ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

বিলীন হচ্ছে কুতুবদিয়া

কুতুবদিয়া প্রতিনিধি ::

কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার আয়তন ষাটের দশকে ছিল ১২০ বর্গকিলোমিটার। তখন পুরো দ্বীপটা চরধুরুং, উত্তর ধুরুং, দক্ষিণ ধুরুং, লেমশীখালী, কৈয়ারবিল, বড়ঘোপ, আলী আকবর ডেইল, রাজাখালী, খুদিয়ারটেক নামে নয়টি মৌজায় বিভক্ত ছিল। এখনকার দ্বীপের মানচিত্রে খুদিয়ারটেক ও রাজাখালী মৌজা নেই। চরধুরুংসহ অন্যান্য মৌজার জমিও সাগরে বিলীন হচ্ছে। এখন দ্বীপের আয়তন ৪০ বর্গকিলোমিটারের মতো। দ্বীপের চতুর্দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ থাকলেও তার মধ্যে প্রায় ১৭ কিলোমিটার ভাঙা। ভাঙা অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে দ্বীপের অন্তত ৪৫টি গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। ভাঙছে নতুন নতুন এলাকা। এতে দ্বীপের আয়তন ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে। কিন্তু দ্বীপটি রক্ষার স্থায়ী বেড়িবাঁধ নিয়ে কারও যেন মাথাব্যথা নেই।
গতকাল সকালে দ্বীপের উত্তর ধুরুং গ্রামের শতবর্ষী বৃদ্ধ ও জমি জরিপকারক মুহাম্মদ আবু মুছা এসব কথা তুলে ধরেন।
এর সত্যতা নিশ্চিত করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জাফর আলম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সাগরের উচ্চতা ও তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কুতুবদিয়া দ্বীপ ঝুঁকির মুখে পড়েছে। পাউবো বেড়িবাঁধের চেয়ে জোয়ারের পানির উচ্চতা বেশি হওয়ায় বাঁধ টপকে লোনাপানি গ্রামে ঢুকে পড়ছে। কয়েক হাজার একর ফসলি জমি লোনাপানিতে ডুবে গেছে। বিলীন হচ্ছে হাজার হাজার মানুষের ঘরবাড়ি। গৃহহীন মানুষ কত যে কষ্টে আছে, তা সরেজমিনে না গেলে বোঝানো কঠিন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জোয়ারের ধাক্কায় বেড়িবাঁধ ভেঙে আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের কাহারপাড়া, তাবলরচর, আনিচের ডেইল, বড়ঘোপ ইউনিয়নের আজম কলোিন, মিয়ার ঘোনা, আমজাখালী, কৈয়ারবিল ইউনিয়নের মতির বাপেরপাড়া, বিন্দাপাড়া, মহাজনপাড়া, মফজল ডিলারপাড়া, পরান সিকদারপাড়া, মলমচর, লেমশীখালী ইউনিয়নের পেয়ারাকাটা, গাইনেকাটা, উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের ফয়জনির বাপেরপাড়া, সতরউদ্দিন, চরধুরুং, আকবর বলীপাড়া, দক্ষিণ ধুরুং ইউনিয়নের বাতিঘরপাড়া, আলী ফকির ডেইলসহ ৪৫ গ্রাম প্লাবিত হয়ে থাকে। এসব গ্রামের গৃহহীন প্রায় দুই হাজার পরিবার বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। অনেকে ঠিকমতো খেতেও পায়না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সম্প্রতি উত্তর ধুরং ইউনিয়নের কাইছারপাড়া, নয়াকাটা, চরধুরং, আকবর বলীপাড়ার বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ পরিদর্শন এবং গৃহহীন মানুষের দুঃখকষ্ট দেখে হতবাক হন পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। এ সময় মন্ত্রী সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিলে স্থানীয় লোকজন স্লোগান দেন, ‘আমরা রিলিফ চাই না, জানমাল রক্ষায় স্থায়ী বেড়িবাঁধ চাই।’
এরপর মন্ত্রী ২৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে দ্বীপের চতুর্দিকে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ টি এম নুরুল বশর চৌধুরী বলেন, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে এই দ্বীপের ৬০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। তখন দ্বীপের চতুর্দিকে বেড়িবাঁধ ছিল, ছিল উপকূল রক্ষার প্যারাবন। আর এখন আরেকটা ঘূর্ণিঝড় হলে দ্বীপের দেড় লাখ মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ, এখন দ্বীপের চতুর্দিকে নড়বড়ে এরং ভাঙা বেড়িবাঁধ।
সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, ১৯৬৯ থেকে ২০১৪ সালের ৩০ জুলাই পর্যন্ত উপজেলার অন্তত ৩০টি গ্রামের প্রায় ৮০ বর্গকিলোমিটার এলাকা সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। ২০ হাজারের অধিক ঘরবাড়ি সাগরে হারিয়ে গেছে।
পাউবো কুতুবদিয়ার উপবিভাগীয় প্রকৌশলী বলেন, মন্ত্রীর পরিদর্শনের পর স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে ডিসেম্বরে ভাঙা বাঁধের নির্মাণ শুরু হবে।

পাঠকের মতামত: