ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

পর্যটকসেবায় নিরলস কাজে ট্যুরিস্ট পুলিশ

touristইমাম খাইর, কক্সবাজার :

পর্যটনের সম্পদ ট্যুুরিস্ট। তাই তো কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সেবায় ভিন্ন কর্মসুচি হাতে নিয়েছে ট্যুুরিস্ট পুলিশ। দিনরাত নিরলস কাজ করছে। তপ্ত বালুকাময় সৈকতে পানি ছিটিয়ে ‘ওয়াকওয়ে’ তৈরী, লাইফগার্ড কর্মীদের প্রশিক্ষণ, সৈকত এলাকা হকার মুক্ত করা, সৈকতের কিটকট, বিচবাইক, জেড স্কি’র ভাড়া নির্ধারণ, সৈকতের মার্কেটগুলোতে চলাফেরার জন্য রাস্তা দখলমুক্ত করাসহ অনেক ইতিবাচক ও পর্যটনবান্ধন কর্মসুচি পালিত হচ্ছে।

নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে ‘ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স’ চালু করেছে।

পর্যটকদের সেবার মান বৃদ্ধিতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে কর্মরত ফটোগ্রাফার্সদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়েছে।

এদিকে আসন্ন পর্যটন মৌসুমের শুরুতে ট্যুরিস্ট পুলিশের তর্মতৎপরতা পর্যটন খাতে নতুন আশার অালো প্রজ্জলন করেছে। এমনটি মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ঈদুল আজহার ছুটির পর থেকেই বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত শহর কক্সবাজারে প্রতিদিন ছুটে আসছেন হাজার হাজার পর্যটক। তাদের পদচারণায় মুখরিত থাকছে সৈকতের কলাতলী, সী-ইন ও লাবণী পয়েন্ট। কিন্তু পর্যটন শহর কক্সবাজারে গত কয়েকদিন ধরে পড়ছে প্রচন্ড গরম। আর এ গরমে বালিয়াড়ি দিয়ে পায়ে হেঁটে সৈকতে নামতে কষ্ট হচ্ছে পর্যটকদের। তাই পর্যটকদের সেবায় এগিয়ে এসেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্টে পানি ছিটিয়ে ‘ওয়াকওয়ে’ তৈরি করেছে ট্যুুরিস্ট পুলিশ। প্রচন্ড গরমে উত্তপ্ত বালিতে পায়ে হেঁটে যাতে সমুদ্রে নামতে কষ্ট না হয় সেজন্য শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৫ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত সৈকতের লাবনী পয়েন্টে ট্যুুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে এ কর্মসুচি পালিত হয়।

এতে সৈকতে আসা দেশী বিদেশী পর্যকরা পায়ে হেঁটে সমুদ্রশোভা উপভোগ করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেছে।

ট্যুুরিস্ট পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হোসাইন মোহাম্মদ রায়হান কাজেমী সিবিএনকে জানান, পর্যটকরা কক্সবাজারের সম্পদ। তাদের নিরাপত্তা ও সেবা দেয়া আমাদের দায়িত্ব।

তিনি জানান, পর্যটকদের ভ্রমন আনন্দ ও স্বাচ্ছন্দময়ী করতে আমরা সার্বক্ষনিক প্রস্তুত রয়েছি। পর্যটকরা যাতে উত্তপ্ত বালিতেও পায়ে হেঁটে সমুদ্র সৈকতে নামতে পারে সেজন্য কক্সবাজার ট্যুরিষ্ট পুলিশের পক্ষ থেকে লাবনি পয়েন্টে পানি ছিটিয়ে ওয়াকওয়ে তৈরি করা হয়েছে।

আগামীতে ট্যুুরিস্ট পুলিশ আরো পর্যটকসেবামূলক কর্মসুচি হাতে নেয়ার পরিকল্পনার কথা জানান ট্যুরিস্ট পুলিশের এ কর্মকর্তা। এ কর্মসুচি নিয়মিত অব্যাহত থাকবে। এ জন্য তিনি সবার সহযোগিতা চান।

রায়হান কাজেমি আরো বলেন, সৈকত এলাকা হকার মুক্ত করা, সৈকতের কিটকট, বিচবাইক, জেড স্কি’র ভাড়া নির্ধারণ, সৈকতের মার্কেটগুলোতে চলাফেরার জন্য রাস্তা দখলমুক্ত করা, সৈকতের ৩টি পয়েন্টে মাইকিং, সেবামূলক লিফলেট বিতরণ, সৈকতের লাবণী পয়েন্টে পর্যটকদের যাতায়াতের জন্য ওয়াকওয়ে তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি হোটেলে ট্যুরিস্ট পুলিশের পর্যটকদের জন্য সেবামূলক লিফলেট বিতরণ করে গণসচেতনতা তৈরী করা হচ্ছে।

তার মতে, ট্যুরিস্ট পুলিশের সেবা আরো বাড়ানো হচ্ছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে সৈকতের কলাতলী পয়েন্টে ওয়াকওয়ে তৈরি, হিমছড়ি, ইনানী ও টেকনাফ বিচে মাইকিং করা হবে। পর্যটকদের সেবা ট্যুরিস্ট পুলিশ নানা ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করছে। এতে সকলের সহযোগিতা চান তিনি।

ট্যুরিস্ট পুলিশের এ কর্মকর্তা আরো বলেন, কবিতা চত্তর, ডায়াবেটিক পয়েন্ট, ইনানী ও হিমছড়িতে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত পুলিশ সদস্যরা রয়েছে। কোন পর্যটক হয়রানী হলে ০১৭৬৯৬৯০৭৩৪ নাম্বারে অভিযোগ দিলে আমরা সাথে সাথে ব্যবস্থা নেব।

ঢাকা থেকে সমুদ্র সৈকতে আসা পর্যটক দম্পতি বলেন, সৈকতে ঘুরতে স্বাচ্ছন্দবোধ করছি। কোথাও হয়রানী নেই।

নিরাপত্তা প্রদানের পাশাপাশি হকারদের উৎপাত থেকে রক্ষা, স্বাচ্ছন্দে সৈকতে ঘুরে বেড়ানো ও মাইকিং করে সেবা প্রদান আসলে ট্যুরিস্ট পুলিশ প্রশংসার দাবি রাখছে। সৈকতে বেড়াতে এসে ট্যুরিস্ট পুলিশের কাছে এসব সেবা পেয়ে সত্যিই আমরা খুশি।

বিশেষ করে উত্তপ্ত বালিতে পানি ছিটিয়ে ওয়াকওয়ে তৈরী করা পর্যটকদের সেবার মান আরেক ধাপ বাড়িয়ে দিয়েছে বলে তারা মনে করেন।

ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েমন অব কক্সবাজার (টুয়াক) সভাপতি এম. রেজাউল করিম জানান, পর্যটকদের সেবায় ট্যুরিস্ট পুলিশের যথেষ্ট ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে। বিভিন্ন জোনে ভাগ করে তাদের কাজ চলছে। এতে পর্যটক হয়রানী কমে আসছে।

এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে বিশ্ব দরবারে কক্সবাজারের ভাবমূর্তি আরো বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।

এদিকে ট্যুরিস্ট পুলিশের দেয়া তথ্য মতে, ঈদুল আজহার ছুটিতে সৈকতে ১৬ জন শিশুকে উদ্ধার করে অভিভাবকের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

একজন ইভটিজার ও একজন ছিনতাইকারি আটক, একজন ভাসমান ভিকটিম উদ্ধার, ৫টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

তাছাড়া বিচে অবৈধভাবে প্রবেশকারী দুইটি মোটর সাইকেল আটক করে মালিকের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানানো হয়।

সৈকতের সেবার মান বাড়াতে সর্বস্তরের মানুষের সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি সবার সহযোগিতাও কামনা করেছে ট্যুুরিস্ট পুলিশ।

সুত্র জানায়, ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে মাত্র একজন পরিদর্শকের নেতৃত্বে ৩০ সদস্য নিয়ে বাংলাদেশে ট্যুরিস্ট পুলিশের যাত্রা। ৬ মাস পরে এসে ২০১৪ সালের ২৫ জুলাই আরো ৫২ জন সদস্য নিয়ে কক্সবাজারে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করে ট্যুরিস্ট পুলিশ। বর্তমানে ১৩০ জন সদস্য নিয়ে চলছে ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার জোনের কাজ। একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, দুইজন সহকারী পুলিশ সুপার, দুইজন ইন্সপেক্টর, ৬ জন এসআই, ১৮ জন এএসআই, ৩ জন এটিএসআই, ৩ জন নায়েক, ৮২ জন পুরুষ কনস্টেবল ও ৬ জন নারী কনস্টেবল কক্সবাজার জোনে কর্মরত রয়েছে।কক্সবাজারে ট্যুরিস্ট পুলিশের আনুষ্ঠানিক যাত্রার মাত্র একটি বসন্ত পার করেছে। এরপরও এগিয়ে যাচ্ছে তাদের কার্যক্রম, চলছে প্রশংসনীয় ধারায়। পর্যটকসেবায় ২৪ ঘন্টা মাঠে তৎপর রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা।

রাতদিন ডিউটি, বিপদগ্রস্ত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে যাওয়া, মোটিভেশনাল কার্যক্রমসহ গতিশীল কাজে জুড়ি নেই ট্যুরিস্ট পুলিশের। প্রযোজনীয় সংখ্যক জনবল, অবকাঠামো দিয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশকে আরো বেশী শক্তিশালী করা প্রয়োজন বলে মনে করেন কক্সবাজারবাসী।

পাঠকের মতামত: