ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

পেকুয়ায় ২০১৯ সালে ধর্ষণ ১৪, হত্যা ৬ আর বন্দুকযুদ্ধ ৩

পেকুয়া প্রতিনিধি ::  কক্সবাজারের পেকুয়ার জন্য ২০১৯ বছরটি ছিল খুব ভয়াবহ। ধর্ষণ, হত্যা, অপহরণ আর বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় আতংকের মধ্যে ছিল উপকূলের সাধারণ জনগণ। থানা ও তথ্য সূত্রে জানা গেছে, গত ১বছরে ধর্ষণের শিকার হয়েছে বিধবা নারী, স্কুল ছাত্রী ও শিশুসহ ১৪জন, দুই পক্ষে সংঘর্ষ, পিটিয়ে হত্যা ও অপহরণ করে হত্যার শিকার হয়েছেন শিশুসহ ৬জন আর বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন ৪জন। পেকুয়া থানা প্রশাসন এ সমস্ত ঘটনা সংঘঠিত হওয়ার সাথে সাথে মামলা রুজু ও আসামীদের আটক করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নেন। একপর্যায়ে পুলিশের অব্যাহত অভিযানে স্বীকৃত অপরাধীরা পুলিশের হাতে আটক ও নিহত হয়। ডাকাত, জলদস্যুরা আর সন্ত্রাসীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিগত ২০১৯ সালে ১৯ মে পেকুয়া সদর ইউনিয়নের সিকদার পাড়ায় ধর্ষণের পর আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় এক শিশু। এ ঘটনায় পেকুয়া থানা পুলিশ একই এলাকার চাঁদ মিয়ার ছেলে মোঃ ছোটনকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। ১ জুলাই সদর ইউনিয়নের সাবেকগুলধি এলাকায় প্রবাসীর কিশোরী মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে একই এলাকার জসিম উদ্দিনের ছেলে মোঃ জোনাইদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৯জুলাই গার্মেন্টস কর্মীকে ধর্ষণের অভিযোগে রাজাখালী ইউনিয়নের বদিউদ্দিন পাড়ার শফি আলমের ছেলে সালাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একই ইউনিয়নের পালাকাটা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ২৬জুলাই পেকুয়া সদর ইউনিয়নের ছড়াপাড়া এলাকার ৭ম শ্রেনীর এক স্কুল ছাত্রীকে অপহরণপূর্বক ধর্ষণ করা হয়। ৩০ জুলাই ওই অভিযোগে শিলখালী ইউনিয়নের বাজার পাড়ার আহমদ হোসেনের ছেলে আকিবুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। ১৪ আগষ্ট পেকুয়া সদর ইউনিয়নের পূর্ব গোয়াখালী এলাকায় ধর্ষণের শিকার হয়ে এক নারী আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। এ ঘটনায় ২৬ আগষ্ট একই এলাকার নাসির উদ্দিনের ছেলে সোহেলকে আসামী করে মামলা দায়ের করে পরিবার। ২২ আগষ্ট পেকুয়া সদর ইউনিয়নের উত্তর পাড়ায় স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণ করে দুই যুবক।

এ ঘটনায় পুলিশ আরমান ও খোরশেদ নামের দুই যুবককে গ্রেপ্তার করে। ১৬ সেপ্টেম্বর পেকুয়া সদর ভোলাইয়্যাঘোনায় এক যুবতীকে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ করে অন্তঃস্বত্তা করে মমতাজ নামের এক যুবক। পুলিশ একই দিনে দেলোয়ার হোসেনের ছেলে মমতাজকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। ১৮ সেপ্টেম্বর শিলখালী ইউনিয়নের জারুলবুনিয়া এলাকায় বিধবাসহ দুই নারীকে গণধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় একই এলাকার আলী হোসেনের ছেলে আলাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২০ সেপ্টেম্বর সদর ইউনিয়নের পূর্ব বাইম্যাখালী এলাকায় ২য় শ্রেনীর ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা রুজু হয়। আসামী করা হয় একই এলাকার নুরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে। ২৮ সেপ্টেম্বর উজানটিয়া ইউনিয়নের নতুন পাড়ায় চার সন্তানের জনক কর্তৃক মাদ্রাসা ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। ১৭ অক্টোবর টইটং ইউনিয়নের ধনিয়াকাটা এলাকায় কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে ৩জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৩নভেম্বর মগনামা ইউনিয়নের মধ্য মগনামা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরী মোঃ ইউছুফ কর্তৃক একই স্কুলের ৩য় শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা রুজু হয়েছে। পুলিশ এখন পর্যন্ত অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। ২১ নভেম্বর মাদ্রাসা ছাত্রী আয়েশাকে ধর্ষণ পরবর্তি হত্যার অভিযোগ রয়েছে ফারুক নামের এক যুবকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় দুই মহিলা আটক হলেও অভিযুক্ত ফারুক এখনো গ্রেপ্তার হয়নি।

২৩ ফেব্রুয়ারী পেকুয়া সদর ইউনিয়নের বিলহাচুরা এলাকায় জমি বিরোধের জের ধরে দুইপক্ষের গোলাগুলিতে নেজাম উদ্দিন ও আজিজুল হক নামের দুই যুবক ঘটনাস্থলে নিহত হয়। অস্ত্রও উদ্ধার করে পুলিশ। মামলার আসামীরা কেউ জেলে রয়েছে আবার কেউ জামিনে মুক্ত রয়েছে। ২৩ জুলাই উজানটিয়া ইউনিয়নের করিয়ারদিয়া এলাকায় গৃহবধু জেনুয়ারা বেগমকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ রয়েছে স্বামী মোঃ রিদুয়ান এর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় স্বামী ও শ^াশুড়ী গ্রেপ্তার হয়ে জেল হাজতে রয়েছে। ২০ অক্টোবর মগনামা ইউনিয়নের দরদীঘোনা এলাকায় শিশু আরফাতকে মুক্তিপণের জন্য অপরহণপূর্বক হত্যা করে রায়হান ও মানিক নামের দুই কিশোর। হত্যাকারীরা পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার হয়ে জেল হাজতে রয়েছে। ২০ অক্টোবর সদরের বখসোচকিদার পাড়ায় হাজেরা বেগম নামের এক গৃহবধুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। হত্যার অভিযোগ তুলে পিতার পরিবার আদালতে মামলা দায়ের করেন। ২২ নভেম্বর মাদ্রাসা ছাত্রী আয়েশাকে হত্যা করে লাশটি বস্তাবন্দি করে রাস্তার ধারে পেলে যায় ফারুক নামের এক যুবক ও তার সহযোগীরা। এ ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত ঘাতক ফারুককে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় চারজন। ২৭মার্চ র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে ২জলদস্যু নিহত হয়। ২০ আগষ্ট র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে বাদশা নামের এক জলদস্যু নিহত হয়। ১৯ নভেম্বর টইটংয়ের গুলিকাটা এলাকায় ডাকাতদলের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে ডাকাত আলম নিহত হয়। নিহত আলম রাজাখালী ইউনিয়নের বদিউদ্দিন পাড়ার আবুল হোসেনের ছেলে।

পেকুয়ায় হত্যা, ধর্ষণ আর অপহণের ঘটনা অব্যাহত থাকায় ওসি জাকির হোসেন ভুইয়াকে বদলী করে কামরুল আজমকে স্থলাভিষিক্ত করা হয়। গত ৪মাস আগে তিনি ওসি হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর মাদক, ডাকাত আর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হয়। নিহত হয় শীর্ষ ডাকাত আলম। কমিয়ে আসে অপরাধ কর্মকান্ড। মাদক কারবারিরা আটক ও এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। পেকুয়া থানাকে সেবা কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলে। আইন শৃংখলার ব্যাপক উন্নতি হয়। গঠন করা হয় কমিউনিটি পুলিশ ও বিট পুলিশ। প্রতিটি ইউনিয়নের শুরু করে মতবিনিময়। তার এ কর্মকান্ডে এলাকাবাসী সাধুবাদ জানিয়েছেন।

ওসি কামরুল আজম বলেন, আমি যোগদানের আগে পেকুয়ার পরিস্থিতি খুব খারাপ অবস্থায় ছিল। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজ ও এলাকাবাসীদের সাথে পরামর্শ করে আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তদন্ত মিজানুর রহমানকে নিয়ে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করি। থানাকে সেবা কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলেছি এখন। মামলা করতে কোন টাকা নেওয়া হয়না। দালাল মুক্ত করা হয়েছে। ভুক্তভোগীরা এখন সরাসরি থানায় অভিযোগ দিতে আসেন। থানার অবকাঠামোও পরিবর্তন করা হয়েছে। সকলের দোয়ায় জেলার সেরা থানা হিসাবে পেকুয়া থানাকে প্রতিষ্টা করতে চাই।

পাঠকের মতামত: