ঢাকা,শনিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৪

নতুনেই আস্থা শেখ হাসিনার

নিউজ ডেস্ক ::
সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নতুনেই আস্থা রাখলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নতুনদের ওপর আস্থা রেখে যে মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন তা অত্যন্ত সাহসী পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, নতুন এবং উদ্যমীদের নিয়ে গঠিত মন্ত্রিসভা নিয়েই শেখ হাসিনা পাড়ি দেবেন অথৈ সাগর। পৌঁছে যাবেন অভিষ্ট লক্ষ্যে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে নেয়ার যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, সে হিসেবেই প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। এ ছাড়া ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ সালকে টার্গেট করে তিনি নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করলেন। যেখানে রয়েছে শেখ হাসিনার উদ্যমী ও সাহসী একঝাঁক সৈনিক। যারা শেখ হাসিনাকে অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দেবেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দারিদ্র্য মুক্ত সোনার বাংলা গঠনে এসব সৈনিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। নতুন মন্ত্রিসভা প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, নতুনদের মন্ত্রী বানিয়ে শেখ হাসিনা তার ইশতেহারে ঘোষিত চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়ন করতে চান। এটা অত্যন্ত সাহসী পদক্ষেপ এবং কালজয়ী সিদ্ধান্ত। যারা আগেও মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করেছেন এবং আবারও এসেছেন তারা পরীক্ষিত। আর নতুন যাদের আনা হয়েছে তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড দেখেই নেয়া হয়েছে। তারা এর আগে দলের যে দায়িত্বে ছিলেন তাতে তারা দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যেহেতু সংসদে সত্যিকার অর্থে কার্যকর বিরোধী দল নেই, সে কারণে যারা মন্ত্রী হলেন তাদের নিজেদের দায়িত্ব নিজেদের নিতে হবে। সংযত থাকতে হবে। দুর্নীতির ঊর্ধ্বে থেকে কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী তার ইশতেহারে দুর্নীতির জিরো টরারেন্সের যে ঘোষণা দিয়েছেন তা যেন বজায় থাকে এ চেষ্টা মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের করতে হবে। তিনি বলেন, বঙ্গভবনে গিয়ে শপথ নিয়ে বাসায় গিয়ে তারা
যেন নিজে নিজে আবার শপথ নেন যে দায়িত্ব পালনকালে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবে না।
৪৭ সদস্যের মন্ত্রিসভা ॥
একাদশ সংসদ নির্বাচনে অভাবনীয় জয়ের পর টানা তৃতীয়বার মত ক্ষমতায় এসে একঝাঁক নতুন মুখ নিয়ে নতুন সূচনা করতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।বিদায়ী সরকারে থাকা প্রবীণ ও বয়োজ্যেষ্ঠ মন্ত্রীদের অধিকাংশেরই জায়গা হয়নি নতুন মন্ত্রিসভায়। গত দুইবার শরিক দলের নেতাদের নিয়ে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করলেও তার নতুন মন্ত্রিসভার সবাই আওয়ামী লীগের।প্রধানমন্ত্রীসহ নতুন মন্ত্রিসভার আকার দাঁড়িয়েছে ৪৭ জনে। তাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী প্রথমবারের মত সরকারের দায়িত্ব পালন করতে আসছেন। বিদায়ী সরকারে থাকা ৩৪ জনের নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান হয়নি। সরকারের ২৪ জন মন্ত্রীর মধ্যে নয়জনই একেবারে নতুন। বিদায়ী সরকারে না থাকলেও আগে মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করেছেন এমন তিনজনকে শেখ হাসিনা ফিরিয়ে এনেছেন পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে।পুরনোদের মধ্যে যে সাতজন মন্ত্রী নতুন সরকারে টিকে গেছেন, তাদের ছয়জনই আগের দপ্তরে থেকে যাচ্ছেন। এছাড়া গত সরকারের পাঁচজন প্রতিমন্ত্রীর এবার পদোন্নতি হয়েছে। শেখ হাসিনার গত সরকারে অনির্বাচিত (টেকনোক্র্যাট) মন্ত্রী ছিলেন চারজন, তাদের মধ্যে দুজনকে এবারও সরকারে রাখা হয়েছে। এছাড়া টেকনোক্র্যাট হিসেবে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে এসেছেন একজন।প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া ১৯ জনের মধ্যে ১৫ জনই সরকারে আসছেন এই প্রথমবার। তিনজন শেখ হাসিনার গত সরকারেও প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। আর একজন আগে সরকারে থাকলেও গত মন্ত্রিসভায় ছিলেন না। শেখ হাসিনা তার এবারের সরকারে তিন মন্ত্রণালয়ে তিনজনকে উপমন্ত্রী করেছেন, তাদের সবাই নতুন মুখ। সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো আবদুল হামিদের কাছ থেকে দায়িত্ব পালনের শপথ নেবেন নতুন সরকারের সদস্যরা।মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম রোববার বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ও দপ্তর জানিয়ে দেন।বাংলাদেশে আগে কখনও এভাবে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ঘোষণা হয়নি। কারা সরকারে থাকছেন তার চূড়ান্ত তালিকা জানতে সাংবাদিকদের শপথ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হত।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা: মন্ত্রি পরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন ও প্রতিরক্ষা, সশস্ত্র বাহিনী, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রী : মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়: আ ক ম মোজাম্মেল হক, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়: ওবায়দুল কাদের, কৃষি মন্ত্রণালয়: আবদুর রাজ্জাক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়: আসাদুজ্জামান খান কামাল, তথ্য মন্ত্রণালয়: হাছান মাহমুদ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়: আনিসুল হক, অর্থ মন্ত্রণালয়: আ হ ম মুস্তফা কামাল, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়: তাজুল ইসলাম, শিক্ষা মন্ত্রণালয়: দীপু মনি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়: এ কে আবদুল মোমেন, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়: এম এ মান্নান, শিল্প মন্ত্রণালয়: নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়: গোলাম দস্তগীর গাজী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়: জাহিদ মালেক, খাদ্য মন্ত্রণালয়: সাধন চন্দ্র মজুমদার, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়: টিপু মুনশি, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়: নুরুজ্জামান আহমেদ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়: শ ম রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়: শাহাব উদ্দিন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়: বীর বাহাদুর উ শৈ সিং, ভূমি মন্ত্রণালয়: সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, রেলপথ মন্ত্রণালয়: নুরুল ইসলাম সুজন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়: ইয়াফেস ওসমান (টেকনোক্রেট), ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়: মোস্তাফা জব্বার (টেকনোক্রেট)।
প্রতিমন্ত্রী : শিল্প মন্ত্রণালয়: কামাল আহমেদ মজুমদার, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়: ইমরান আহমেদ চৌধুরী, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়: জাহিদ আহসান রাসেল, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়: নসরুল হামিদ বিপু, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়: আশরাফ আলী খান খসরু, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়: মুন্নুজান সুফিয়ান, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়: খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়: জাকির হোসেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়: শাহরিয়ার আলম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়: জুনাইদ আহমেদ পলক, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়: ফরহাদ হোসেন, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়: স্বপন ভট্টাচার্য্য, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়: জাহিদ ফারুক, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়: মুরাদ হাসান, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়: শরীফ আহমেদ, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়: কে এম খালিদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়: এনামুর রহমান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়: মাহবুব আলী, ধর্ম বিষয় মন্ত্রণালয়ে শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ( টেকনোক্রেট)।
উপমন্ত্রী : পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে হাবিবুন নাহার, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে এ কে এম এনামুল হক শামীম, শিক্ষা মন্ত্রণালয় মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

পাঠকের মতামত: