ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারে পাসপোর্ট পাওয়া যাচ্ছেনা ৪ মাসেও, ভোগান্তি চরমে

মাহাবুবুর রহমান, কক্সবাজার :: কক্সবাজারের মানুষের পাসপোর্ট পাওয়া দিন দিন কঠিন হয়ে পড়েছে। নির্ধারিত সময়ের ৪ মাস পরেও পাওয়া যাচ্ছেনা পাসপোর্ট।

এতে অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় বিদেশ যেতে পারছেনা। আবার অনেকে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে,আবার অনেকে উচ্চ শিক্ষা নিতে বিদেশ যেতে বা ব্যবসায়িক প্রয়োজনে বিদেশ যেতে পারছেনা বলে জানান অসংখ্য মানুষ। এতে নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট না পেয়ে পাসপোর্ট কর্মকর্তার সহযোগিতা চাইতে গেলে নাগরিকদের অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ সহ এবং প্রচন্ড খারাপ ব্যবহার করে বলে অভিযোগ করেন সাধারণ মানুষ।

শহরের বিজিবি ক্যাম্প এলাকার জাহাঙ্গির আলম পিতাকে নিয়ে ভারতে চিকিৎসা করাতে যাওয়ার জন্য ২০১৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর পাসপোর্ট আবেদন জমা দিয়েছি যার নাম্বার২২০১০০০০০২৮৪১০৭ সেই পাসপোর্ট পাওয়ার কথা ৩০ সেপ্টেম্বর কিন্তু ৪ মাস পার হলেও এখনো পাসপোর্ট হাতে পায়নি। এর মধ্যে বিনা চিকিৎসায় আমার আব্বা মারা গেছেন। তিনি জানান,আমি পাসপোর্ট আবেদন জমা দেওয়ার সময় নির্ধারিত সব কাগজ পত্র দেওয়ার পরও সবুজ বড়ুয়া নামের কর্মচারী আমাকে হয়রানী করে। এ সময় পাসপোর্ট কর্মকর্তা আবু নাঈম মাসুম আমার সাথে প্রচন্ড খারাপ ব্যবহার করেছিল। এখন ৪ মাস পরেও পাসপোর্ট না পাওয়ায় উনার কাছে কয়েকবার গেলে উনি আমাকে ঢাকা যেতে বলেন।

পিএমখালী ঘাটকুলিয়া পাড়ার শাহিনা জানান, আমি ৪ মাস আগে পাসপোর্ট জমা দিয়েছি যার নাম্বার ২২০১০০০০০২৮৯০৬১ যা এখনো পায়নি। এতে আমি চিকিৎসা করানোর জন্য যেতে পারছিনা। পাসপোর্ট পেতে বিলম্ব হওয়াতে ২ বার আমার চিকিৎসার কাগজপত্র সহ কর্মকর্তাদের কাছে গেলে উনারা উল্টো আমাকে গালিগালাজ করে বের করে দিয়েছে। আমি এখনো পাসপোর্ট পায়নি।

একই এলাকার খোরশেদ আলম বলেন, আমার পাসপোর্ট আইডি নাম্বার ২২০১০০০০০২৮৩০৬১। যা আবেদন করেছি আড়াই মাস হবে কিন্তু আমার ভিসা এসেছে ১ মাসের বেশি সময় হবে। ফলে বিদেশ থেকে আমার আত্বীয় স্বজন পাসপোর্টের জন্য খুব তাড়াহুড়া করছে আমার সৌদি আরবে যেখানে আমার জন্য কাজ ঠিক করেছে সেখানেও নাকি বেশ তাড়াহুড়া করছে। আর ১ সপ্তাহর মধ্যে যেতে না পারলে ভিসা বাতিল হবে বলে জানিয়েছে এতে আমি খুব বিপদের মধ্যে পড়ে কক্সবাজার পাসপোর্ট কর্মকর্তার কাছে গিয়েছিলাম অনুরোধ করার জন্য যাতে আমার পাসপোর্টটি তাড়াতাড়ি পাওয়া যায় কিন্তু কর্মকর্তা আবু নাঈম মাসুম আমাকে খারাপ ব্যবহার করে রুম থেকে বের করে দেন। আমি কান্না করে উনাররুম থেকে বের হয়েছি। এর পরে আমি একজনের পরামর্শে ঢাকাও গিয়েছি তার পরও এখনো পাসপোর্ট পায়নি। জানিনা এখন কি হবে। শহরের তারাবনিয়ারছড়ার নাছির উদ্দিন আহামদ জানান,আমার পাসপোর্ট নবায়ন করতে দিয়েছি এখন প্রায় ৩ মাস হতে চলেছে যার নাম্বার২২০১০০০০০২৮৯৩০০ যা এখনো পায়নি।

এর মধ্যে আমরা কয়েকজন মিলে পবিত্র ওমরা হজ¦ পালনে যাওয়ার জন্য মনস্থির করেছি কিন্তু পাসপোর্ট না পাওয়াতে যেতে পারছি না। পাসপোর্ট নবায়ন করতে যদি এতদিন লাগে তাহলে আমরা কোথায় যাব। আমি শুনেছি এখানে অনেকে ভেতরের কিছু কর্মকর্তাদের হাত করে ২ বা ৩ হাজার টাকা দিয়ে জরুরী ভাবে ঢাকা থেকে বই প্রিন্ট করে নিয়ে আসছে।

আমার কাছেও এরকম অফার এসেছিল তবে আমি সেটা গ্রহন করিনি। আর পাসপোর্ট কর্মকর্তার রুমের দরজায় গিয়ে ফিরে এসেছি কারণ চোখে দেখলাম তিনি সাধারণ মানুষের সাথে কি রকম বাজে ব্যবহার করেন।

শহরের নতুন বাহারছড়া এলাকার ব্যবসায়ি জয়নাল আবেদীন জানান, আমার মেয়ে মিসকাতুল জান্নাত তোহার জন্য একটি পাসপোর্ট করতে গিয়েছিলাম কক্সবাজার পাসপোর্ট অফিসে। আবেদনে মেয়ের জন্ম নিবন্ধন সনদটি ভুয়া বলে নীচে এবং পাসপোর্ট কর্মকর্তা আমাকে অনেক হয়রানী করেছিল। পরে আমি চ্যালেঞ্জ করাতে তিনি আমাকে মেয়ের পাসপোর্ট আজীবনের জন্য বন্ধ হতে পারে বলে হুমকি দেন। বিষয়টি আমি পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে অভিযোগ জানাতে চিঠি লিখছি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার পাসপোর্ট অফিসে প্রকাশ্য কোন আর্থিক লেনদেন না হলেও ভেতরে টাকা ছাড়া কোন কাজই হয়না। বরং টাকা দিলেই মিলে সেবা। বাংলাবাজার এলাকার কম্পিউটার অপারেটর ছালাউদ্দিন এবং পাসপোর্ট কর্মকর্তার ফুফাত ভাই খুরুশকুল এলাকার ২ জন ব্যক্তি মিলে প্রতিদিন বিপুল টাকা লেনদেন করছে আর এতে নেতৃত্ব দিচ্ছে স্বয়ং পাসপোর্ট কর্মকর্তা এবং সহকারী কর্মকর্তা আলমগীর কম্পিউটার অপারেটর সবুজ বড়ুয়া সহ আরেকটি সিন্ডিকেটের রয়েছে নিজস্ব দালাল তারা বিভিন্ন উপায়ে আয় করছে বিপুল টাকা।

এ ব্যপারে কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট কর্মকর্তা আবু নাঈম মাসুম চকরিয়া নিউজকে বলেন, আমাদের কাজ হচ্ছে পুলিশ রিপোর্ট আসলে বই প্রিন্টের জন্য ঢাকাতে পাঠিয়ে দেওয়া। সেখানে বই প্রিন্ট হতে দেরি করলে সেখানে আমাদের করার কিছুই নেই। মূলত সারা দেশে পাসপোর্ট বই পেতে বিলম্ব হচ্ছে তাই এখানেও হচ্ছে।

পাঠকের মতামত: