কক্সবাজার প্রতিনিধি :: অবশেষে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে কক্সবাজারের দুর্গম দ্বীপ কুতুবদিয়া। গত বুধবার রাত ৯টা থেকে পরীক্ষামূলকভাবে উপজেলা সদরের ১২০০ গ্রাহকের কাছে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়।
স্বাধীনতার ৫২ বছর পর জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ায় অন্ধকার থেকে মুক্তি পেয়ে উচ্ছ্বসিত দ্বীপবাসী। তবে প্রকল্পের কাজ এখনও প্রায় ১০ ভাগ বাকি রয়েছে বলে জানান, শতভাগ নির্ভরযোগ্য এবং টেকসই বিদ্যুতায়ন প্রকল্প পরিচালক ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. ফারুক আহমেদ। তিনি বলেন, কুতুবদিয়া উপজেলা সদরে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ কাজ শেষ হওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে।
উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আওরঙ্গজেব মাতবর জানান, সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে কুতুবদিয়ার প্রায় ১২০০ গ্রাহক এখন জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ পাচ্ছেন। যারা আগে সান্ধ্যকালীন জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পেতেন। তিনি বলেন, প্রথমদিন বুধবার রাত ৯টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত টানা বিদ্যুৎ পেয়েছে কুতুবদিয়ার মানুষ। এরপর বৃহস্পতিবার (গতকাল) বিকাল ৩টা থেকে এখনও (রাত ৯টা) পর্যন্ত টানা বিদ্যুৎ সরবরাহ রয়েছে। পিডিবি সূত্র জানায়, ২০২০ সালে ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘কুতুবদিয়া দ্বীপ, হাতিয়া দ্বীপ ও নিঝুম দ্বীপ শতভাগ নির্ভরযোগ্য এবং টেকসই বিদ্যুতায়ন’ প্রকল্পের আওতায় কুতুবদিয়া দ্বীপকে মহেশখালীর মাতারবাড়ি হয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়। প্রকল্পটির আওতায় তিনটি দ্বীপে মোট ৭২০ কিলোমিটার সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন স্থাপন করা হচ্ছে। প্রকল্পটির মেয়াদ রয়েছে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা পরিদর্শন করতে কুতুবদিয়ায় যান কুতুবদিয়া–মহেশখালী আসনের এমপি আশেক উল্লাহ রফিক। এ সময় এক সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে এমপি ছাড়াও কুতুবদিয়া বিউবির আবাসিক প্রকৌশলী আবুল হাসনাত, সহকারী কমিশনার (ভূমি) জর্জ মিত্র চাকমা, কুতুবদিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আওরঙ্গজেব মাতবর, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ তাহের বক্তব্য রাখেন।
এমপি আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়ে কুতুবদিয়ার শতভাগ মানুষ সার্বক্ষণিক বৈদ্যুতিক আলোয় আলোকিত থাকবে। এখানকার বাসিন্দারা ডিজিটাল সুবিধা পাবেন, তাদের অন্যান্য নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। এতে তাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ঘটবে। এটি ছিল প্রধানমন্ত্রীর ‘ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ দেওয়ার সেই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন।
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. ফারুক আহমেদ বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় কুতুবদিয়ায় ৩০ হাজার গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আর এসব সংযোগের মাধ্যমে দ্বীপের পুরো জনগোষ্ঠীকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা যাবে। এর আগে ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে কুতুবদিয়ার মানুষ বিদ্যুৎ পাবেন বলে জানিয়েছিলেন তিনি। এ প্রসঙ্গে বলেন, কুতুবদিয়ায় অভ্যন্তরীন লাইন সংযোগ নির্মাণে অধিক সংখ্যক গাছ কাটার প্রয়োজন হওয়ায় কাজের কিছুটা ধীরগতি হয়েছে। তবে আগামী দেড় মাসের মধ্যে কুতুবদিয়ায় শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগ ও সরবরাহ নিশ্চিতের আশা করছি।
প্রায় ২১৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপে প্রায় ২ লাখ মানুষের বসবাস। ১৯৮০ সালে এ দ্বীপে প্রথম জেনারেটরের মাধ্যমে প্রায় ৬০০ গ্রাহকের জন্য সান্ধ্যকালীন বিদ্যুৎ সুবিধা চালু করা হয়। কিন্তু ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে বৈদ্যুতিক খুঁটিসহ সঞ্চালন লাইনগুলো ভেঙে পড়লে সংস্কারের অভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বিভিন্ন সময় স্বল্প আকারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় দ্বীপটিতে। পরে ২০০৫ সালে দেড় কিলোমিটার লাইন মেরামত করে দুটি জেনারেটরের মাধ্যমে উপজেলা সদর ও আশেপাশের কিছু এলাকায় সন্ধ্যার পর কয়েক ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছে পিডিবি। এরপর ২০০৮ সালে কুতুবদিয়ায় বিদ্যুৎ সুবিধা বাড়ানোর জন্য একটি ১ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হলেও, সেটি তেমন কাজে আসেনি। বর্তমানে এ কেন্দ্রটি বন্ধ রয়েছে।
পাঠকের মতামত: