বিবিসি : ভারতে এখনও বহু বাড়িতে নিজস্ব শৌচাগার যে নেই, সেটা এখন নতুন খবর নয়।
কিন্তু শৌচাগার না বানিয়ে যখন কেউ হেলিকপ্টার ভাড়া করার মতো শখ করতে পারেন, তখনই সেটা খবর হয়।
মধ্যপ্রদেশের সিহোর জেলার এক বিত্তবানের শখ হয়েছিল ছেলে হেলিকপ্টারে চেপে বিয়ে করতে যাবে বরযাত্রী নিয়ে। তারপর বউ নিয়ে ফিরবেও হেলিকপ্টারে। যদিও পাত্রী থাকেন পাশের গ্রামেই!
আজমতনগর গ্রামের বাসিন্দা সূরজ সিং গুর্জর তাঁর ছেলে নেম সিংয়ের বিয়ের জন্য ভাড়া করতে চেয়েছিলেন হেলিকপ্টার। নিয়মমতো প্রশাসনের কাছে আবেদনও করেছিলেন তিনি।
আর এধরণের অনুমতি দেওয়ার আগে প্রশাসনিক কর্তারা খতিয়ে দেখতে গিয়েছিলেন মি. গুর্জরের বাড়ি।
তখনই প্রশাসনের কর্মকর্তার জানতে পারেন যে মি. গুর্জরের বাড়িতে শৌচাগারই নেই, অথচ শখ হয়েছে হেলিকপ্টার ভাড়া করার।
নায়েব তহসীলদার কুলদীপ দুবে মুখের ওপরেই জানিয়ে দেন, “আগে বাড়িতে শৌচাগার তৈরী করুন, তারপর হেলিকপ্টারের জন্য আবেদন করবেন। শৌচাগার না হলে হেলিকপ্টারের অনুমতি দেব না।”
মি. গুর্জর যখন হেলিকপ্টার ভাড়া করতে চেয়েছেন, তখন যে তাঁর আর্থিক অবস্থা খুবই ভাল, সেকথা বলার অপেক্ষা রাখে না। যদিও ভাল করে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা গেছে সূরজ সিংয়ের পরিবারের নাম বিলো পভার্টি লাইন বা গরিবীরেখার নীচে থাকা মানুষদের তালিকাতেও আছে। অর্থাৎ তাঁরা রেশন থেকে শুরু করে নানা সরকারী সুবিধা পেয়ে থাকেন, আর ভরতুকিও পান।
একদিকে তো হেলিকপ্টারে চাপিয়ে বরবেশে ছেলেকে পাঠানোর পরিকল্পনা বাতিল হতে বসেছে, অন্যদিকে বি পি এল তালিকায় কী করে একজন ধনী ব্যক্তির নাম থাকে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে প্রশাসনিক তদন্ত!
তবে সিহোরের জেলা শাসক সুদাম খাড়ে বিবিসি বাংলাকে জানালেন, “চাপে পড়ে ওই ব্যক্তি রাতারাতি শৌচাগার বানিয়ে নিয়েছেন। তারপরে নতুন করে আবেদন করেছিলেন তিনি, আমরা অনুমতি দিয়েও দিয়েছি। তবে বি পি এল তালিকায় কীভাবে ওই ধনী পরিবারের নাম এল, তা নিয়ে এখনও তদন্ত চলছে।”
ভারতে ২০১৯ সালের মধ্যে সব বাড়িতে শৌচাগার তৈরীর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
এর জন্য একেবারে নীচুতলার প্রশাসনিক কর্মকর্তার ভোরবেলা বেরিয়ে গ্রামের মাঠেঘাটে ঘুরছেন। কাউকে মাঠে শৌচকর্ম করতে দেখলেই নান ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
কখনও হাতে গোলাপফুল ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, কোথাও হাতে কোদাল দিয়ে মাটি চাপা দিতে বলা হচ্ছে, কোথাও ছবি সহ নামের তালিকা গ্রামের টাঙ্গিয়ে দিয়ে অপমান করার ভয় দেখানো হচ্ছে।
তাতে অনেকে বাড়িতে শৌচাগার বানাচ্ছেন ঠিকই, তবও মাঠে গিয়ে প্রাত:কৃত্য সাড়ার অভ্যেস এখনও অনেকেই ছাড়তে পারছেন না।
তবে সবধরণের হুমকির সেরা এটাই, যে বিয়ের জন্য হেলিকপ্টার ভাড়া দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে না যতক্ষণ না বাড়িতে শৌচাগার তৈরী হচ্ছে!
পাঠকের মতামত: