ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

পেকুয়ায় মগনামা ইউপি নির্বাচনে নৌকায় ভোট পড়ল মাত্র ১৪৫টি !

নিউজ ডেস্ক ::
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে। ৬টি ইউপির মধ্যে ৪টিতেই বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন। মাত্র ১টিতে নৌকা বিজয়ী হয়েছে। ১টি ইউনিয়নের নির্বাচনী ফলাফল স্থগিত রয়েছে। রবিবার রাতেই ৬ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ীদের ফলাফল ঘোষণা করেছে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়।

তবে রবিবারের ইউপি নির্বাচনে পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়ন অলোচনায় এসেছে অন্য একটি কারণে। নির্বাচনে এ ইউনিয়নে সরকারী দল আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে ভোট পড়েছে মাত্র ১৪৫টি। ভোটের এমন ফল দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।

এ ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতিকের চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন মগনামা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো: নাজেম উদ্দিন। সরকার দলীয় প্রার্থীর এমন ফলাফলে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

জানা যায়, রবিবার জেলার ১৬টি ইউনিয়নের মতো পেকুয়ার মগনামা ইউনিয়নেও মোট ৯টি কেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হয়। এ ইউনিয়নে মোট ভোটার ছিল ১৪ হাজার ৪৬৮টি। আর কাস্ট হয়েছে ১১ হাজার ১৯৪টি। তবে ১৪৯টি ভোট বাতিল হয়। এর মধ্যে মাত্র ২৫ ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত ঢোল প্রতিকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউনুছ চৌধুরী পেয়েছেন ৫ হাজার ২৭০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি অপর স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মোটর সাইকেল প্রতিকের শারাফত উল্লাহ পেয়েছেন ৫ হাজার ২৪৫ ভোট।

তৃতীয় হন অটোরিক্সা প্রার্থী মো: মাে. নুরুল আমিন পেয়েছেন ৩১৩ ভোট। আর চতুর্থ হওেয়া আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতিকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো: নাজেম উদ্দিন পেয়েছেন মাত্র ১৪৫ ভোট। এছাড়া জাতীয় পাটির লাঙ্গল প্রতিকের মোঃ আলমগীর পেয়েছেন ৪৬ ভোট এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ হাত পাখা প্রতিকের মােহাম্মদ ইউসুফ পেয়েছেন ৩৯ ভোট।

এছাড়া শহীদুল মােস্তফা পেয়েছেন ২০ ভোট, গিয়াসউদ্দিন পেয়েছেন ৩৪ ভোট, শাহেদুল ইসলাম পেয়েছেন ৩০ ভোট, রিয়াজুল করিম পেয়েছেন ১৫ ভোট, তৌহিদুল আলম নুরী পেয়েছেন ৩১ ভোট এবং মোজাম্মেল হোসাইন পেয়েছেন ০৬ ভোট।

আওয়ামী লীগের এমন লজ্জাজন ফলাফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। এদের মধ্যে –

সৈয়দ ইকবাল মুক্তা লিখেছেন “অবিলম্বে মগনামা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগসহ সকল সহযোগী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত করার দাবী জানিয়েছেন। অনেকে আবার লিখেছেন অযোগ্য লোককে যারা নৌকা দিয়েছে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হোক।”

মনসুর আলম নামে একজন লিখেছেন “আমি সহযোগী সংগঠনের প্রতিনিধি হিসেবে মিছিল মিটিংএ আমার ও আমার সহকর্মীদের সরব উপস্থিতি ছিলো। আমার জায়গা থেকে যতটুক পারি চেষ্টা করেছি। আমরা দুয়েকজন নেতা ব্যতীত কেউ ছিলোনা নৌকার পক্ষে। এমনভাবে বিপর্যয় হওয়ার পিছনে অনেক কারণ আছে ।”

রুদ্র সাজেদুল করিম লিখেছেন “আমি একজন আওয়ামী লীগের কর্মী হিসাবে লজ্জিত।যিনি নৌকা নিবার্চন করেছেন, ওনি ওয়াসিমের টাকা খেয়ে খেয়ে পেট বড় করছেন।

উম্মে হাবিবা সমর্থক গোষ্ঠী লিখেছে “ অযোগ্য লোককে যারা নৌকা দিয়েছে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হোক।”

রুদ্র সাজেদুল করিম লিখেছেন “সেটাও বেশি পাইছে”

জেলা আওয়ামী লীগ নেতা রাশেদুল ইসলাম লিখেছেন “মগনামা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের এমন শোচনীয় পরাজয়ের দায় কার?”

এ ব্যপারে নৌকার প্রার্থীর এজন্টের নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মগনামা ইউনিয়নে ভোট শুরুর আগে থেকেই আওয়ামী লীগসহ সকল সহযোগী সংগঠনের মধ্যে কোন শৃঙ্খলা ছিল না ।কেউ কারা কথা শোনেনি। জেলার নেতারা এ ইউনিয়নের ভোট নিয়ে তেমন চিন্তিত ছিলেন। অনেকে দলীয় প্রতিক না পাওয়ায় মুখ ফিরিয়ে নেন। অনেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে নৌকার পক্ষে মাঠেই নামেনি।এছাঢ়া বিএনপি ও জামাতের লোকেরাও নৌকার পরাজয়ে ভুমিকা রাখে। সবকিছু মিলিয়ে নৌকার ভরাডুবি হওয়াটা এক প্রকার নিশ্চিত ছিলো। কিন্তু এত কম ভোটে হারবে তা কল্পনা করিনি।

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূর্বিতা চাকমা বলেন, প্রশাসন সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণ আয়োজনের জন্য।

পাঠকের মতামত: