এম.আর মাহমুদ :: হিরক রাজার দেশে নাটকের একটি ডায়ালগ এখনো মন থেকে ডিলেট করতে পারিনি। যা বার বার মনে পড়ে “আমি যে দিকেতে চাই শুধু অবাক বনে যাই, কোথাও কুল কিনারা খুজে নাহি পাই” আসলে নাটকটি দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল কলেজের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে। অনেক বছর অতিবাহিত হয়েছে এখনো এ ডায়ালগের একটি অংশ কুল কিনারা খুজে পাচ্ছিনা। দেশে চলমান অনেক ঘটনার কুল কিনারা খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা। আসলে লিখার ইচ্ছে ছিল কোরবানীর পশুর চামড়ার দরপতন নিয়ে। কিন্তু লিখতে হচ্ছে অবর প্রাপ্ত সেনাবাহিনীর মেজর সিনহা মোঃ রাশেদ কে নিয়ে। রাশেদ সেনাবাহিনীর একজন চৌকস মেজর। তিনি প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় নিয়োজিত এসএসএফ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বিষয়টি হালকা ভাবে দেখার সুযোগ নেই। সেনাবাহিনীর সব কর্মকর্তা এসএসএফ এর সদস্য হতে পারেনা। হয়তো রাশেদ তার যোগ্যতা বলে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা রক্ষায় (এসএসএফ) এর দায়িত্ব পালন করেছেন। একজন চৌকস সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে পুলিশের একজন পরিদর্শক গুলি করে হত্যা করায় সারাদেশে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বইছে। ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এঘটনার রহস্য বের করার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কমিটি মেজর রাশেদ হত্যার রহস্য বের করতে মাঠে নেমেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত কমিটি এ ঘটনায় প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে জমা দেবেন। তারপর যা হবার তাই হবে। কিন্তু মেজর রাশেদ আর কোনদিন ফিরে আসবেনা। রাশেদ চলে গেছে না ফেরার দেশে। মিয়ানমার থেকে টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্ত হয়ে প্রতিনিয়ত বড় বড় ইয়াবা চালান ঢুকে সারা দেশে ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে। এতে নষ্ট হতে হচ্ছে দেশের যুব সমাজ। ইয়াবা পাচার বন্ধ করার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ঘুম হারাম হয়ে গেছে। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ডিসেম্বরের মধ্যে কক্সবাজারের ৮ উপজেলা ইয়াবামুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে। সে মোতাবেক পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। একই সাথে র্যাব ও বিজিবি যথাযথ ভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। এ ঘোষণার পর কক্সবাজারবাসী আশান্বিত হয়েছিল অন্তত ইয়াবার অপবাদ থেকে জেলাবাসী রক্ষা পাবে। হঠাৎ করে টেকনাফ থানার বাহার ছড়া পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকতের গুলিতে নির্মম ভাবে প্রাণ হারিয়েছেন সেনাবাহিনীর অবসর প্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ। কোন পরিস্থিতিতে এমন ঘটনা সংঘঠিত হয়েছে তা তদন্ত কমিটি বের করবে। মেজর রাশেদ নেই, কিন্তু ঘাতক পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত বহাল তবিয়তে আছে। বেতন ভাতাও ঠিকমত পাবে। তাই বলতে হয় মুনির চৌধুরীর ভাষায় “মরে গেলে পঁচে যায, বেঁচে থাকলে বদলায়”। মেজর রাশেদের বাবা ছিলেন একজন মুক্তিযুদ্ধা ও সরকারী কর্মকর্তা, তিনি নেই তবে রাশেদের মা এখনো বেঁচে আছে পুত্র শোকে পাথর হয়ে। অভিজ্ঞ মহলের অভিমত ঘাতকদের উল্লাস নিত্য কোনদিন বন্ধ হবেনা। রাশেদ মরেও শান্তি পেলনা। হয়ত তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি বলে। মৃত্যুর পরেও অপবাদ সইতে হচ্ছে তার দখলে ছিল ৫০ পিস ইয়াবা, একটি রিভলবার (যা বৈধ), সামান্য কয়েক পুটলি গাজা, দুই বোতল বিদেশী মদ, বাহ্ কি চমৎকার। জাতি রাশেদের মত একজন চৌকস সেনা কর্মকর্তাকে কোনদিন ফিরিয়ে পাবেনা। তার মৃত্যু হয়েছে মেরিন ড্রাইভ সড়কে, যেই সড়কটি নির্মাণ করেছে দেশের গৌরব সেনাবাহিনী। সেই সড়কেই সেনাবাহিনীর একজন সাবেক কর্মকর্তা রাশেদ পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিয়েছে, তার শরীরে তাজা রক্তের বিনিময়ে ইয়াবা পাচার বন্ধ হলেও কক্সবাজারবাসীর আত্মা শান্তি পাবে। ইয়াবা পাচারে কে তালিকাভুক্ত, কে তালিকাভুক্ত নয়, তা মুখ্য বিষয় নয়। আসল বিষয় হচ্ছে ইয়াবা পাচারকারীরা বধ্ হচ্ছে কিনা। জেলা পুলিশ সুপারের ঘোষণা ছিল সাহসী। এই মহৎ উদ্দেশ্যকে প্রশ্নবিদ্ব করার জন্য এ ঘটনা ঘটেছে কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার। কারণ ইয়াবা পাচার চিরতরে বন্ধ হয়ে গেলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় ঘাপটি মেরে থাকা অনেকের আয় বন্ধ হয়ে যাবে, সেই আশংকায় মেজর রাশেদের মত একজন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে হয়তো ঘাতকেরা ‘ঘর পোড়া আগুনে আলু পুড়ে খেতে’ চাচ্ছে কিনা ! কারণ এ ধরণের একটি নিষ্ঠুর হত্যাকান্ডের কারণে অনেক সৎ পুলিশ কর্মকর্তা কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে পড়েছে। রাখাল বালক ও বাঘের গল্প আমরা অনেক শুনেছি। কথিত বন্ধুক যুদ্ধের কল্পকাহিনী জাতী আর শুনতে চায়না। কেউ বিশ্বাসও করেনা। সবশেষে হিরক রাজার দেশের নাটকটির আরেকটি ডায়ালগ দিয়ে লেখাটির ইতি টানছি- “জানার কোন শেষ নেই, জানার চেষ্টা বৃথা তাই” রশি ধরে মার টান, ঘাতক হবে খান খান।
লেখক : এম আর মাহমুদ, দৈনিক সমকাল চকরিয়া প্রতিনিধি
সভাপতি -চকরিয়া অনলাইন প্রেসক্লাব, চকরিয়া, কক্সবাজার ।
পাঠকের মতামত: