ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

বাঁশখালীর গন্ডামারায় কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে সাধারণ জনগণ ও পুলিশের সংঘর্ষ, নিহত ৩

banshkhali pic 02মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, বাশঁখালী থেকে ফিরে ::

চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারা কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে সাধারণ জনগণ ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও গুলি বিনিময় চলছে। গণ্ডামারা ইউনিয়নে এস আলম গ্র“ফের কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সমাবেশ করায় এলাকাবাসীর মিছিলে গুলি চালিয়েছে পুলিশ । স্থানীয় সূত্রে পাওয়া খবরে জানা যায়, এতে অন্তত ৩ জন নিহত। তবে নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। এতে কয়েকজন পুলিশও আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে পুলিশ নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।
আজ সোমবার বিকেলে ৪টার দিকে স্থানীয় গণ্ডামারা হাজী পাড়া স্কুল মাঠে এ ঘটনা ঘটে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সংঘর্ষ এখনো চলছে। গন্ডামারার সাবেক চেয়ারম্যান লেয়াকত আলীর বলেন-‘দীর্ঘদিন যাবত কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে বিরোধীতা করে আসছিল স্থানীয় সাধারণ জনগণ। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২ এপ্রিল এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেছিল সাধারণ জনগণ। ওই মিছিলে পুলিশ সহ প্রভাবশালী মহলের লোকজন বাধা দেয়। এবং উল্টো মিথ্যা মামলা করে ৭ জনকে ধরে নিয়ে যায় বাঁশখালী থানা পুলিশ। নিরীহ গ্রামবাসীদের মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার ও গন্ডামারায় কয়লা বিদ্যুৎ স্থাপনের প্রতিবাদে আজ সোমবার প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে তাঁর নেতৃত্বে সাধারণ জনগণ’। তিনি আরও জানান-‘ওই প্রতিবাদ সভায় পুলিশ ও প্রভাবশালী মহল নির্বিচারে হামলা চালায়’। ওই প্রতিবাদ সভায় অন্তত ৩জন নিরীহ গ্রামবাসী নিহত হয়।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামসুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ১১ জন পুলিশ ও আনসার সদস্য এবং ৯ জন গ্রামবাসী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে তিনজনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গুরুতর আহতদের মধ্যে মৃত আশরাফ আলীর ছেলে আংকুর নূর, মর্তুজা আলী, আঙুর আলী, গোলাম মোহাম্মদ, জাগের আহমদ প্রমুখ রয়েছেন। অন্যদিকে পুলিশ একজনের লাশ নিয়ে গেলেও বাকিদের লাশ স্বজনদের হেফাজতে আছে রয়েছে জানা গেছে। নিহত সবাই বড়ঘোনাসহ বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণকে কেন্দ্র করে পক্ষে-বিপক্ষে সমাবেশে প্রশাসনের ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করায় পুলিশ বাধা দিলে এতে পুলিশের ওপর হামলা করে এলাকাবাসী। এসময় পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি ছূঁড়লে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়। এমনকি পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্যও আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করছে।’
তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিপক্ষে এলাকাবাসীর সাথে এ সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে পুলিশেল গুলিতে কমপক্ষে সাতজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া আরো বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছে। নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের বাঁশখালীর উপজেলার উপকূলীয় গণ্ডামারার ইউনিয়নে এস. আলম গ্র“প ও চায়না সেফকো কোম্পানীর যৌথ উদ্যোগে ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প নির্মাণের বিপক্ষে গত কয়েক মাস ধরে এলাকাসাীর মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। সেই কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণে বাধা প্রদান করছে স্থানীয় জনতা। গন্ডামারায় ওই প্রকল্পের পক্ষে- বিপক্ষে দুইটি গ্র“প মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। স্থানীয়দের সমন্বয়ে গড়ে উঠা একটি পক্ষ এস আলম গ্র“পের কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান প্রতিরোধে ব্যাপক মিছিল মিটিং, প্রতিবাদ সভার মাধ্যমে জোরালো প্রতিবাদ চালাচ্ছে। ওই পক্ষের নেতৃত্বে আছেন গন্ডামারার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা লিয়াকত আলী আর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পক্ষে আছেন স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুল আলম মাষ্টার। এর আগেও গত ১৮ মার্চ এনিয়ে দুপক্ষের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছিল। পরে সেখানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পক্ষে নিয়ে পুলিশ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিরোধী মিছিলে গুলি চালিয়ে ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়রা আরো জানান, আজ সোমবার (৪ এপ্রিল) বিকেলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে হাজী পাড়া স্কুল মাঠে সমাবেশের ডাক দেন কয়লা বিদ্যুৎ প্রতিরোধ কমিটি। আর একই সময়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পক্ষে সমাবেশের ডাক দেন আওয়ামী লীগ নেতা শামসুল আলম। সে কারণে বাঁশখালীর ইউএনও ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওই বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত সমাবেশের উপর ১৪৪ ধারা জারি করে। তবে বিকেলে ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে সমাবেশ করতে গেলে কয়লা বিদ্যুৎ প্রতিরোধ কমিটির সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, বেসরকারি পর্যায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে দেশের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ হচ্ছে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গণ্ডামারা পশ্চিম বড়ঘোনায়। চায়না সেফকো এইচটিজির সঙ্গে যৌথভাবে ৬০০ একর জমির ওপর ২০ হাজার কোটি টাকার এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে এস আলম গ্র“প। কয়লাভিত্তিক ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৭০ শতাংশের মালিকানা চট্টগ্রামের এস আলম গ্র“পের, ৩০ শতাংশের মালিকানা থাকবে দুটি চীনা প্রতিষ্ঠানের। বিনিয়োগ করা ২০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ১৫ হাজার কোটি টাকার শেয়ার মালিকানা ও ঋণ দিচ্ছে চীনের প্রতিষ্ঠান দুটি। জার্মান ও আমেরিকান প্রযুক্তির এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে জাহাজ থেকে কয়লা নামানোর জন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশে তৈরি করা হবে বেসরকারি বন্দরের মতো একটি জেটি। প্রকল্প চলাকালীন এখানে কাজ করবে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর বিশেষজ্ঞ, প্রকৌশলী, কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে কর্মসংস্থান হবে ৬০০ জনের। আর এ বৃহৎ ও উন্নয়মূখী প্রকল্প নিয়ে প্রথম থেকে বিএনপি নেতা লিয়াকত আলীর নেতৃত্বে স্থানীয়রা তাদের বাপ-দাদার ভিটে-বাড়ী হারানো শংকায় প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিল।

 

পাঠকের মতামত: