ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

বাজারঘাটা পুকুর সংস্কার কাজ বন্ধ রাখতে হাইকোর্টের স্থিতাবস্থার আদেশ

বার্তা পরিবেশক ::  কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) কর্তৃক বাজারঘাটা নাপিতা পুকুর সংস্কার কাজ বন্ধ রাখতে স্থিতাবস্থা বজার রাখার আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। গত ১৯ জানুয়ারী হাইকোর্টের বিচারপতি মাননুন রহমান ও খিজির হায়াতের দ্বৈত বেঞ্চে ওই স্থগিতাদেশ দেন। উক্ত আদেশের জাবেদা নকলের কপি গত ২৮ জানুয়ারী নোটিশ সহকারে জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী, কক্সবাজার গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী, খান এন্ড সন্স বাংলাদেশকে অবহিত করা হয়েছে।

জানা যায়, কক্সবাজার মৌজার জে.এল নং-১৬, বি.এস দাগ নং-৭০১৩ এবং বিএস খতিয়ান নং-১২৬০ বসতঘর ও নিজস্ব পারিবারিক পুরোনো ৭০/৮০ বছরের রাস্তাসহ মোট ৬৬০০ শতাংশ জায়গা হয়। যা হাজী হাফেজ আহমদ চৌধুরী তার পিতা মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরীর পূর্ব পৈত্রিক সম্পত্তি হিসেবে বংশ পরম্পরায় ভোগ দখল করে আসছে। হাজী হাফেজ আহমদ চৌধুরী মারা গেলে তার সম্পত্তি কন্যা ও পুত্ররা পান। উক্ত জায়গা নাপিতা পুকুর সংলগ্ন । পরবর্তীতে ২০১১ সালে নাপিতা পুকুরের পশ্চিম পার্শে¦র জমি, অর্থাৎ পুকুর পাড়ের একটি অংশ কক্সবাজার পৌরসভা থেকে লীজের জন্য আবেদন করা হলে কক্সবাজার মৌজার আর,এস দাগ নং-১৮৮৯, পি,এস দাগ নং-৩০১৫, বি, এস দাগ নং-৭০১৪-৭০১৫ জমির পরিমাণ ৪০ ফুট *২৫ ফুট=১০০০ বর্গফুট ৫০ হাজার টাকা লীজ মানি দিয়ে লিজ নেয়া হয়। ওইসময় ওই জমিতে দুইতলা ভবন করার জন্য কক্সবাজার পৌরসভা লে-আউট নকশাও প্রদান করে। যার আলোকে অনেক টাকা ব্যয় করে সেখানে দ্বিতলা পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। এই জমির পাশ দিয়ে ৫০/৬০ পরিবারও বসবাস করেন। এসব পরিবারের মানুষ সেই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করে আসছিলো। কিন্তুকক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নাপিতা পুকুরসহ ৩টি পুকুর সংস্কার কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। তার মধ্যে বাজারঘাটা এলাকায় ওই জমির পূর্ব পাশের্^ নাপিতা পুকুর অবস্থিত। কিন্তু কোন রকম নোটিশ না দিয়ে কক্সবাজার পৌরসভা থেকে লিজ পাওয়া জমিতে স্থাপিত দ্বিতলা ভবনটি গত ১২ মে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ জোরপূর্বক ক্ষমতার প্রভাব কাটিয়ে রহস্যজনকভাবে গুড়িয়ে দেয়। ফলে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়। সেই পুকুরের পশ্চিম পাশের্^ ৭০-৮০ বছরের চলাচলের রাস্তা পুকুর সংস্কার কাজে ঢুকিয়ে নেয়। উচ্ছেদকৃত দ্বিতলা ভবনে নিচতলায় ফুলবাড়ি এন্ড ইভেন্টস, শাহী বিরিয়ানী হাউজ ও মাবুদ সুজ নামে তিনটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানও ছিল। এছাড়া সেখানে সরকার ও বঙ্গবন্ধু ট্রাস্ট অনুমোদিত শেখ রাসেল মেমোরিয়াল সমাজ কল্যাণ সংস্থার আলাদা দু’টি কার্যালয়ও ছিল। পেছনে ছিলো-কক্সবাজার-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রহমান বদির ব্যক্তিগত অফিস। হঠাৎ করে দ্বিতলা ভবনটি ভেঙ্গে দেয়ায় মালিকের পাশাপাশি ব্যবসায়ী ও ওই সংস্থাগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান হাজী হাফেজ আহমদ চৌধুরীর কন্যা বর্তমানে ওই জায়গার প্রকৃত মালিক খোদেজা আক্তার সাকেরুন্নেছা সাকী। এতে প্রায় সোয়া তিন কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

তাই জমি ও স্থাপনা ক্ষতিপূরণের আবেদন করে খোদেজা আক্তার সাকেরুন্নেছা সাকী কক্সবাজার যুগ্ন জেলা জজ ১ম আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং- অপর-২৫২/২০১৯ইং। এটি বিচারাধীন রয়েছে। ওই মামলায় তিনি পুকুর কাজ বন্ধ করতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে গত ২০১৯ সালের ২০ আগষ্ট আবেদন করেন। যা ওই বছরের ১২ নভেম্বর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা শুনানী গ্রহণ না করে পরবর্তী তারিখ ঘোষণা করে কক্সবাজার যুগ্ন জেলা ১ম জজ আদালত। পরে তিনি হাইকোর্টে সিভিল রিভিশনে মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-৮৩/২০২০ইং। ওই রিভিশন মামলায় গত ১৯ জানুয়ারী মহামান্য হাইকোর্ট বাজারঘাটা কউকের পুকুর সংস্কার সকল কার্যক্রমের উপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দেন।

এক প্রতিক্রিয়ায় খোদেজা আক্তার সাকেরুন্নেছা সাকী বলেন, আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমার মালিকানাধীন জমি ও স্থাপনা সম্পূর্ণ অবৈধভাবে কউক চেয়ারম্যান জোরপূর্বক নাপিতা পুকুর সংস্কার কাজে ঢুকিয়ে নিয়েছে। যা একটি স্বাধীন দেশে কখনও কাম্য নয়। ক্ষতিপূরণ না পাওয়া পর্যন্ত আমি আইনী প্রক্রিয়ায় লড়ে যাব।

পাঠকের মতামত: