নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার ::
রামিন ইয়ামিন। বয়স ৬ বছর। পড়ে শহরের নাম করা কিন্ডার গার্টেন স্কুলে। নতুন বছরে নতুন বই। তাই বলে প্রথম শ্রেণিতে ৭টি বই। তাকে স্কুল থেকে সরকারি বিনামূল্যের ৩টি বোর্ড বই বাংলা, গনিত এবং ইংরেজী দেওয়ার পর একটি তালিকা ধরিয়ে দিয়ে স্কুল থেকে বলা হয় বাকি ৪টি বই ‘অমুক’ লাইব্রেরী থেকে কিনতে হবে। অমুক বই এর মধ্যে একটিভ ইংলিশ, ওর্য়াড বুক, ড্রইং বই, কম্পিউটার বই রয়েছে । একজন ৬ বছরের শিশুর কাঁেধ ৭টি বই, পেন্সিল বক্্র, পানির বোতল, টিফিনবক্সসহ নানা সরঞ্জাম প্রমান করে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের অবস্থা। তারা কি লেখাপড়া শিখবে নাকি ভয়ে স্কুলে আসবে।সদরের ঝিলংজার ডিককুলের সৌদিয়া প্রবাসি নুরুল হক সন্তানকে ভাল স্কুলে ভর্তি করাতে দেশে এসেছেন। ৩ জানুয়ারি সকালে শহরের গোল দিগিরপাড় সংলগ্ন একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলে সন্তানকে ২য় শ্রেণিতে ভর্তি করাতে গিয়ে অভিজ্ঞতার কথা বর্ণানা দেন-আমার ছেলের বয়স ৮ বছরের কিছু কম। ভর্তির পর তাকে যে বই এর তালিকা দেওয়া হয়েছে তা দেখে আমি হতবাক। এতটুকু ছেলের জন্য ৭টি বই? ছেলেরা পড়বে কি করে পিতার প্রশ্ন।
সরকারি প্রজ্ঞাপন অমান্য করে শুধু শহরের এ দু’টি কিন্ডার গার্টেন স্কুল নয় জেলার ৩২৫টি কেজি স্কুলে এভাবে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের উপর ছাপানো হচ্ছে অতিরিক্ত বইয়ের বোঝা। বইয়ের অতিরিক্ত বোঝার কারনে শিক্ষার্থীরা যেমন স্কুল বিমুখ হচ্ছে তেমনি নানা ধরনের শারীরিক সমস্যায় ভুগছে। শুধুমাত্র ব্যবসায়িক কারনে শিক্ষাকে অতিমাত্রায় বাণিজ্যিকরণের কারনে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের উপর প্রতিবছর বাড়ছে বইয়ের বোঝা।
ন্যাশনাল টেক্সট ক্যারিকুলাম বুক বোর্ডের বিশেষজ্ঞ কমিটি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ৩টি বই এবং তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীর জন্য ৬টি বই সিলোবাসভুক্ত করে পাঠ্যসূচিতে অর্ন্তভূক্ত করেছে। যা চলমান রয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সমুহে। কিন্তু কিন্ডারগার্টেন স্কুল সমুহে র্বোড বই এর পাশাপাশি লাইব্রেরীর মালিকদের সাথে মোটা অংকের চুক্তির বিনিময়ে শিশুদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে অতিরিক্ত বইয়ের বোঝা। ফলে শিক্ষার্থীর ধারন ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে শিখন শিক্ষণ। শুধুমাত্র লাইব্রেরির মালিক এবং পুস্তক ব্যবসায়ি সমিতির নেতাদের কাছে বিক্রি হচ্ছে জেলার নামকরা কিন্ডার গার্টেনের অধ্যক্ষ, শিক্ষক এবং পরিচালনা কমিটি।
ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি মাসে লাইব্রেরির মালিকগণ পকেট ভর্তি টাকা নিয়ে র্ধণা দেয় কেজি স্কুলের অধ্যক্ষদের কাছে। অনেক স্কুলের অধ্যক্ষগণ দর কষাকষির মাধ্যমে লাইব্রেরির মালিকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে পাঠ্যসূচিতে অর্ন্তভূক্ত করে এ সব অখ্যাত প্রকাশনার অতিরিক্ত বই। শুধুমাত্র অতিরিক্ত টাকার লোভে শিক্ষাকে ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দুতে পৌছে দিয়ে শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য বিনষ্টকারিদের বিষয়ে সচেতন হওয়া সময়ের দাবি।
বোর্ড প্রণীত পাঠ্যবই ব্যতিত অতিরিক্ত বিভিন্ন প্রকাশনার বই কতটুকু শিক্ষার্থীর জন্য জরুরি এ ব্যাপারে জেলার শিক্ষাবীদ কক্সবাজার সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর এমএ বারি বলেন-সরকার অনেক পরীক্ষা নীরিক্ষা করে শিক্ষা বিশারদ নিয়ে প্যানেল করে বোর্ড বই প্রনয়ন করেছেন। সুতরাং প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীর জন্য ৩টি বই যথার্ত। এরবেশি বই কোনমতেই প্রযোজ্য নয়। ৬ বছরের শিশু শিক্ষার্থীকে তো রাতারাতি আইনস্টাইন বানানো যাবেনা। যদি তা করা হয় শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে।
সরকার শিশুর ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ি বোর্ড বইগুলো পাঠে অর্ন্তভূক্ত করে থাকেন। ফলে অতিরিক্ত বই ছাপিয়ে দিয়ে শিশুকে মানুষিক নির্যাতন করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে অভিভাবকগণকে সচেতন হতে হবে। বুঝতে হবে কোমলমনে তার কি প্রভাব পড়ে। সরকারি বোর্ড বইয়ের বাইরে অন্য কোন বই পড়ানোর ব্যাপারে কোন নির্দেশনা আছে কিনা এবং তা শিক্ষার্থীদের জন্য কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ সে বিষয়ে জানতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ শফিউল আলম এর কাছে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন- প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গত ১৫ দিন আগে সরাসরি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে কোন সরকারি, বেসরকারি, স্বায়িত্বশাসিত স্কুল বিশেষ করে কিন্ডারগার্টেন স্কুলসমুহে বোর্ড বই ছাড়া অন্যকোন বই পড়ানো যাবেনা।
এ ব্যাপারে প্রতিটি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যাতে কোন বিদ্যালয়ে বোর্ড বই ব্যতিত অন্যকোন বই সিলেবাসভুক্ত করে পড়ানো না হয়। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কোন মতেই অতিরিক্ত বইয়ের বোঝা ছাপানো যাবেনা। আমরা শিগ্রই এ ব্যাপারে মাঠে নামব যাতে করে সরকারি বোর্ড বই ছাড়া অন্যকোন বই পড়ানো না হয়। সরকারি নির্দেশনা না মানলে উক্ত স্কুলসমুহ চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
কতিপয় শিক্ষা ব্যবসায়ি এবং অসাধু লাইব্রেরির মালিকদের আথির্ক লোভের কারনে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বলি হচ্ছে। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অনুমোদিত বই ছাড়া অতিরিক্ত বই ছাপিয়ে দেওয়া স্কুল সমুহ চিহ্নিত করে চলতি মাসের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। কালক্ষেপণ হলে চরম ক্ষতির সম্মুখিন হবে শিক্ষার্থী-অভিভাবকগণ। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের তড়িৎ হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতনমহল।
পাঠকের মতামত: