শহীদ লে. কর্নেল আবু মুছা মো. আইয়ুব কাইছার
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী ঢাকার বিডিআর (বিজিবি) দরবার হল পিলখানা ট্টাজেডির ৮বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। নারকীয় এই হত্যাযজ্ঞে সেনাবাহিনী সৌকষ অন্য সদস্যদের সাথে ওইদিন দরবার হলে নিহত হন কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসভার ৪নম্বর ওয়ার্ডের ভরামুহুরী গ্রামের কৃতি সন্তান শহীদ লে. কর্নেল আবু মুছা মো. আইয়ুব কাইছার।
পিলখানা ট্রাজেডির পর থেকে পরিবার সদস্যরা প্রতিবছরই প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ম শেখ হাসিনার কাছে দাবি জানিয়ে আসছেন কক্সবাজার বিমানবন্দরকে কর্ণেল আইয়ুব কাইছারের নামে নাম করণের জন্য। কিন্তু তাদের এই দাবি বারবার উপেক্ষিত থাকছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আইয়ুব কাইছারের বড়ভাই প্রকৌশলী আলহাজ মো.জহুরুল মওলা ও মেঝভাই মো.এনামুল হক।
তাঁরা চকরিয়ার স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে সরকার প্রধানসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি জানানোর পাশাপাশি নারকীয় ঘটনাকে সেনা হত্যা দিবস এবং নিহত সকল সেনাকর্মকর্তা ও সদস্যদের অবদানের কথা স্বরণ করে বিডিআর দরবার হলকে শহীদ যাদুঘর হিসেবে ঘোষনাও দাবি করেছেন। একই সাথে পিলখানা ট্টাডেটিতে নিহত সকল শহীদের স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা এবং পরিবারের অন্য সদস্যদেরও সরকারী ভাবে সহযোগিতা করার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তাঁরা।
এদিকে পিলখানা দিবস উপলক্ষে মরহুম আইয়ুব কাউছারের পরিবার তার স্বরণে গ্রামের বাড়িতে নানা ধর্মীয় অনুষ্টানের আয়োজন করেছে। তারমধ্যে এদিন সকালে বাড়িতে খতমে কোরান, মিলাদ মাহফিল, দু:স্থদের মাঝে খাবার বিতরণ, বিকেলে সামাজিক মসজিদের দোয়া মাহফিল অনুষ্টিত হবে।
লে.কর্ণেল আইয়ুব কাইছারের ভাই মো.এনামুল হক বলেন, তৎকালিন সেনা প্রধান মঈন উ আহমদের দূরদর্শীতার অভাবে বিডিআর বিদ্রোহে বাংলাদেশের গর্ব ৫৮জন চৌকস উর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাসহ ৬০ জনকে অকালে প্রাণ দিতে হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেছেন, এঘটনার পর ৮বছর সময় পেরিয়ে গেলেও স্ত্রী, সন্তান ছাড়া পরিবারের অন্য সদস্যরা সরকারের কোন ধরণের ন্যূনতম সুযোগ সুবিধা পায়নি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, কর্ণেল আইয়ুব কাইছারকে সেনা বাহিনীর এতবড় পদে পৌছাঁনোর পেছনে পরিবার সদস্যরা (ভাই-বোনের) সর্বোচ্চ চেষ্টা ছিল। কিন্তু মর্মান্তিক এ ঘটনার পর পরিবারের (ভাই-বোনদের) প্রতি এতটুকু সমবেদনা বা সহমর্মিতা জানানোর প্রয়োজনও মনে করেনি সংশ্লিষ্ট মহল।
জানা গেছে, লে. কর্নেল আবু মুছা মো. আইয়ুব কাইছারের জন্ম কক্সবাজার জেলার চকরিয়া পৌরসভার ৪নম্বর ওয়ার্ডের ভরামুহুরী এলাকায় সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। ওই গ্রামের মরহুম মাওলানা আবদুল খালেকের ৮ ছেলে-মেয়েদের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। ১৯৬২ সালের ১৬ ডিসেম্বর তার জন্ম। লেখাপড়া শেষে ১৯৮৩ সালের ১০ জুন তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার্সকোরে যোগদান করেন। স্বীয় পেশায় অসাধারণ কর্মদক্ষতার কারনে মাত্র ৬বছরে তিনি মেজর পদে পদোন্নতি পান। ২০০৩সালে তিনি লে.কর্ণেল পদে অভিষিক্ত হন। চাকুরী জীবনে তিনি শান্তি মিশনে কুয়েত, মালয়েশিয়া, সৌদিআরব, সিঙ্গাপুর, শ্রীলংকা ও থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রে ছিলেন। সর্বশেষ ২০০৯সালে তিনি বিডিআর সদর দপ্তর পিলখানায় রক্ষানাবেক্ষন ও নির্মাণ শাখায় (একিউএমজি) পদে কর্মরত ছিলেন।
পারিবারিক সুত্র জানায়, বর্তমানে শহীদ লে.কর্ণেল আইয়ুব কাইছারের স্ত্রী মুশরাত জাহান পিনু তাদের দুই মেয়ে কারিশা মুশরাত ও জাফারিয়া কাইছারকে নিয়ে ঢাকায় সরকারীভাবে বরাদ্ধপ্রাপ্ত বাড়িতে বসবাস করে আসছেন।
লে.কর্ণেল আইয়ুব কাইছারের বড়ভাই প্রকৌশলী জহুরুল মাওলা বলেন, আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে ঘটনার পর কর্ণেল আইয়ুব কাইছারের নামে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে নাম করণের দাবি জানিয়ে আসছি। পাশাপাশি চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে দাবি জানাচ্ছি আইয়ুব কাইছারের স্মৃতি রক্ষার্থে তার নামে পৌরসভার ৪নম্বর ওয়ার্ডের সবুজবাগ-থানা সেন্টার সড়কটি নাম করণ করে সহসা প্রতিবন্ধকতামুক্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য। তিনি বলেন, সড়কটি চালু করা গেলে পৌরসভার কয়েক হাজার বাসিন্দা চলাচলে যেমন সুফল পাবে, তেমনকি আইয়ুব কাইছারের একটি স্মৃতি অন্তত পক্ষে জন্মভুমিতে প্রতিষ্টা পাবে। এ জন্য সংশ্লিষ্টদের ইতিবাচক ভুমিকা প্রত্যাশা করেন পরিবার সদস্যরা। #
পাঠকের মতামত: