ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৪

নিবন্ধন বাতিল হল ২০৯ এনজিওর

নিজস্ব প্রতিবেদক ::
‘গ্রীন ডিসঅ্যাবলড ফাউন্ডেশন’ একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও), যার নিবন্ধন নম্বর ১৫৩০। এনজিওবিষয়ক ব্যুরোতে এটি নিবন্ধিত হয় ২০০০ সালের ২০ এপ্রিল। নিবন্ধনের মেয়াদ শেষ হয় ২০০৫ সালের ৩ মে। শর্তানুসারে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার ছয় মাস আগেই নবায়নের আবেদন করতে হয়; কিন্তু এক যুগ পেরিয়ে গেলেও মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেনি সংস্থাটি। একাধিকবার মেয়াদ নবায়নের আদেশ জারি করা হলেও সাড়া দেয়নি।

শুধু গ্রীন ডিসঅ্যাবলড ফাউন্ডেশনই নয়, বিদেশি অনুদানে পরিচালিত এ রকম দুই শতাধিক এনজিও নিবন্ধন নবায়নের আবেদন করেনি। মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েও এক থেকে তিন দশকের বেশি সময় ধরে কাজ করছে এসব সংস্থা। এসব এনজিও কী করছিল, সে ব্যাপারেও কিছু জানত না নিয়ন্ত্রক সংস্থা এনজিও ব্যুরো। নিবন্ধন নবায়ন না করা অনেক সংস্থারই জঙ্গি তৎপরতাসহ গোপনে যে কোনো সমাজ-রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই সম্প্রতি ২০৯টি এনজিওর নিবন্ধন বাতিল করে দিয়েছে ব্যুরো। এ বিষয়ে এনজিও ব্যুরোর মহাপরিচালক কে এম আব্দুস সালাম সমকালকে বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ এনজিওগুলোকে নবায়নের জন্য প্রথম দফা নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। যারা নবায়নের আবেদন করেনি, তাদের পরে ‘নিবন্ধন কেন বাতিল করা হবে না’ মর্মে শোকজ করা হয়। এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়। এর পরও যারা জবাব দেয়নি কিংবা উপযুক্ত কারণ দর্শাতে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। এ ধরনের সংস্থার সংখ্যা দুই শতাধিক।

নিবন্ধন বাতিলের চিঠি এরই মধ্যে এনজিওগুলোকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সিলেটের আম্বরখানা এলাকায় দেওয়া গ্রীন ডিসঅ্যাবলড ফাউন্ডেশনের অফিসের ঠিকানায় গত ৪ মার্চ এনজিও ব্যুরোর পরিচালক (নিবন্ধন ও নিরীক্ষা) শাহাদৎ হোসাইন স্বাক্ষরিত চিঠি পাঠানো হয়। সে চিঠি ফেরত এসেছে ব্যুরো কার্যালয়ে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট ঠিকানা দেওয়া হলেও এ রকম অনেক এনজিও অস্তিত্বহীন অবস্থায় রয়েছে। এ প্রসঙ্গে ব্যুরোর পরিচালক শাহাদাৎ হোসাইন সমকালকে বলেন, বাতিল এনজিওগুলোর অনেকেই বিদেশি অনুদান পায় না। এগুলোর দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা তাই স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে। অনেকগুলোর আবার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।

দেশে বর্তমানে বৈদেশিক অনুদান নিয়ে কাজ করে- এমন দেশি-বিদেশি দুই হাজার ৬০৮টি এনজিও রয়েছে। এর মধ্যে বিদেশি এনজিও ২৫৮টি। বৈদেশিক অনুদান রেগুলেশন আইন ২০১৬ অনুসারে এনজিওগুলোকে ১০ বছরের জন্য নিবন্ধন সনদ ইস্যু করা হয়। এসব সনদ ১০ বছর পরপর নবায়ন করতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে নিবন্ধন নবায়ন না করায় ২০১৭ সালের ২৩ আগস্ট মেয়াদোত্তীর্ণ ৭৯৫টি এনজিওকে ৬০ দিনের মধ্যে নবায়নের আবেদন করার নির্দেশ দেওয়া হয়; কিন্তু অনেক এনজিওই বাস্তবায়ন করেনি এ নির্দেশ। এমন প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন ধাপ শেষে এসব সংস্থার নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত এলো।

এদিকে, বিদেশি অনুদানপ্রাপ্ত বিভিন্ন এনজিওর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে জঙ্গি অর্থায়ন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে বর্তমানে ‘টার্মস অব রেফারেন্স’ (টিওআর-২৬) অনুযায়ী কোনো সংস্থা মানি লন্ডারিং বা সন্ত্রাসী অর্থায়নে জড়িত কি-না, এনজিও ব্যুরোতে এ-সংক্রান্ত ভাষ্য দিতে হয়। কিন্তু যেসব এনজিওর নিবন্ধন আছে, সেগুলোর অনেকেই এ ব্যাপারে তথ্য দিতে চায় না। ফলে অনেক এনজিওকে এরই মধ্যে অডিট আপত্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে। সংশ্নিষ্টরা বলছেন, যেখানে হালনাগাদ এনজিওগুলো এসব সংবেদনশীল বিষয়ে তথ্য দিতে গড়িমসি করে, সেখানে অসংখ্য মেয়াদহীন এনজিও গোপন কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করছে কি-না, সে ব্যাপারে ‘অন্ধকারে’ থাকা সত্যিই উদ্বেগজনক।

বাতিলকৃত সংস্থার তালিকা :নিবন্ধন বাতিল হওয়া এনজিওগুলোর মধ্যে রয়েছে- কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি সার্ভিস ওভারসিস, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফর ভলান্টারি স্টেরিলাইজেশন, বাংলাদেশ লুদারান মিশন নরওয়ে, জাতীয় চার্চ পরিষদ, শিশু চিকিৎসা কেন্দ্র, অ্যাসোসিয়েশন অব ভলান্টিয়ারস ফর রুরাল ডেভেলপমেন্ট অব বাংলাদেশ, শিশু মঙ্গল সমাজকল্যাণ সমিতি, গণ বিদ্যাপিঠ, ফ্যামিলি কেয়ার অ্যাসোসিয়েশন, বহুমুখী মিলন সংঘ, প্রগতি হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট, প্রগ্রেসিভ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন, সোনালী সংঘ, অ্যাসোসিয়েশন ফর লিগ্যাল এইড টু পুওর, ইসলামী পরিবার কল্যাণ সংস্থা, এসডিও, বিসিসি ফাউন্ডেশন, শহীদ স্মৃতি সংঘ, জাগরণী সমাজকল্যাণ সমিতি, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচার অ্যান্ড ন্যাচারাল রিসোর্সেস, সিবালী ট্রাইবাল টেক্সটাইল, গ্লোবাল-২০০০, অর্গানাইজেশন ফর সোশ্যাল আপলিপ্টমেন্ট, স্বদেশ উন্নয়ন সংস্থা, জাগরণী এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড রুর‌্যাল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট, ইন্টিগ্রেটেড ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট সেন্টার, বাংলাদেশ মহিলা সংস্থা, দেশ কল্যাণ সংস্থা, ফ্যামিলি অ্যান্ড চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট, সমাজসেবা সংগঠন, মৌখারা বহুমুখী সমাজকল্যাণ সংস্থা, মৈত্রী সংস্থা, কয়রাডাঙ্গা ক্লাব ও মৌলিক চাহিদা কর্মসূচি।

পাঠকের মতামত: