ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

বিচারক শূন্য চকরিয়া আদালতে মামলার পাহাড়, বিচার প্রার্থীদের দুর্ভোগ

অনলাইন ডেস্ক :: কক্সবাজারের চকরিয়া সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে ৮ মাস ধরে বিচারক নেই। ফলে বিচারক সংকটে ঝুলে আছে কয়েক হাজার মামলা। এতে চকরিয়া-পেকুয়ার ৭ লাখ মানুষের মধ্যে দেওয়ানী বিচার নিয়ে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। দ্রুত বিচারক নিয়োগ পেলে এবং ঝুলে থাকা মামলা নিস্পত্তি হলে জমি-সংক্রান্ত বিরোধ কমে আসবে বলে মনে করছেন আইনজীবি ও বিচারপ্রার্থীরা।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৭ আগস্ট থেকে সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে বিচারক পদটি শূন্য রয়েছে। মো. আব্বাস উদ্দিন ২০১৮ সালের ১০ নভেম্বর সিনিয়র সহকারী জজ হিসেবে যোগদান করেন। ২০১৯ সালের ২৭ আগস্ট বদলি হয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত হন তিনি। এর পর থেকে দীর্ঘ ৮ মাস ধরে বিচারক পদটি শূন্য রয়েছে। ফলে মামলা নিস্পত্তি ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা শুরু হয়।

আরও জানা গেছে, সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে বর্তমানে ৪ হাজার ২৫৮টি মামলা রয়েছে। যার মধ্যে জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে মামলার সংখ্যা বেশি। বিচারক না থাকায় এসব মামলা নিস্পত্তিতে বিলম্ব হচ্ছে। ফলে ভুক্তভোগীদের মাঝে অশান্তি বিরাজ করছে।

চকরিয়ার শাহ আলম নামের এক ভুক্তভোগী চকরিয়া নিউজকে জানান, ২০১৫ সালের জমির খতিয়ান সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে একটি মামলা দায়ের করি। বর্তমানে মামলাটি বিচারিক প্রক্রিয়ার রয়েছে। বিচারক না থাকায় মামলাটি নিস্পত্তি হচ্ছে না।

আরেক ভুক্তভোগী রেহানা আক্তার নামের এক গৃহবধূ চকরিয়া নিউজকে জানান, আমার সাথে দুই বছর আগে স্বামীর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। আমার মোহরানা আদায়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের করি। আদালত মাসিক কিস্তিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা দেওয়ার রায় দেন। পরে বিবাদী পক্ষ দুই মাসের কিস্তির টাকা জমা দিলেও গত আট মাস ধরে বিচারক না থাকায় টাকা গ্রহণ ও উত্তোলন করা যাচ্ছে না।

মামলার কাজে আসা আদালত চত্বরে পেকুয়ার বাসিন্দা আহমদ হোসেন চকরিয়া নিউজকে বলেন, আমার একটি মামলা দায়ের করেছিলাম ২০১২ সালে। মামলাটি অনেকটা শেষ পর্যায়ে আসলেও দীর্ঘ ৮ মাস থেকে এ আদালতে বিচারক না থাকায় মামলার কার্যক্রম চলছে না। তাই সর্বশেষ অবস্থা দেখতে আসলাম।

চকরিয়া আইনজীবি সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ওমর ফারুক চকরিয়া নিউজকে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বিচারাধীন মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বলা হলেও চকরিয়া-পেকুয়ার ক্ষেত্রে যেন তার উল্টো। আদালতে বিচারক না থাকায় বিচার কাজে স্থবিরতা বিরাজ করছে। তাছাড়া ভূমি দস্যুরা জোরপূর্বক জমি দখলে মেতে উঠেছে। বিচারক সংকটের কারণে জমি-জমা সংক্রান্ত আইনী প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা যাচ্ছে না। এতে দখলবাজরা বেপরোয়া হয়ে বিরোধীয় জমি জবর-দখলে মেতে উঠেছে। চকরিয়া সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে বর্তমানে ৪ হাজারের অধিক মামলা চলমান রয়েছে। যার মধ্যে অর্ধেক মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।

তিনি আরও বলেন, বিচারকের পদ শূন্য থাকায় মামলার বাদী-বিবাদীরা হয়রানির শিকার হচ্ছে। আমরা একাধিকবার জেলা জজ সাহেবের সাথে দেখা করে শূন্য পদে বিচারক পদায়নের জন্য অনুরোধ করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিচারক পদায়ন করা হয়নি। আমরা চকরিয়ায় একটি নারী আদালত ও যুগ্ম জেলা জজ আদালত স্থাপনের দাবি করছি। এখানে যদি নারী ও জেলা যুগ্ম আদালত প্রতিষ্টা করা হয় তবে চকরিয়া-পেকুয়ার ৭ লাখ মানুষ উপকৃত হবে।

চকরিয়া আইনজীবি সমিতির সভাপতি ও চকরিয়া সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের অ্যাডভোকেট মো.গোলাম ছরওয়ার চকরিয়া নিউজকে বলেন, আমরা সমিতির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে একাধিক বার আবেদন করেছি। কিন্তু এখনও আদালতে বিচারক না দেওয়াতে বিচার প্রার্থীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। আমরা দ্রুত বিচারক নিয়োগের জন্য জেলা জজের কাছে আবারও আবেদন জানাচ্ছি।

পাঠকের মতামত: