কক্সবাজার প্রতিনিধি ::::
সরকারের বিধি নিষেধ প্রজ্ঞাপন কোন কিছুতেই নিয়ন্ত্রনে আনা যাচ্ছে না কোচিং বাণিজ্য। বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে। বেশির ভাগই আগের চেয়ে কোচিং ফি ও বাড়িয়ে দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবী স্কুলে লেখাপড়ার মান উন্নত না হওয়ায় বাধ্য হয়ে প্রাইভেট পড়তে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকদের রোষানল থেকেও বাচঁতে বাধ্য হয়ে প্রাইভেট পড়তে হয়। এক সাথে ৪০ জনের বেশি, দৈনিক ৩০০ জনের অধিকও অনেক শিক্ষক প্রাইভেট পড়ান। অনেক সময় দেখা গেছে মূল শিক্ষক থাকে না ক্লাস নেন কলেজ ছাত্ররা। এদিকে অভিবাবকদের দাবী কোচিং বানিজ্য একটি চক্র যা থেকে ছেলে মেয়েদেরকে বের হতে দিচ্ছে না শিক্ষকরা। ছেলে মেয়েদের কোচিং ফি দিতেই আমাদের আয়ের বেশির টাকা চলে যায়। তাদের দাবী ঢাকাতে দূর্নীতি দমন কমিশন কোচিং বানিজ্য বন্ধ করতে কাজ করছে আমরা চাই কক্সবাজারেও দুদক তার প্রতিফলন ঘটাক।
কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি নাছির উদ্দিন বলেন আমার এক মেয়ে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে আরেক ছেলে কে.জি এন্ড মডেল হাই স্কুলে পড়ে তাদের কোচিং বা প্রাইভেট ফি দিতে হয় প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকার মত। এছাড়া মেয়ের জন্য দৈনিক রিক্সা ভাড়া বা দুজনের জন্য পকেট খরচতো আছেই। বিশ্বাস করেন আমার পরিবারে ভাল বাজারও করতে পানি না, ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ দিতে গিয়ে। এখন নাকি প্রাইভেট ফি ৬০০ টাকা। মেয়ে আগে ২ জনের কাছে প্রাইভেট পড়তো এখন ক্লাসে নাকি তাকে আরেক শিক্ষক তার কাছে প্রাইভেট না পড়ার কারনে সমস্যা করে তাই এখন বাধ্য হয়ে উনার কাছেও পড়ে।
এভাবে শহরের তারাবনিয়ারছড়া ব্যবসায়ি বেলাল আহাম্মদ, রুমালিয়ারছড়া এলাকার ওবায়দুল হক, পাহাড়তলী এলাকার আলমগীর হোসেন বলেন ছেলে মেয়েদের কোচিং পড়াতে তারা বাধ্য। ভাত না খেলেও প্রাইভেট পড়াতে হয়। সরকার স্কুলে এত শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে এখন প্রতি শিক্ষকের বেতন ৫০ হাজার টাকার বেশি তবুও কেন উনাদের এত টাকা প্রয়োজন বুঝিনা। বেলাল আহাম্মদ বলেন আমার মেয়ে যে শিক্ষকের কাছে পড়ে আমি একবার গিয়ে দেখেছি একরুমে ৫০ জনের মত ছাত্রছাত্রী আছে এবং পড়াচ্ছে একজন কলেজ ছাত্র আমি অবাক হয়ে বাড়িতে গিয়ে মেয়ের কাছে জানতে পারলাম আসল শিক্ষক সপ্তাহে ১ বার আসে বাকি দিন উনার পুরাতন ছাত্ররা পড়ায়।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শাহজাহান কুতুবী ৩০০ এর উর্ধে ছাত্রছাত্রীকে প্রাইভেট পড়ান এবং কোচিং ফি ৬০০ টাকা। একই সাথে মোহাম্মদ আমিন (ইংরেজী) ৪০-৫০ জন ছাত্রছাত্রী প্রাইভেট পড়ান ফি নেন জনপ্রতি ৫০০ টাকা, আব্বাস আহামদ ( ইংরেজী) ৫০ জনের বেশি দৈনিক প্রাইভেট পড়ান এবং জনপ্রতি ৫০০ টাকা ফি নেন, মিন্টু শর্মা ( ভৌত বিজ্ঞান) ঘোনারপাড়ায় নিজস্ব প্রাইভেট সেন্টারে দৈনিক ৭০ জনের বেশি প্রাইভেট পড়ান এবং জনপ্রতি ৫০০ টাকা ফি নেন, আরিফুল ইসলাম ( ভৌত বিজ্ঞান) তিনি জনপ্রতি ৫০০ টাকা ফি নেন। এছাড়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোঃ রাসেদুল হোসাইন, আনসারুল করিম, মোঃ ইকবাল যৌথ ভাবে কোচিং সেন্টার করে প্রাইভেট পড়ান এবং সর্বোচ্চ ফি নেন ১২০০ টাকা। আর জাকারিয়া মোঃ ইয়াহিয়া ৩০০ জনের বেশি প্রাইভেট পড়ান জনপ্রতি ৬০০ টাকা করে ফি নেন, সুমন দত্ত ২০০ জনের বেশি প্রাইভেট পড়ান ৫০০ টাকা করে ফি নেন, মোঃ ফয়জুল্লাহ, সুমন তালুকদান ( গনিত), মৌত্রি চক্রবর্তি সপ্তাহে ২ দিন কোচিং করান এবং ৫০০ টাকা করে ফি নেন, মসুরুজ্জামান ( গনিত) ২০০ বেশি প্রাইভেট পড়ান ৬০০ টাকা ফি নেন, মোঃ রফিুকল ইসলাম খাঁন মোঃ ইব্রাহিম সহ আরো কয়েক জন প্রাইভেট বানিজ্যে জড়িত।
এদিকে কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে আবু তৈয়ব ( হিসাব বিজ্ঞান) নিজে ২টি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করেন দৈনিক ৫০০র বেশি ছাত্রছাত্রীকে প্রাইভেট পড়ান এবং জনপ্রতি ১০০০ টাকা ফি নেন। এবং উনার প্রাইভেট সেন্টারে বেশির ভাগ সময় কলেজ ছাত্ররা প্রাইভেট পড়ান। এছাড়া মানিক চন্দ্র দে, বিকে পাল সড়কে ৩০০র উর্ধে প্রাইভেট পড়ান এবং ফি নেন ৬০০ টাকা, মোঃ রিয়াজউদ্দিন ( ইংরেজী) বিকেপাল সড়কে ২০০ র উর্ধে ছাত্রছাত্রী পাইভেট পড়ান এবং জনপ্রতি ফি নেন ৬০০ টাকা, নারায়ন চন্দ্র দে ৪০০ জনের উর্ধে প্রাইভেট পড়ান এবং জনপ্রতি ফি নেন ৬০০ টাকা, মোঃ নুরুল আজিম (রসায়ন) ২০০ জনের উর্ধে প্রাইভেট পড়ান জনপ্রতি ৬০০ টাকা ফি নেন, মোঃ জোবায়ের (ভৌত বিজ্ঞান) ১০০ জনের উর্ধে প্রাইভেট পড়ান ৫০০ টাকা করে ফি নেন, এছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সবচেয়ে বেশি প্রাইভেট পড়ান সাহিতিক্য মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জালাল উদ্দিন তিনি ভোলা বাবুর পেট্রুল পাম্পের পাশে বিশাল কোচিং সেন্টার করে প্রাইভেট পড়ান ৫০০ জনের বেশি শিক্ষার্থীকে এবং ফি নেন জন প্রতি ১২০০ টাকা। একই সাথে বিবেকানন্দ স্কুলের সবচেয়ে বেশি প্রাইভেট পড়ান মোহাম্মদ ফারুক নামের শিক্ষক তিনি নিজস্ব কোচিং সেন্টার করে অন্তত ৩০০ শিক্ষার্থী পড়ান এবং ১০০০ টাকা করে ফি নেন, একই স্কুলের হর কুমার কাজল এবং সেলিনা আক্তারও মহাসমারোহে প্রাইভেট বানিজ্য চালু রেখেছেন।
এছাড়া শহরের বায়তুশ শরফ উচ্চ বিদ্যালয়ে অন্তত ৪০ জনের বেশি শিক্ষক কোচিং বানিজ্য জমিয়ে রেখেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শওকত আলম (ইংরেজী), রেজাউল করিম (ইংরেজী) আলাউদ্দিন ্(ইংরেজী) গিয়াস উদ্দিন (বানিজ্য বিভাগ), জাহেদ (বানিজ্য বিভাগ)আনজুমন আরা( গনিত) ছৈয়দ নুর (বানিজ্য) অন্যতম। এছাড়া কক্সবাজার কে.জি এন্ড মডেল হাই স্কুলে ছৈয়দুল আলম, নুর উদ্দিন, আবদুর রহমান, রফিকুল ইসলাম অন্যতম। সৈকত বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সাইফুদ্দীন, পার্থ প্রতীম অন্যতম।
এ ব্যাপারে কক্সবাজারের বিশিষ্ট্য শিক্ষাবিদ প্রফেসর জাফর আহমদ বলেন প্রাইভেট এখন সংস্কৃতিতে পরিনত হয়েছে এটা দুঃখ জনক, আমি মনে করি স্কুলে লেখাপড়ার মান উন্নত নয় বলেই শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট নির্ভর হয়ে পড়ছে। আবার অভিভাবকদের মাঝে একটি অসম প্রতিযোগিতা কাজ করে যার ফলে উনারা ওএই প্রাইভেট ব্যবসা কে উৎসাহিত করছেন। সরকার অনেক চেস্টা করছে তবে কার্যকর কোন পদক্ষেপ আমরা দেখছি না। শিক্ষার্থীদের ক্লাস রুম মুখি করা উচিত।
এব্যাপারে কক্সবাজার জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ছালেহ আহাম্মদ বলেন বর্তমান সরকার কোচিং বানিজ্য বন্ধ করতে বেশ কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। এর সুফল সাধারণ মানুষের হাতে অবশ্যই কোন না কোন সময় পৌছাবে। আমি মনে করি যারা প্রাইভেট পড়ায় তারা স্কুলে আসে বিশ্রামের জন্য উনারা ক্লাস রুমে পড়া আদায় করেন না বরং অনেক সময় অভিযোগ আসে ক্লাস রুমেই প্রাইভেটে আসার জন্য প্রস্তাব দেন। আমি আশা করি খুব দ্রুত এ বিষয়ে একটি পদক্ষেপ শিক্ষা অধিদপ্তর নেবে।
এদিকে দূর্নীতি দমন কমিশন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক মোঃ আবু সাঈদ বলেন কোচিং নিয়ে এখনো উর্ধতন কতৃপক্ষের কোন নির্দেশনা আসে নি। ঢাকাতে অভিযান শুরু হয়েছে, আমাদের কাছে নির্দেশনা আসলে অভিযান শুরু হবে।
এব্যাপারে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন বলেন শিক্ষকরা সম্মানিত মানুষ উনারা যদি নিজের দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে না বুঝেন তাহলে কেউ উনাদের বুঝাতে পারবে না। শিক্ষকদের বুঝা উচিত বর্তমান সময়ে যে বেতন ভাতা ভোগ করছেন তা পৃথীবির অনেক দেশের শিক্ষকরা পান না। আর আমাদের দেশের অনেক মানুষ ৩ মাসে যা আয় করে তা উনারাএক মাসে বেতন পায়। তবুও যদি শুধু মাত্র টাকার জন্য প্রাইভেট বা কোচিং করতে হয় তাহলে দুঃখ জনক। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রকাশ:
২০১৭-০৭-২০ ০৯:১৮:২৩
আপডেট:২০১৭-০৭-২০ ০৯:১৮:২৩
- খুটাখালীতে সকড় সংস্কারের পূর্বেই ইটগুলো গায়েব নীরব
- তথ্য প্রকাশের মাধ্যমে গুজব প্রতিরোধ সম্ভব” –ইউএনও চকরিয়া
- চকরিয়ায় সেনা কর্মকর্তা হত্যা: মূল হোতা নাছির উদ্দিন ও সহযোগী ডাকাত এনাম গ্রেফতার
- এডভোকেট মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান এর ২৪তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ ক্রোড়পত্র
- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের সাথে চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ শিক্ষকদের মতবিনিময়
- নিপীড়িত গরীব দুঃখী মেহনতি মানুষের মুক্তির জন্য জামায়াত কর্মীদের বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে -আবদুল্লাহ আল ফারুক
- ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত ওয়াসিমের পরিবারের সাথে সাক্ষাতে সালাউদ্দিন আহমদ
- চকরিয়ায় সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট তানজিম সরোয়ার খুনের ঘটনায় দুইটি মামলা
- চকরিয়ায় বন্যহাতির আক্রমণে স্বামী-স্ত্রীসহ আহত ৩
- ডুলাহাজারার সংরক্ষিত বনে ডাকাতের আস্তানা, সন্ধ্যার পর শুরু হয় লুটতরাজ
- চকরিয়ায় অবৈধ বালু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে মানববন্ধন
- ডুলহাজারায় সেনা কর্মকর্তা তানজিম হত্যার বিচার চেয়ে বিক্ষোভ
- চকরিয়ায় ডাকাতের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হলেন তরুণ সেনা কর্মকর্তা তানজিন
- চকরিয়ার যুবলীগ নেতা কছিরের রয়েছে সম্পদের পাহাড়
- লেফটেন্যান্ট তানজিম হত্যার ৬ সন্ত্রাসীকে আটক করেন সেনাবাহিনী
- ফাইতং ইউপি চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবীতে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ ও মানববন্ধন
- চকরিয়ায় আ,লীগের প্রভাবে দখল হওয়া বাজার ফিরে পেতে চায় ব্যবসায়ীরা
- সেনা কর্মকর্তা তানজিম হত্যা ও ডাকাতি,খুন,গুমের প্রতিবাদে খুটাখালী বহলতলীবাসী
- চকরিয়ায় ৪৬টি পূজা মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপনের প্রস্তুতি
- ডুলাহাজারার সংরক্ষিত বনে ডাকাতের আস্তানা, সন্ধ্যার পর শুরু হয় লুটতরাজ
- ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত ওয়াসিমের পরিবারের সাথে সাক্ষাতে সালাউদ্দিন আহমদ
- চকরিয়ায় ডাকাতের গুলিতে লেফটেন্যান্ট তানজিম খুন, মায়ের আহাজারী, শোকের মাতম, জানাযা সম্পন্ন
পাঠকের মতামত: