শাহীন মাহমুদ রাসেল, কক্সবাজার ::
অসহনীয় গরমে নির্ঘুম রাত পোহাতে হচ্ছে কক্সবাজার সদর ও রামুবাসীর একাংশকে (পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহকরা)। চলমান এইচ এস সি পরীক্ষাকে ঘিরে দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে মধ্যরাতেও ভেসে আসছে অবুঝ শিশুদের আর্তচিৎকার। পিক আওয়ার না হয় মেনে নেয়া যায়, কিন্তু মধ্যরাতের অফপিক আওয়ারে লোডশেডিং কোনভাবেই মেনে নিতে চান না সদর ও রামুর পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। সীমাহীন দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে চান সবাই।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লাইনের সমস্যার কারণে বর্তমানে বিদ্যুৎ ইউনিট বন্ধ থাকে। প্রক্রিয়াধীন সেইসব লাইন সময়মতো তদারকি করতে না পারায় লোডশেডিং আরো তীব্র হচ্ছে। জানা যায়, রাতে সব ধরনের অফিস আদালত বন্ধ থাকে। দোকানপাট বিপণি বিতানও বন্ধ হয় রাত ৮টার পর। বন্ধ থাকে শিল্প কলকারখানায় উৎপাদনও। আবাসিক ছাড়া অন্য কোন গ্রাহকের রাতে তেমন বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় না। রাত ১১টার পর অধিকাংশ মানুষই ঘুমাতে যাওয়ায় বাসাবাড়ির লাইটও আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সারাদিন বিদ্যুতের যে চাহিদা বা লোড হয় তার প্রায় অর্ধেকই কমে আসে। কিন্তু মধ্যরাতেও লোডশেডিং বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে সদর ও রামুবাসীকে। এসব এলাকার এইচ এস সি পরীক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছে। বিশেষ করে অফপিক আওয়ার ১১টার পর অধিকাংশ রাতেই লোডশেডিং করা হচ্ছে। এমনকি তাপমাত্রা কম থাকলে অর্থাৎ বিদ্যুতের চাহিদা কম হলেও গ্রাহক মধ্যরাতের লোডশেডিং বিড়ম্বনা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। মানুষের দুর্ভোগ হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বিদ্যুতের অভাবে পড়তে পারছে না। মানুষ রাতে ভালো করে ঘুমাতে পারছে না। সন্ধ্যার পর আইনশৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারের সাফল্যকে ম্লান করার জন্য পরিকল্পিতভাবে এই পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে, এমন অভিযোগ আওয়ামী লীগের নেতাদের।
ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান জানান, প্রায় প্রতিরাতেই সাড়ে ১১টার পর বিদ্যুৎ চলে যায়। খুব কম সময়েই এর হেরফের হচ্ছে। তিনি বলেন, গত শনিবার রাত ১২টার পর সকাল ৮টা পর্যন্ত লোডশেডিং হয়েছে। তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা দিচ্ছে নানা অজুহাত। লোডশেডিংয়ের কারণে আমাদের ভাল করে ঘুম হয় না। বিদ্যুৎ না থাকায় মশার অত্যাচারও এসময় অবর্ণনীয়। বিশেষ করে অসহনীয় গরমে শিশুদের নিয়ে সবচেয়ে কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে বাবা-মাদের। প্রায় প্রতিটি বাসাবাড়িতেই লোডশেডিংয়ের পর শিশুদের আর্তচিৎকারের শুরু হয়। তার এলাকায় প্রায় প্রতি সন্ধ্যার পরই দুই থেকে তিন বার লোডশেডিং করা হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন।
খরুলিয়া এলাকার বাসিন্দা বেলাল উদ্দিন জানান, ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয়ার প্রাক্কালেই রাত ১২টার পর বিদ্যুৎ চলে যায়। এটা এক ধরনের নিয়ম হয়ে গেছে। তিনি বলেন, গভীর রাতে লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে অসহনীয় দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। তিনি আরোও বলেন, এর আগেও তো গ্রীষ্ম ছিল, সেচও ছিল কিন্তু তখন তো এমন মধ্যরাতে লোডশেডিং করা হয়নি।
জানা যায়, বিদ্যুতের চাহিদা ও উৎপাদনে বিন্দুমাত্র ফারাক নেই। বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো পিডিবির কাছে যে চাহিদা দেয় তা থেকে অনেক গুণ বেশী পায় বলে জানা যায়, বিতরণ কোম্পানিগুলোর (পল্লী বিদ্যুৎ) চাহিদার কোন ঘাটতি নেই।
সরেজমিনে গিয়ে জিএমকে পাওয়া যায়নি, এব্যাপারে কথা হয় কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুতের এজিএম নাহিদ ভূঁইয়া বলেন, কক্সবাজার জেলায় দৈনিক ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন (গ্রীষ্মে এদিক-ওদিক হতে পারে)। প্রয়োজনের বিপরিতে কোন ঘাটতি নেই। প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে গ্রাহককে সন্তুষ্ট করা যাচ্ছে না।
পাঠকের মতামত: