ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

পেকুয়ায় কিশোর-কিশোরী ক্লাবের নাস্তার টাকা হরিলুট!

মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া ::  কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার ৭ইউনিয়নে সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত কিশোর-কিশোরী ক্লাবগুলোতে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বরাদ্ধ হরিলুট চলছে! কয়েখ বছর ধরে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে কিশোর-কিশোরী ক্লাবসমুহ পরিচালিত হলেও অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে কোন ধরনের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সৃজনশীল এবং সাস্কৃতিক কর্মকান্ডে সমাজের বিভিন্ন স্তরের কিশোর-কিশোরীদের সম্পৃক্ত করাসহ নির্যাতন, বাল্যবিবাহ ও মাদক প্রতিরোধ এবং প্রজনন স্বাস্থ্য ইত্যাদি বিষয়ে সচেতন করা সরকারি এ প্রল্পের উদ্দেশ্য। কিন্তু নানা অব্যবস্থাপনায় ক্লাব থেকে মুখ আগ্রহ হারাচ্ছে কিশোর-কিশোরীরা। পেকুয়া উপজেলার সাত ইউনিয়নের ৭টি ক্লাবের প্রশিক্ষণার্থীদের প্রতিদিনের নাশতার জন্য ৩০টাকা বরাদ্দ থাকলেও দেওয়া হচ্ছে ১০/১৫ টাকার নাশতা! ক্লাব পরিচালনায় কোন নিয়মই মানা হচ্ছেনা পেকুয়ায়। পেকুয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ে কর্মরত প্রশিক্ষক জাকের হোছাইন গত তিন বছর ধরে কিশোর-কিশোরী ক্লাবের জন্য অধিদপ্তর থেকে বরাদ্ধ আসা সরকারী অর্থ ব্যয় দেখিয়ে ভূল ভাউচার তৈরী করে আত্মসাত করছেন। এ প্রতিবেদকের মাঠ পর্যায়ের অনুসন্ধানে জাকের হোছাইনের এমনি চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠে এসেছে। এছাড়াও পেকুয়ার ৭টি ক্লাব কমিটির জন্য বছরে দুই বার ৩৬০০ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হলেও তাও কমিটির জন্য খরচ না করে উপজেলা প্রশিক্ষক জাকির হোছাইন নিজের পকেটে ভরেছেন।

জানা যায়, ১০-১৯ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে পোকুয়া উপজেলার ৭ইউনিয়নের ৭টি ক্লাব গঠন করা হয়। কিশোর-কিশোরী ক্লাব পরিচালনায় রয়েছে গরমিল। সপ্তাহের প্রতি শুক্র ও শনিবার ক্লাবগুলোতে সংগীত, আবৃত্তি, কারাতে ক্লাস হয়ে থাকে। কিন্তু শিক্ষকরা সময়মতো ক্লাসে না যাওয়া এবং প্রশিক্ষণার্থীদের নাশতার জন্য জনপ্রতি সরকারি বরাদ্দের ৩০টাকার পরিবর্তে ১০/১৫টাকার নাশতা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া বেশিরভাগ ক্লাবে দক্ষ শিক্ষক না থাকায় আগ্রহ হারাচ্ছে ক্লাবের সদস্যরা। এমনকি কোনো কোনো ক্লাব বন্ধ থাকে। প্রতি ক্লাবের সদস্য সংখ্যা ৩০জন হলেও অনেক ক্লাবেই মাত্র ১০/১৫ জনের উপস্থিতি দেখা যায়। অনুপস্থিত ১৫জনের নাশতার বিলের টাকা লোপাট করা হচ্ছে।

ক্লাবে যন্ত্রপাতির জন্য প্রতি বছর ৫হাজার, শিক্ষকদের দৈনিক ভিত্তিতে ভাতা ৫০০ এবং কিশোর-কিশোরীদের নাশতা বাবদ প্রতিমাসে পেকুয়া উপজেলার ৭টি ক্লাবের জন্য ৬লাখ৮০ হাজার ৪০০টাকা সরকার বরাদ্দ দিয়ে আসছে। কিন্তু বিভিন্ন ক্লাব ঘুরে ১০/ে১৫ জন সদস্যের উপস্থিতি দেখা যায়। তাও আবার ক্লাব প্রতি ৩০জনকে ৩০টাকার নাশতার বদলে ১০-১৫ জনকে দেওয়া হয় ১০-১৫টাকার নাশতা। অবশিষ্ট অর্থ কোথায় যাচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। এভাবে লাখ লাখ টাকা গত তিন বছর ধরে নিজের পকেটে ভরছে পেকুয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ে কর্মরত প্রশিক্ষক মো: জাকের হোছাইন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে জাকের হোছাইনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পেকুয়া উপজেলার ৭ইউনিয়নের ৭টি কিশোর-কিশোরী ক্লাবের কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। নাশতার টাকা লোপাটে তার সম্পৃক্ততার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন ধরনের সদুত্তর দিতে পারেনি।

ক্লাবের একাধিক সদস্যরা এ প্রতিবেদককে বলেন, তারা ক্লাবের সদস্য হলেও কোনো কিছুই ভালোভাবে শিখতে পারছেন না। সময়মতো শিক্ষকরা ক্লাসে আসেন না। এছাড়া শিক্ষকদের অবহেলার কারণে অনেক সদস্য ক্লাবে আসতে চায় না। দিন দিন আগ্রহ কমে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কিশোর-কিশোরী ক্লাবের জেন্ডার প্রমোটর তসলিমা বলেন, ক্লাবে নাশতার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ক্লাবের শিক্ষক ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসের প্রশিক্ষক জাকের হোছাইন সমন্বয় করেন। এখানে আমার সম্পৃক্ততা নাই।

আমরা পেকুয়াবাসী সংগঠনের মহাসচিব মাহমুদুল করিম বলেন, ‘নানা খারাপ কাজ থেকে শিক্ষার্থীদের দূরে রাখতে সরকারের একটি মহৎ উদ্যোগ এ ক্লাব। কিন্তু বেশিরভাগ ক্লাবে সদস্যদের উপস্থিতি কম ও দক্ষ শিক্ষক নেই। এ কারণে সরকারের উদ্দেশ্য ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ক্লাসে উপস্থিতি ও নাশতা ঠিকমতো দেওয়া হচ্ছে কি না, তা তদারকি করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কিশোর-কিশোরী ক্লাবের কক্সবাজার জেলার ফিল্ড সুপারভাইজার রণি মল্লিক বলেন, বিভিন্ন বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কিশোর-কিশোরী ক্লাবগুলো কাজ করে যাচ্ছে। পেকুয়ার ৭টি ক্লাবে অনিয়মের বিষয়টি আমি অবগত রয়েছি। এখন থেকে নিয়মিত মনিটরিং করা হবে। ক্লাব পরিচালনায় অনিয়ম হলে অবশ্যই জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

পাঠকের মতামত: