ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

হত্যার ঘটনাকে ‘আত্মহত্যা’ বলে নাটক সাজানোর চেষ্টা

কক্সবাজারে বাসা থেকে কিশোরীর লাশ উদ্ধারের সাড়ে ৪ মাস পর মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক ::
কক্সবাজার শহরের পশ্চিম বাহারছড়া গফুর সওদাগরের ভাড়াবাসা থেকে নিশাত তাসনিম নিহার (১৮) নামক কিশোরীর লাশ উদ্ধারের ঘটনার সাড়ে চার মাস পর অবশেষে মামলা আমলে নিয়েছে আদালত।

জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আদেশের আলোকে মঙ্গলবার (২০ জুন) কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৫ম আদালত মামলাটি রেকর্ড করতে থানায় প্রেরণ করেছে। যার ক্রিমিনাল রিভিশন মামলা নং-২৩০/২৩।

আসামিরা হলেন, ড্রাইভার মোকছেদ, ইসরাত জাহান বিথি ও বাঁধন।

মামলাটি সদর মডেল থানার ওসিকে ‘নিয়মিত মামলা’ হিসেবে রেকর্ড করে সিআইডির মাধ্যমে তদন্তের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি মোঃ রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আদালতের আদেশে আজকে (২১ জুন) মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। সিআইডি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিবে।

নিশাত তাসনিম নিহার চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা চা-বাগান এলাকার সৈয়দ আহমদের মেয়ে।

তিনি দাতা সংস্থা ইউএনডিপিতে রিসিপশনিস্ট ও চকরিয়া মহিলা ও শিশু বিষয়ক কর্মকর্তার অধীনস্থ খুটাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আওতাধীন শিক্ষার্থীদের সংগীত শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত ২ ফেব্রুয়ারি ভাড়া বাসায় তার লাশ পাওয়া যায়।

১৪ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সদর আদালতে মামলা করেন নিহত নিশাত তাসনিম নিহারের পিতা ছৈয়দ আহমদ। যার সিআর মামলা নং -২০৭/২৩। মামলাটি অনেকবার শুনানি হলেও নানা কারণ দেখিয়ে আমলে নেয়নি আদালত। তারপর রিভিশন মামলা দায়ের করেন ভিকটিমের পিতা।

মামলার বাদি ছৈয়দ আহমদ জানান, মেয়ে নিশাত তাসনিম নিহার বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপিতে অভ্যর্থনা কর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেই সুবাদে কক্সবাজার শহরে পশ্চিম বাহারছড়া গফুর সওদাগরের বাসায় ভাড়া নিয়ে থাকতেন।

২ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে আমাকে ফোনে ঘটনা বিষয়ে অবগত করা হয়। ফোন কলে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে থানায় যাই। দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা মোঃ রিয়াজ উদ্দিনের নিকট থেকে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে উল্টো বকুনি দেয়। তথ্যগত কোনো সহযোগিতা করেনি। প্রতিপক্ষের মতো রূঢ় আচরণ করে। মামলা করতে চাইলে তাতে বাধা দেয়। গণমাধ্যম কর্মীদেরকে ঘটনাটি জানাতে চাইলে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করে। এভাবে হত্যার ঘটনাটি ধামাচাপা থাকে দীর্ঘদিন।

নিহতের পিতা ছৈয়দ আহমদ আরো বলেন, ঘটনার সঙ্গে আত্মহত্যার কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে স্থানীয়রাও জানিয়েছেন। তবু ‘আত্মহত্যা’ বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

গফুর সওদাগরের ভাড়া বাসার কক্ষে নিশাত তাসনিম নিহারকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে দাবি স্বজনদের।

তারা বলছে, ঘরের ছাদের ফ্যানের এঙ্গেলে ওড়না বেঁধে ফাঁস লাগিয়ে মৃত্যুর নাটক সাজিয়ে হত্যাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে কৌশলে পুলিশের দারস্থ হয়।

লাশের উচ্চতা ৫ ফুট ২ ইঞ্চি। কক্ষে একটা ১-১.৫ ফুট উচ্চতার বাক্স ছাড়া কোন, চেয়ার, টেবিল, খাট বা অন্য কোন দ্রব্য ছিলনা, যার উপর দাঁড়িয়ে ছাদ ছৌঁয়া ফ্যানের এঙ্গেলের নাগাল পাওয়া যায়। তাছাড়া লাশের অবস্থাদৃষ্টে আত্মহত্যার কোন লক্ষণ নেই। এছাড়া ওইদিন বিকাল ৫টায় ফেসবুকে পোস্ট হয় “নিশাত এক্সিডেন্ট করে হাসপাতালে ভর্তি।” পরে ওই স্ট্যাটাস আর দেখা যায়নি।

ঘটনার পর বাসার দরজা জানালা খোলা ছিল। কিন্তু বাবা-মা ও স্বজন কিংবা তার কর্মরত অফিসের কাউকে জানানো হয় নি। সন্ধ্যা ৭টার দিকের ঘটনা। কিন্তু পরিবারকে জানানো হয় রাত সাড়ে ১১টার দিকে। খবর পেয়ে রাত আড়াইটার দিকে হাসপাতালে গিয়ে লাশ দেখে স্বজনরা। সঠিক সময়ে ঘটনার খবর জানাতে কেন দেরি করল? প্রশ্ন সবার।

লাশ উদ্ধারের কাজে নিয়োজিত এসআই ইফতেখার ও এসআই রিয়াজ উদ্দিনের বক্তব্যে ভিন্ন সুর। সবকিছুর মধ্যেই একটা ধূয়াশা এবং অস্পষ্টতা রয়েছে বলে অভিযোগ নিহতের পিতার।

পাঠকের মতামত: