ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

নতুন কৌশলে বাংলাদেশে ঢুকছে রোহিঙ্গারা

71789_0বান্দরবান প্রতিনিধি :::
মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশের মংডু জেলায় রোহিঙ্গা অধ্যুষিত প্রতিটি গ্রাম যেন এখন আতঙ্কের জনপথ। মৃত্যুপুরী বললেও খুব একটা বেশি বলা হবে না।

সেখানে প্রায় একমাস ধরে চলা সেদেশের সেনাবাহিনীসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দমন নিপীড়ন, নৃশংস ও বর্বর নির্যাতনে দিশেহারা তারা। অসহায় মুসলিম রোহিঙ্গারা ঘরবাড়ি সহায় সম্পদ ত্যাগ করে অবৈধভাবে দলে দলে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে।

পরনের একটি মাত্র কাপড় শরীরে জড়িয়ে ৪/৫ দিনের পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে প্রাণ ভয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন।

তাদের চোখেমুখে বোকা কান্না, কেউ  আবার তার জীবনের লোমহর্ষক কাহিনী বর্ণনা দিতে গিয়ে হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

একশ্রেণির দালালের সহযোগিতায় রাতের অন্ধকারে চলছে অনুপ্রবেশে।

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম তুমব্রুসহ বিভিন্ন স্থানে আগে থেকেই বসবাসরত রোহিঙ্গা পরিবারের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা।

এছাড়াও বান্দরবান পাশবর্তী উখিয়া’র কুতুপালং, টেকনাফের লেদা শরণার্থী ক্যাম্পে অবস্থান নিচ্ছে রোহিঙ্গারা।

বান্দরবানের ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গী আজিজ ও স্থানীয়দের মতে, তুমব্রু খালের ওপারে মিয়ানমার আর এপারে বাংলাদেশ।

দুই পারের বাসিন্দাদের মধ্যে যাতায়াত রয়েছে। সে সুযোগে চেহারা আর ভাষাগত মিল থাকায় তুমব্রু খাল পার হয়ে কৌশলে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে রোহিঙ্গারা।

কক্সবাজারের কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে রোহিঙ্গারা।

অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা দেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশে উদ্বুদ্ধ করছে একশ্রেণির দালালচক্র এবং অনুপ্রবেশকারীদের আত্মীয়স্বজনরা।

স্থানীয়রা জানান, মিয়ানমারের সঙ্গে বান্দরবান জেলার সীমান্তের ঘুমধুম,তুমব্রু,বাইশফাঁড়ি,আশারতলী সীমান্তসহ বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রাতের অন্ধকারে প্রতিদিনই কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে অনুপ্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা।

এদের ঠেকাতে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়িয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

অনুপ্রবেশকারীদের আটক করে ফেরতও পাঠানো হচ্ছে। তারপরও ফাঁক-ফোকর দিয়ে অনুপ্রবেশ করে রোহিঙ্গারা লাকড়ি এবং ফসলের বোঝা মাথায় নিয়ে কৌশলে দেশের জনস্রোতের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা ছেনুয়ারা বেগম এবং শামশুন নাহার বলেন, মিয়ানমারের তাদের ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে।অর্থ সম্পদ লুট করে নারীদেরকে বাবা মা’র সামনে নির্যাতন করা হচ্ছে।

আত্মীয়স্বজনের জীবন এবং পরিবারের নারীদের নির্যাতন থেকে বাঁচতে বাধ্য হয়ে আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশে ঢুকছে।

সীমান্তের ওপারে শত শত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ বাংলাদেশে ঢুকার জন্য মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় তাদের আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে অবস্থান করছে।

তাদের মতে,ছোট ছোট বাচ্চাদের আগুনে নিক্ষেপ করে জীবন্ত পুড়ে মারছে মিয়ানমারের সেনা বাহিনী।

তারা বলেন, মিয়ানমারে মুসলিম রোহিঙ্গা নিধনে ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে সে দেশের সেনাবাহিনী ও পুলিশ এবং স্থানীয় রাখাইন সম্প্রদায়।পুরুষ যুবকদের হত্যা করা হচ্ছে,ধরে নিয়ে গিয়ে রোহিঙ্গা যুবতীদের উপর চালাচ্ছে পাশবিক নির্যাতন। বসতবাড়িতে আগুন দেয়া হচ্ছে,সীমান্তের ঢেকিবনিয়া, কুমিরখালী, শিলখালী, বলিবাজার ও নাগপুরাসহ বেশ কয়েটি গ্রামের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে। পুড়িয়ে দিয়েছে ধানের খামার।

বাড়িতে ঢুকে যুবক ছেলেদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে আর যুবতি মেয়েদের ধর্ষণ করছে।

এদিকে বিজিবি’র মতে, সীমান্তে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অস্থায়ী চেক পোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে। রাতের অন্ধকারে সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশকারীরা যাতে আগে থেকে অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গাদের সাথে মিশে যেতে না পারে সেজন্য সেসব এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ রোধে নিরাপত্তাবাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি।

তাদের মতে, যে সমস্ত এলাকা দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে সে সমন্ত ফাঁকা স্থান গুলোতে বিজিবি’র নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।থাপিও ফাঁকফোকর দিয়ে আসা অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের খাদ্য ও মানবিক সেবা দিয়ে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।

পাঠকের মতামত: