ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

ফলোআপ : পেকুয়ার সেই প্রসূতি আয়েশার মৃত্যু

মো. ফারুক, পেকূয়া :

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। ওই প্রসূতির নাম আয়েশা বেগম (২৮)। সে পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের হাজী পাড়া গ্রামের দিনমজুর ফজল করিমের স্ত্রী। গত ১৪ এপ্রিল সাত মাসের অন্ত:স্বত্তা আয়েশা বেগমের হঠাৎ প্রসব বেদনা শুরু হলে তার স্বামী ও আত্মীয়-স্বজনরা তাকে পেকুয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখানে ডাক্তার রুবেল সাদাত চৌধুরী তার স্ত্রীর ভুল চিকিৎসা করে জরায়ুর মুখ ও প্রসাবের নাশিকা কেটে ফেলেন। পরে তার স্ত্রীর অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় সেখান থেকে চমেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। আর গত ১৯ এপ্রিল দিবাগত রাত ২ঘটিকার দিকে চমেক হাসপাতালে চকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

আয়েশা বেগমের স্বামী ফজল করিম জানান, ‘আমার স্ত্রী সাত মাসের অন্তঃস্বত্তা হওয়ায় শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে ১৪ এপ্রিল পেকুয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসি। হাসপাতালের চিকিৎসক রুবেল সাদাত চৌধূরী পরীক্ষা নিরীক্ষা করানোর পর বলেন, গর্ভের ভিতর বাচ্চার সমস্যা হয়েছে ডিএনসি করে বের করতে হবে। ভর্তির সময় বলা হয়েছিল মহিলা ডাক্তার দিয়ে করাবেন। কিন্তু ডিএমসি করান এমবিবিএস ডাক্তার রুবেল সাদাত চৌধুরী। ডিএমসি করানোর ১ঘন্টার পর থেকে আমার স্ত্রীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। চট্টগ্রাম নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক রুবেল সাদাত। আসার সময় জেনারেল হাসপাতাল থেকে ডিএনসি করানোর ফাইলটি না দেওয়ায় অনেক কষ্টে পড়ে যাই। গত ১৭ এপ্রিল দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হ্সাপাতালে ভর্তি করি। এদিকে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর পর চিকিৎসক বলেন, স্ত্রীর জরায়ুর মুখ ও প্রসাবের নাশিকা কেটে যাওয়ায় ব্যাপক রক্তক্ষরণ শুরু হয়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রতিদিন ৫ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে। তার স্ত্রী গত রাত ২টার দিকে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এ বিষয়ে তিনি পেকুয়া থানায় লিখিত অভিযোগ নিয়ে যান। কিন্তু পেকুয়া থানা পুলিশ তার অভিযোগটি গ্রহণ না করে না আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

ফজল করিমের আত্বীয় চিকিৎসক আতিকুর রহমান বলেন, ফজল করিম আমার মামাতো ভাই। তার স্ত্রীকে মূমর্ষ অবস্থায় চমেক হাসপাতালে নিয়ে আসলে জানতে পারি জেনারেল হাসপাতালের চিকিসৎক রুবেল সাদাতের অপচিকিৎসার  কাহিনী।

এ বিষয়ে জানতে পেকুয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক রুবেল সাদাত চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন‘ প্রতিদিন কত রোগী যে তিনি দেখেন, তার সঠিক হিসাব তার কাছে নাই। এ বিষয়ে জানার জন্য তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগোযাগ করতে পরামর্শ দেন। পরে পেকুয়া জেনারেল হাসপাতালে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোন্তাজির কামরান জাদিদ মুকুট বলেন ‘রোগীর কোন আত্মীয় স্বজন আমাদের বিষয়টি জানায়নি।

এদিকে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া আয়েশা বেগমের ৬ বছর বয়সী লাকী আক্তার ও ৪ বছর বয়সী আশেক উল্লাহ নামের দুই শিশু সন্তান রয়েছে। গতকাল ২০ এপ্রিল চমেক হাসপাতাল থেকে লাশ যখন বাড়ী পৌঁছে তখন দুই অবুজ শিশু নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।

পাঠকের মতামত: