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া ভরাট করা যাবে না। যদি কেউ ভরাট করে, তাহলে সেটি পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হবে। বিষয়টি আমি খোঁজ নিচ্ছি, দিঘি ভরাটের প্রমাণ পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নাল শ্রেণির ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি হওয়ায় দিঘি ভরাটের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, ‘দিঘি ভরাটের অভিযোগ পেয়ে সেখানে ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছিল। তিনি বালুবাহী একটি গাড়ি জব্দও করেছিলেন। তবে দিঘির যে অংশটি ভরাট করা হচ্ছে, সেটি ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা। সেটির শ্রেণিও নাল। এ কারণে আসলে আমাদের করার কিছু থাকে না। তারপরও বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখা হবে।’
পাঠকের মতামত: