ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

পেকুয়ায় মুজিববর্ষের ২৫টি ঘর নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি!

মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া :: ‘মুজিববর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না’ বর্তমান সরকারের এই মহৎ উদ্যোগ ও অঙ্গীকার বাস্তবায়নে কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য উপজেলা প্রশাসন ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নিলেও তাতে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। বিশেষ করে উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের মটকাভাঙ্গা ও শরৎঘোনা এলাকায় ২৫টি ঘর নির্মাণে চলমান কাজে ঠিকাদার ছৈয়দ আলমের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ঘর নির্মাণের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ঠিকাদার চকরিয়া উপজেলার পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের ঈদমনি এলাকার ছাবের আহমদের পুত্র। অপরদিকে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে মগনামা ইউনিয়নের দুইটি গ্রামে ২৫টি মুজিব বর্ষের ঘর নির্মাণের কাজ চালিয়ে গেলেও অভিযুক্ত ঠিকাদারের বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারণে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করছেনা পেকুয়া উপজেলা প্রশাসন ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের মটকাভাঙ্গা গ্রামে ১৫টি ঘর মির্মাণ করা হচ্ছে ভোলা খালের চরে। প্রবাহমান খালের চরে ঘর নির্মাণ করায় গাইডওয়ালও দেওয়া হচ্ছে। তবে প্রবাহমান ভোলা খালের চরে ঘর নির্মাণ করায় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানি বেড়ে গেলে নির্মিত ঘরগুলোর একাংশ খালে তলিয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। ঘর নির্মাণে অতি নিম্নমানের কাঠ, কংকর, ইট, সিমেন্ট ও বালি ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে কাজ বাস্তবায়নকারী ঠিকাদার ছৈয়দ আলমের বিরুদ্ধে। এছাড়াও মগনামা ইউনিয়নের শরৎঘোনা গ্রামে নির্মিত ঘর নির্মাণেও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এখানে নিম্নমানের নির্র্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে।

এ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত ঠিকাদার ছৈয়দ আলম বলেন, প্রতিটি ঘর তিনি ইউএনও’র কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকা কন্ট্রাক করে তিনি নির্মাণ কাজ করে দিচ্ছেন। ঘর নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু ইট নিম্নমানের ছিল। সেগুলো পরে পরিবর্তন করা হয়েছে। তিনি উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশ মোতাবেক যথাযথভাবে কাজ করছেন। ঘর নির্মাণে কোন ধরনের অনিয়ম হচ্ছেনা বলে তিনি দাবি করেছেন।

তবে, স্থানীয়দের অভিযোগ, মগনামা ইউনিয়নের শরৎঘোনায় নির্মাণ কাজ চলমান থাকা ১০টি ঘর তৈরীর কাজে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার অত্যন্ত নিম্নমানের ইট, বালি, কংকর, সিমেন্ট ব্যবহার করে ঘরগুলো তৈরী করছেন। এছাড়াও মগনামা ইউনিয়নে ঘর বিতরণের জন্য প্রস্তুতকৃত উপকারভোগীদের তালিকা তৈরীতেও ব্যাপক স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। একাধিক উপকারভোগীদের বসবাসের জন্য ঘর ও জমি থাকলেও তাদের মুজিব বর্ষের ঘর দেওয়ার জন্য তালিকায় নাম অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে। যাহা কক্সবাজার জেলা প্রশাসন উপজেলা প্রশাসনের প্রস্তুতকৃত উপকারভোগীদের তালিকা সরেজমিনে যাচাই-বাচাই করলে অনিয়মের সত্যতা পাওয়া যাবে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয়রা।

জানা যায়, মুজিববর্ষের ঘরে ভালো মানের ইট-সিমেন্ট ব্যবহার করার জন্য সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন সরকারী কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা থাকলেও মগনামা দুইটি গ্রামে ঘর নির্মাণে নিম্নমানের ইট ও কংকর ব্যবহারের পাশাপাশি বেশি পরিমাণে বালু ব্যবহার করা হচ্ছে। সিমেন্টও কম দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ভালো কোম্পানির সিমেন্টও ব্যবহার করা হয়নি। এ বিষয়ে কর্মরত শ্রমিকদের কাছে অনিয়মের কথা জানতে চাইলে তারা ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

মগনামা ইউনিয়নের বাসিন্দা আলা উদ্দিন অভিযোগ করে জানান, প্রবাহমান ভোলা খালের চরে মটকাভাঙ্গা গ্রামে মুজিববর্ষের ঘর বানানো হয়েছে। ফলে ভোলা খালের চরে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানি বেড়ে গেলে ঘরগুলোর একাংশ তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এরফলে সরকারের মহৎ উদ্দেশ্য বৃথা যাবে।

এদিকে নিম্নমানের কাজের অভিযোগ অস্বীকার করে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূর্বিতা চাকমা বলেন, মগনামা ইউনিয়নের মটকাভাঙ্গা ও শরৎঘোনা গ্রামে মুজিব বর্ষের ঘর নির্মাণে কোন ধরনের অনিয়ম করা হচ্ছেনা। মান ঠিক রেখেই কাজ করা হচ্ছে।

 

পাঠকের মতামত: