মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি ঃ
পুরাতন বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করতে বাংলা চৈত্র সংক্রান্তিতে নতুন সাজে সেজেছে বান্দরবান। পাড়া মহল্লায় পড়েছে সাজ সাজ রব। পাহাড়ে চলছে নানা আনন্দ আয়োজন। উৎসবে মেতে উঠেছে পাহাড়ের সকল সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠী।
“নতুন আশা আজ নব-প্রভাতে; শিশু-নারীসহ সকলে থাকুক শান্তিতে বন্ধ হোক যত সহিংসতা; মৈত্রীময় স্নিগ্ধ ছোঁয়ায় আসুক শুভ্রতা” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বান্দরবানের পাহাড়ীদের প্রধান সামাজিক উৎসব সাংগ্রাই আগামী ১২ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে চলবে ৫দিন ব্যাপী।
চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিনকে বলা হয় ফুল বিজু। উৎসবের প্রথম দিনে চাকমা, ত্রিপুরা ও মারমারা বন থেকে ফুল আর নিমপাতা সংগ্রহ করে সেই ফুল দিয়ে ঘর সাজায় ও মা গঙ্গার উদ্দেশ্যে নদীতে ফুল ভাসায়। আর চৈত্র সংক্রান্তির দিনকে বলা হয় মুল বিজু। ঘরে ঘরে রান্না হয় ঐতিহ্যবাহী খাবার পাচন। তা দিয়ে দিন ভর চলে অতিথি আপ্যায়ন। উৎসবের তৃতীয় দিনে মারমা সম্প্রদায় উদযাপন করে ঐতিহ্যবাহী পানি খেলা উৎসব। এর মধ্যে দিয়ে শেষ হবে এই বৈসাবী উৎসব। আদিবাসীদের বৈসাবি আর বাঙ্গালীদের বাংলা বর্ষবরণ নিয়েই পার্বত্য এলাকা এখন উৎসব মুখর।
চাকমা সম্প্রদায় বিঝু, তচংঙ্গ্যা সম্প্রদায় বিষু এবং ত্রিপুরা সম্প্রদায় বৈসু, এই চার সম্প্রদায়ের এই উৎসবকে সমষ্টিগত ভাবে বৈসাবি বলা হয়। বান্দরবানে মারমাদের বৈসাবি এর মূল আকর্ষণ জলকেলি উৎসব।
পুরাতন বছরের সব গ্লানী, দুঃখ, বেদনা ধুয়ে মুছে নতুন বছর যাতে সুন্দর এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় হয় সে জন্যই এই প্রয়াস। এই উৎসব শুধু পাহাড়ীরা নয় বাঙ্গালীরাও নানা ভাবে পালন করে থাকে। সাংগ্রাই উৎসবটিকে দেখার জন্য বান্দরবান পার্বত্য জেলায় বহু দেশী বিদেশী পর্যটকের আগমন ঘটে। সাংগ্রাই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী পানি খেলা।
এছাড়া রয়েছে সমবেত প্রার্থনা, ২দিনব্যাপী জলকেলি (পানি খেলা), পিঠা তৈরি, ঘিলা খেলা, বৌদ্ধ মূর্তি স্নান, হাজারো প্রদীপ প্রজ্জলন, বয়স্ক পূজা এবং পাহাড়ী নিজস্ব ঐতিহ্যবাসী নৃত্য-গান নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মারমাদের প্রাচীন ও বিলুপ্ত প্রায় বিভিন্ন খেলাধুলা এই উৎসবকে আরো আকর্ষনীয় করে তুলে। সাংগ্রাই উৎসবকে ঘিরে বান্দরবানের সাত উপজেলার পাহাড়ী পল্লী গুলোতে সাজ সাজ রব।
বান্দরবান রাজার মাঠ সংলগ্ন রি স্বং স্বং রেঁস্তেরায় এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সাংগ্রাই উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি মংসিংনু মারমা জানিয়েছে সাংগ্রাই উৎসবকে আরো প্রাণবন্ত করে তুলতে পাঁচ দিনব্যাপী নেয়া হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি। তার মধ্যে ১২ এপ্রিল সকালে রাজার মাঠ থেকে বর্ণাঢ্য র্যালী ও গুরুভক্তির মাধ্যমে শুরু হবে সাংগ্রাই উৎসব। ১৩ এপ্রিল দুপুরে সাগু নদীর পাড়ে বুদ্ধ মূর্তি স্নান। ১৫ এপ্রিল বিকালে রাজার মাঠে মৈত্রী পানি বর্ষন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ১৬ এপ্রিল রাজার মাঠে মৈত্রী পানি বর্ষন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ১২ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে ১৬ এপ্রিল সকালে প্রার্থনার মাধ্যমে শেষ হবে সাংগ্রাই উৎসব।
আগামী ১২ এপ্রিল র্যালী ও ১৫ এপ্রিল বিকালে রাজার মাঠে মৈত্রী পানি বর্ষন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন পাবত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রর্ণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি।
পাঠকের মতামত: