নিজস্ব প্রতিবেদক :: আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কক্সবাজার সদর ও রামু উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বাঁকখালী নদী থেকে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চড়ছে।
অবৈধভাবে বাঁকখালী থেকে বালু উত্তোলনের ধারাবাহিক প্রক্রিয়া যেন কোনভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না। গত ১ বৎসরে বাঁকখালী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে হস্তক্ষেপ করা হয় বেশ কয়েকবার।
এসময় বালু উত্তোলনের ড্রেজার, ডাম্পারও আটক করা হয়। তারপরও অধরা এবং নির্বিঘ্নে বালু উত্তোলন প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে বালু খেকোরা। এনিয়ে উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত বাঁকখালী নদীর আশেপাশে হালচাষ ও ক্ষেত-খামার করা কৃষকরা। অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে।
জানা গেছে, কক্সবাজার শহরের ৬নং ঘাট থেকে সদর উপজেলার খরুলিয়া বাঁকখালীর কুল ঘেঁষে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের প্রভাব বেশি। ওই এলাকায় কোন না কোন স্থানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে রাষ্ট্রীয় এই সম্পদ নষ্ট করছে প্রভাবশালীরা। এসব বালু উত্তোলন করে চড়া দামে বিক্রি করে আসছে বালু খেকোরা। গত বৎসরের ৩০ এপ্রিল পিএমখালীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় ড্রেজার মেশিন জব্দ করে প্রশাসন, ২৯ আগস্টও ঝিলংজার বড়ুয়া পাড়ায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় অভিযান চালানো হয়, ২৪ সেপ্টেম্বর ৬নং ঘাট থেকে বাংলাবাজার ব্রিজ পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ৮টি ড্রেজার মেশিন জব্দ এবং ৪ জনকে ১৫ দিন করে কারাদন্ড দেয়া হয়, ১৭ নভেম্বর খরুলিয়ার পূর্ব মুক্তারকুল বাঁকখালী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় ১টি ড্রেজার মেশিন ও ২টি ট্রাক জব্দ করা হয়।
এদিকে চলতি মাসের ২০ এপ্রিল বাঁকখালী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় ১টি পাইপ ও ১টি ড্রেজার মেশিন ধ্বংস করে প্রশাসন। গত ২২ এপ্রিল খরুলিয়ার বাঁকখালী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় ২টি ড্রেজার মেশিন জব্দ করা হয়। পরের দিন ২৩ এপ্রিল খরুলিয়ার হিন্দু পাড়ার রাস্তার শেষ মাথায় বাঁকখালী থেকে বালু উত্তোলনের সময় ১টি ড্রেজার মেশিন জব্দ ও ২টি ডাম্পার আটক করা হলেও থেমে নেই বালু খেকোদের বালু উত্তোলন প্রক্রিয়া।
খরুলিয়া এলাকার স্থানীয় কৃষকরা জানান, বাঁকখালী নদী থেকে বালু উত্তোলন প্রক্রিয়া সবচেয়ে বেশি হয় খরুলিয়া এলাকায়। প্রতিদিন ওই এলাকার বাঁকখালী নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে বালু খেকোরা। অভিযান পরিচালনাও করা হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে। কিন্তু কোন ভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না অবৈধ বালু উত্তোলন প্রক্রিয়া। বাঁকখালী থেকে বালু উত্তোলনের কারণে নদীর দুই পাড় ভেঙ্গে পড়ছে। তার প্রভাব পড়ছে কৃষকের হালচাষের উপর। অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের ঠেকানো না গেলে অচিরেই কৃষকের নিজেদের ফসলের জমি রক্ষা করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে জানান, স্থানীয় কৃষকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিএমখালী এলাকার একাধিক স্থানীয়রা জানান, বাঁকখালী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীরা খুবই প্রভাবশালী। স্থানীয়রা কেউ প্রতিবাদ করলে বালু উত্তোলনকারীরা হামলা করে এবং বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখায়। এই অবস্থার কারণে বাঁকখালী নদীর সাথে সম্পৃক্ত স্থানীয় অনেকের ফসলি জমি আজ হারাতে বসেছে।
কক্সবাজার সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) নু-এমং মামরা মং জানান, আজও (গতকাল) পিএমখালীতে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলনের সময় অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় চেরাংঘর এলাকা থেকে ১ জনকে হাতে-নাতে আটক করা হয় এবং ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড প্রদান করা হয়। একই এলাকার গোলারপাড়া থেকে ১টি স্ক্যাভেটর আটক করা হয়। এসময় দুস্কৃতিকারীরা খবর পেয়ে স্ক্যাভেটর রেখে পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। আটককৃত স্ক্যাভেটরটি সিলগালা করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের জিম্মায় দেওয়া হয়।
অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের তালিকা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের কাছে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের তালিকা নেই। এগুলো সংশ্লিষ্ট আইন-শৃংখলা বাহিনীর কাছে থাকে। আমরা অভিযোগের ভিত্তিতে নিয়মিত অভিযানগুলো পরিচালনা করি।
আটককৃত ডাম্পার ও ট্রাকগুলো কি করেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এগুলোর মালিকদের বিরুদ্ধে জরিমানা করা হয় এবং অপরাধ গুরুতর হলে মালিকদের জেল দেয়া হয়। আটককৃত ডাম্পার, ট্রাক ও ড্রেজার আনা সম্ভব না হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জরিমানা করে স্থানীয় চেয়ারম্যানের জিম্মায় দেয়া হয়। বাঁকখালী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।
পাঠকের মতামত: