ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

ফানুসের আলোয় বর্ণিল আকাশ

এম.এ আজিজ রাসেল :: একের পর এক আগুনমুখো ফানুস উড়ে যাচ্ছে আকাশে। বর্ণিল কাগজে তৈরি বিচিত্র আকারের ফানুস। এর মধ্যে নজর কাড়ছিল ব্যতিক্রমী কিছু ফানুস। কোনোটিতে আঁকা ধর্মীয় চিহ্ন। কোনোটিতে লেখা শান্তির বাণী। একটি ফানুসে ছিল ‘কোভিড-১৯’। শত শত ফানুসের আলোয় বর্ণিল হয়ে উঠে আকাশ। ১ নভেম্বর দুপুরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ও রামু বাঁকখালী নদীতে কল্প জাহাজ ভাসার মধ্য দিয়ে এই উৎসবের সমাপ্তি ঘটবে।

শনিবার (৩১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় প্রবারণা পূর্ণিমার দ্বিতীয় দিনে শহরের জাদিরাম, বইল্যাপাড়া, পিটাকেট, থংরো ও অ¹মেধা ক্যাং সংলগ্ন কেন্দ্রীয় মাহাসিংদোগ্রী মন্দির প্রাঙ্গনে স্বর্গের উদ্দেশে উড়ানো হয় শত শত ফানুস। ওইসময় ফানুসের আলোয় রঙিন হয় পর্যটন নগরীর নীল আকাশ। জীর্ণতা মাড়িয়ে পরিশুদ্ধ জীবন ও করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তির প্রার্থনায় মন্দির প্রাঙ্গণে মিলিত হয় হিন্দু, বৌদ্ধ, খিস্ট্রান, মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্মালম্বীর হাজারো মানুষ। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সাথে হাতে হাত, কাধেঁ কাধঁ মিলিয়ে আকাশে তোলা হয় একের পর এক ফানুস। এসময় রচিত হয় সম্প্রীতির দৃঢ় বন্ধন। যে বন্ধন শত চেষ্টা করেও যেন ছিন্ন করা যাবে না।

বিকাল থেকে রাখাইন সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ নতুন পোশাক ও উন্নতমানের খাবার নিয়ে বিহারে গমন করেন। সেখানে সুখ-শান্তি ও মহামারি করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি কামনায় প্রার্থনা করেন সবাই।

শনিবার সন্ধ্যায় শহরের পিটাকেট, মোহাজের পাড়া বৌদ্ধ বিহার, জাদিরাং বিহার ও রাখাইন সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনগুলো নজরকাড়া প্রায় ৫০টি নান্দনিক প্যান্ডেল তৈরি করেছে। প্যান্ডেলগুলোর মূল আকর্ষণ বুদ্ধ। জমকালোভাবে সাজানো হয়েছে এসব প্যান্ডেল। বিহারগুলোও সেজেছে নব রূপে। বর্ণিল আলোকসজ্জায় আলোকিত করা হয়েছে সর্বত্র। প্রবারণা ঘীরে বৌদ্ধ পল্লীর ঘরে ঘরে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।

এবার মাহাসিংদোগ্রী মন্দিরে প্যান্ডেল করেছে কক্সবাজার সিটি কলেজ বৌদ্ধ ছাত্র মৈত্রি, সিটি বয়েজ, রাখাইন একতা সংঘ, বাংলাদেশ রাখাইন স্টুডেন্ট কাউন্সিল, ফ্রি স্টাইল রিলেশনশীপ, রাজধানী ফ্রেন্ডস সার্কেল, রাখাইন যুব ইউনিটি, হ্যাংগিং গার্ডেন, কে, আর ভিক্টোরিয়া, মাছবাজার রাখাইন সমাজ কল্যাণ পরিষদ, রাখাইন তরুণ সংঘ ও বৌদ্ধ মৈত্রি পরিষদ।

শহরের মোহাজের পাড়া, বাজার ঘাটা, বৈদ্যঘোনা ও জাদিরাম বৌদ্ধ বিহার, মহেশখালী, উখিয়া, চকরিয়া, রামু, পেকুয়া, টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়িতেও নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপিত হয়েছে।

এনজিও কর্মী উথান্ট অং বলেন, প্রবারণার মূল প্রতিপাদ্য আত্মশুদ্ধি, শুভ, সত্য ও সুন্দরকে বরণ করে অসত্য ও অসুন্দরকে বর্জন করা। আমি কামনা করি মানুষের অন্তর থেকে সব মলিনতা দূর করে অহিংসা, সাম্য, মৈত্রী, প্রেম ও দয়া জাগ্রত হোক।

কক্সবাজার রাখাইন একতা সংঘের সভাপতি উসেন থোয়েন (উসেনমি বাবু) বলেন, সিদ্ধার্থ যখন বুদ্ধিসত্ত রূপে শ্রাবন্তী নগর থেকে গৃহত্যাগ করেন। তখন অনুমাদ্ধর্শী নদী তীরে অবস্থান কালে অধিষ্ঠান করে নিজ চুলকে কর্তন করে উপরে দিকে নিক্ষেপ করেন। সে চুল গুচ্ছ মহাতাবতিংস স¦র্গের প্যাগোডা হিসেবে স্থির আছে। তাই চুলামনি নামে প্যাগোডা উদ্দেশ্যেই পূঁজা এবং প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করতে ফানুস উড়ানো হয় বলে জানা গেছে। তথাগত ভগবান বুদ্ধের আড়াই হাজার বছর পূর্বে সময়ের তাবতিংসা স্বর্গের তিন মাস বর্ষাবাস করে কার্ত্তিকী পূর্ণিমাকে ঘিরে মানবকুলের মহাপৃথিবীতে অবতরণ করেন। এই স্মৃতিকে অমলিন করে রাখতে কক্সবাজারের বৌদ্ধ সম্প্রদায় উদযাপন করছে শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা।

 

পাঠকের মতামত: