ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

পেকুয়ায় ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে বেপরোয়া কানফুল বাহিনী ও হত্যা মামলার আসামীরা!

পেকুয়া প্রতিনিধি :: কক্সবাজারের পেকুয়ায় আসন্ন ৩য় ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২৮ নভেম্বর। এ  নির্বাচনে প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক না পেলেও ব্যাপকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য থানা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইউনিয়ন ভিক্তিক সকল প্রার্থীদের সাথে সাক্ষাত শুরু করেছেন পুলিশ পরিদর্শক শেখ মুহাম্মদ আলী।

এছাড়াও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকেও নেয়া হচ্ছে সকল প্রস্তুতি। তবে নির্বাচনকে ঘিরে ইউনিয়নের শীর্ষ সন্ত্রাসীরা মাঠে নেমে পড়েছে নির্বাচনী পরিবেশ অশান্ত করতে। এছাড়াও তাদের চুক্তি করা

প্রার্থীর কাছ থেকে উৎকোচ নিয়ে হুমকি দিচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের। এমন অভিযোগ করেছেন বেশ কয়েকজন চেয়ারম্যান প্রার্থী। সংকিত রয়েছে কর্মী সমর্থক ও সাধারণ ভোটার।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আসন্ন ২৮ নভেম্বরের নির্বাচনে মগনামা ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান পদে বাংলাদেশ আ’লীগের মনোনীত প্রার্থী নাজিম উদ্দিন, স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ চৌধুরী ওয়াসিম ও  সদ্য জয়নাল হত্যাসহ বহু মামলার অন্যতম আসামী (বর্তমান কারাগারে) ইউনুছ চৌধুরীসহ আরো বেশ কয়েকজন নির্বাচনের মাঠে রয়েছে। এ ইউনিয়নের স্থানীয় ভোটারগণ বর্তমানে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করলেও অজানা এক আতংকের মধ্যে দিনাপাত করছেন।

বর্তমানে নৌকার মনোনীত প্রার্থী শান্তিপূর্ণভাবে ভোটের প্রচারণা চালাতে গিয়ে সাধারণ জনগণকে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য আশ্বস্ত করলেও বহু মামলার আসামী সদ্য জয়নাল হত্যা মামলার পরিকল্পনাকারী ইউনুছ চৌধুরীর হাতে গড়া কানফুল বাহিনীর প্রধান দিদার, সেকেন্ড-ইন কমান্ড মোঃ ছাদেক, হত্যা অপহরণ ও চাঁদাবাজির ঘটনায় ভাড়াটি সন্ত্রাসী হিসেবে ব্যবহার হওয়া মোঃ ছাদেক, চান্দার পাড়ার মুন্সি মিয়ার ছেলে এলাকার ত্রাস হিসেবে পরিচিত আছাব নবী ও আবুল হোসেন, শুদ্ধাখালী পাড়ার আজিজুর রহমানের ছেলে আনোয়ার, কোদাইল্যাদিয়া এলাকার নুরুল আমিন, নুন্যার পাড়ার মানিক ও সালাউদ্দিনসহ একদল সন্ত্রাসী নির্বাচনী পরিবেশকে অশান্ত করার চেষ্টা করতেছে। এছাড়াও জয়নাল হত্যা মামলার অন্যতম আসামী শীর্ষ সন্ত্রাসী ডাকাত আবু ছৈয়দ, পুড়া বদর ছেলে সদ্য আনসার বাহিনী থেকে বহিষ্কার মোঃ মোজাম্মেল, মৃত আবদুল মালেকের ছেলে ছাত্রদলের নেতা জিয়াউর রহমানসহ শীর্ষ সন্ত্রাসী শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ অশান্ত করার প্রয়াস চালাচ্ছেন।

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, বর্তমানে কারাগারে বসে নির্বাচনী পরিবেশ বানচাল করার জন্য মগনামার শীর্ষ অপরাধীদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। করোনার সময় কারাগারে আসামীদের সাথে পরিবারের লোকজনের সাথে মানবিকভাবে যোগাযোগের সুবিধার্থে মুঠোফোনের মাধ্যমে সাময়িকের জন্য যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দেন কর্তৃপক্ষ। সেই সুবিধা নিয়ে কারাগারে বসে বহু মামলার আসামী ইউনুছ, মকসুদ ও মোস্তাকসহ আরো বেশ কয়েকজন অপরাধী নিয়মিতভাবে অপরাধরাজ্য নিয়ন্ত্রণ করছেন। এমনকি স্বতন্ত্র প্রার্থী শরাফত উল্লাহ চৌধুরী ওয়াসিম, স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহেদসহ কয়েকজনকে কানফুল বাহিনীর মাধ্যমে অতর্কিত হামলা ও গুলিবর্ষণ করে প্রাণে হত্যা করবে বলে হুমকির কথা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

এমন ঘটনা জানাজানি হলে সাধারণ ভোটারদের মাঝে আতংক দেখা দেয়ার পাশাপাশি প্রার্থীদের মাঝেও ভীতি দেখা দিয়েছে। এমনকি স্থানীয়রা নিজের উদ্যোগে শরাফত উল্লাহ চৌধুরী ওয়াসিমের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেয়ার পর বাড়িতে চলে গেলে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিয়ে চলছে।

এমন অভিযোগ করেছেন স্থানীয় ভোটার আক্কাস, নেজাম, হাসান, আবদু রহমান, রিদুয়ান, জসিমসহ আরো বেশ কয়েকজন।

তারা জানান, ভোটের রাজনীতি ও পরিবেশ অশান্ত করতে স্বীকৃত অপরাধীরা এলাকায় অবস্থান করছেন। ইতোমধ্যে তারা বহু মামলার আসামী চেয়ারম্যান প্রার্থী ইউনুছের পক্ষ হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের হুমকি দিচ্ছে। এমনকি কর্মী সমর্থকদের প্রাণে হত্যা করবে বলে হাকাবকা শুরু করেছেন। কারাগারে বসে যার নির্দেশনা দিচ্ছেন ইউনুছ।

জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও জেলা কারাগারের জেলার এর প্রতি আবেদন জানিয়ে তারা আরো বলেন, মানবিক দৃষ্টিতে কারাগারে ভিতর থেকে মুঠোফোনে কথা বলার যেই সুযোগ দেয়া হয়েছে তা যেন স্বীকৃত অপরাধীদের ক্ষেত্রে না হয়। কারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে পারে। তাই বিষয়টি বিবেচনা করা দরকার।

ঘাতকের গুলিতে নিহত জয়নালের ভাই আমিরুজ্জামান বলেন, ইউনুছের নির্দেশে আবু ছৈয়দ, ছোটন, জিয়াউর রহমানসহ সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা আমার ভাইকে হত্যা করেছে। তাদের মধ্যে ইউনুছসহ আরো বেশ কয়েকজন বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। ইউনুছ কারাগারে অবস্থান করলেও তার কানফুল বাহিনীর প্রধান দিদারসহ আরো বেশ কয়েকজন আমাদেরকে প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছে। আমরা ভয়ে থাকি সব সময়।

মগনামা ইউপির স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আ’লীগ নেতা শাহেদ বলেন, আমরা চেয়ারম্যান প্রার্থীরা সন্ত্রাসীদের ভয়ে আতংকের মধ্যে আছি। অতিতে তারা বহু মানুষকে প্রকাশ্যে হত্যা করেছে। আমরা বিষয়টি পেকুয়া থানার ওসি সাহেবকে অবগত করেছি। আমরা চাই মগনামায় সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন করতে হলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে যেন অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে।

পেকুয়া থানার ওসি শেখ মুহাম্মদ আলী বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আয়োজন করতে ইতোমধ্যে প্রার্থীদের সাথে বৈঠক চলমান রয়েছে। কেউ ফৌজদারী অপরাধ করলে প্রশাসন আইনগত ব্যবস্থা নিবে। আর অপরাধী যেই হউক তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

পেকুয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, মগনামা ইউনিয়নের নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে আমার চাওয়া শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করা হয়েছে। ফাআপেপ্র

পাঠকের মতামত: