ওমর ফারুক হিরু, কক্সবাজার :: কক্সবাজার শহরের বদর মোকাম জামে মসজিদের অজুখানায় এই বৃদ্ধকে গোসল করতে দেখা যায়। চুল-দাঁড়ি আর পোষাকে বুঝা যায় তিনি একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষ। কিন্তু তার সাথে কথা বলার পর কিছু সময়ের জন্য সেই ভাবনা পাল্টে যায়। তিনি শিক্ষিত, মার্জিত ও ভদ্র লোকদের মত কথা বলেন। মোঃ আবুল হাশেম নামে আনুমানিক ৫৫ বছর বয়সী বার্ধক্যের দ্বারপ্রান্তে দাড়ানো এ ব্যক্তির বাবা-মায়ের নাম জানা থাকলেও আর কিছুই মনে পড়ছেনা।
রবিবার সকালে আবুল হাশেমের সাথে দেখা হয়। ক্ষুধার্ত এই মানুষকে খাবার ও পোষাক দেওয়ার পাশাপাশি চুল-দাঁড়ি কাটিয়ে স্বাভাবিক করা হয়। এরই মধ্যে তার জীবনের গল্প শুনতে গিয়ে জানা যায়, তিনি সত্যিই একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষ। যদিও এই মুহুর্তে সুস্থ আছেন। বাবা আব্দুল রাজ্জাক-মা আছিয়া খাতুন ও নিজের নাম বলতে পারলেও অন্য কিছু মনে নেই। যার কারণে তিনি পরিবারকে খুঁজে পাচ্ছেন না। তিনি আরো জানান, বছরের বেশিরভাগ সময় মাথা ঠিকমত কাজ করে না। তবে সব কষ্ট-যন্ত্রণা নিজের মধ্যে রাখলেও কারো ক্ষতি করেন না কখনো।
কিভাবে মানসিক ভারসাম্যহীন হলেন- এমন প্রশ্নের সঠিক কোন উত্তর দিতে পারেননি। তবে প্রায় ৩০-৩৫ বছর আগে কে বা কারা তাকে অজ্ঞান অবস্থায় আখাউড়ার কেল্লা বাবার মাজারে রেখে চলে যায়। ওখানে তিনি দীর্ঘ ৮ বছর বদ্ধ উম্মাদ অবস্থায় ছিল। এরপর কিছুটা সুস্থ হয়। কিন্তু তার আর কোন স্মৃতি মনে নেই। এছাড়া তার এই সুস্থতাও বেশিদিন থাকেনা। কখন যে প্রচন্ড মাথা ব্যথার মধ্য দিয়ে সবকিছু অস্বাভাবিক হয়ে যায় তা নিজেও জানেন না।
কক্সবাজার শহরের কোর্ট বিল্ডিং এলাকাসহ রাস্তায় থাকা এই মানুষটি এখন খুঁজে ফিরছেন তার পরিবারকে। লিখতে-পড়তে জানা মোঃ আবুল হাশেম জানান, পরিবারের সন্ধানে যে যেখানে বলছে সেখানেই যাচ্ছেন। মা-বাবা-ভাই-বোন কারো চেহারা মনে পড়ছেনা। তারা আদৌ বেঁচে আছে কিনা তাও জানেন না।
আবুল হাশেম সবসময় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন, সে যেন সুস্থ্য হয়ে অতীত স্মৃতি ফিরে পায়। আর পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারে। হয়ত তার পরিবার এখনো তার অপেক্ষায় আছে।
পাঠকের মতামত: