নিজস্ব প্রতিবেদক :: কক্সবাজারের পেকুয়ায় বহুল আলোচিত ত্রাণের ১৫ টন চাল আত্মসাতের ঘটনায় বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে হাজিরা দিয়েছেন পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাঈকা সাহাদাত সহ বেশ কয়েকজন।
তবে নোটিশ পেলেও এতে সাড়া দেননি সাময়িক বহিষ্কৃত টইটং ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী।
তার ঘনিষ্টজনরা বলছেন, গ্রেপ্তারের আশংকা থেকেই চেয়ারম্যান জাহেদ বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে হাজিরা দেননি।
এদিকে সরকারি কাজে ব্যস্ত থাকায় শুনানিতে উপস্থিত থাকতে পারেননি কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আশরাফুল আফসারও। তবে তিনি একটি লিখিত জবাব পাঠিয়েছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, পেকুয়া উপজেলার টইটং ইউনিয়নের বরাদ্দকৃত ত্রানেল চাল আত্মসাতের ঘটনায় অধিকতর শুনানির জন্য তদন্ত কমিটির বিগত ৪ মের তদন্ত কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের গৃহীত বক্তব্য এবং প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত সমূহের কতিপয় বিষয়াদি সুষ্পষ্টীকরণের জন্য গত রবিবার (১০ মে) পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ ৯ জনকে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে তলব করা হয়।
রবিবারের শুনানিতে অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তদন্ত কমিটি ত্রাণের চাল আত্মসাতের বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয়ে তাদের কাছে জিজ্ঞেস করেছেন।
তারা জানান, অন্যান্যদের সাথে শুনানি শেষ করে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে আধাঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছে তদন্ত কমিটি।
তবে এ প্রসঙ্গে মিডিয়ায় বক্তব্য দিতে চাননি কেউই।
অংশ নেওয়াদের অনেকে বলেছেন তদন্তাধীন বিষয়ে তারা যেন মিডিয়ায় কোনো কথা না বলেন সেজন্য তদন্ত কমিটি তাদের সাবধান করে দিয়েছেন।
এদিকে ওই শুনানিতে হাই প্রোফাইল ব্যক্তিদের সাথে পিআইও অফিসের একজন কার্য সহকারী ও উপজেলা ভূমি অফিসের একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মীকে বিভাগীয় কমিশনার অফিসে কেন ডাকা হয়েছে তা নিয়ে নানা কানাঘুষা শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে টইটং ইউপি সচিব আবদুল আলিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাদের কাছে ১৫ মেট্রিক টন চালের বিষয়ে খুঁটিনাটি অনেক বিষয় জানতে চাওয়া হয়েছে। আমি আমার আগের বক্তব্যই উপস্থাপন করেছি। যা ঘটেছে এবং যা দেখেছি তাই বলেছি।”
শুনানিতে অংশ নেওয়া পেকুয়ার সাবেক প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সুভ্রাত দাশ বলেন, “উপজেলা নির্বাহী অফিসার ম্যাডাম সহ আমরা মোট ৭ জন শুনানিতে অংশ নিয়েছি। তদন্তাধীন বিষয়ে আমাদেরকে মিডিয়ায় বক্তব্য দিতে নিষেধ করা হয়েছে।”
এ বিষয়ে জানতে পেকুয়ার বর্তমান প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও আলোচিত ত্রাণের চাল আত্মসাত মামলার বাদী আমিনুল ইসলাম, আলোচিত ১৫ টন ত্রাণের চালের ট্যাগ অফিসার কামাল পাশা ও পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে টেলিফোনে বহুবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, পেকুয়া উপজেলা প্রশাসন থেকে গত ৩১ মার্চ টৈটং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীর নামে বরাদ্দকৃত ১৫ টন ত্রাণের চাল আত্মসাতের অভিযোগে এনে গত ২৮ এপ্রিল পেকুয়ার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে পেকুয়া থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
পরদিন ২৯ এপ্রিল স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এক আদেশে জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীকে ত্রাণের চাল আত্মসাতের দায়ে চেয়ারম্যানের পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।
৩০ এপ্রিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পদ থেকেও একই কারণে বহিষ্কার করা হয় তাকে।
ওইদিনই একই ঘটনার রেশ ধরে পেকুয়ার ইউএনও সাঈকা সাহাদাতকে বদলি করে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়। আবার ১ মে তার বদলি আদেশ স্থগিত করা হয়।
পরে এ ঘটনা তদন্তে চট্টগ্রাম স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) দীপক চক্রবর্তীকে আহ্বায়ক, কক্সবাজার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক শ্রাবন্তি রায় ও কক্সবাজার জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল আলমকে সদস্য করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
পরবর্তীতে গত ৪ মে উক্ত কমিটি পেকুয়া উপজেলা পরিষদে এ বিষয়ে দিনভর শুনানি শেষে ৩৬ জনের সাক্ষ্য নেয়।
সর্বশেষ গতকাল রবিবার (১০ মে) পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ ৯ জনকে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে অধিকতর শুনানির জন্য তলব করা হয়েছে।
পাঠকের মতামত: