নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে প্রধানমন্ত্রীর সফরে বাংলাদেশের কোনো অর্জন নেই বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এমনকি শেখ হাসিনার ভারত সফরে দেশের মানুষের ন্যূনতম আশা পূরণ হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
মির্জা ফখরুল আরো বলেছেন, বর্তমান সরকার নতজানু। নতজানু পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে চলছে। তাই তারা দাবি আদায় করতে পারবে না। ফলে এই তাবেদার সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায় এখন আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নেমে আসতে হবে। কারণ এরা ভিন্ন কৌশলে নতুন পোশাকে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠায় সকল প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে চলেছে। ১৯৭১ সালের পর যে নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশ গড়ে তোলার নীলনকশা করেছিল, তা বাস্তায়নে অনেক দূর এগিয়ে গেছে।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা বন্ধের চার বছর পূর্তিতে এক সমাবেশে ফখরুল এ কথা বলেন। এই সমাবেশের আয়োজন করে ‘আমার দেশ পরিবার’।
ফখরুল বলেছেন, আজকে দেশের প্রতিটি পত্র-পত্রিকায়, এমনকি তাদের নিজস্ব কিছু পত্রিকাতেও, একই সুর; বাংলাদেশ পেলো না, যা পাওয়া উচিত ছিল।
ভারতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ম্যায় পানি মাঙ্গা, মুঝকো বিদ্যুৎ মিলা। কুছ তো মিলা। অর্থাৎ উনি নিজেই বলেছেন, মেলেনি। শুধু তাই বলেনি। শুধু কুছ মিলেছে। সেটা হচ্ছে বিদ্যুতের কথা বলেছেন। উনি নিজেই বলে দিয়েছেন। এখানে আমাদের কিছু দরকার আছে বলে আমি মনে করি না।
তিনি আরও বলেন, ফারাক্কা ব্যারাজ নিয়ে এই একই অবস্থা চলছিল। জিয়াউর রহমান সাহেব সেটা জাতিসংঘে তুলেছিলেন। জাতিসংঘে তুলেছিলেন বলেই পরে ভারত একটা চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছিল।
অনুষ্ঠানে আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে স্পষ্টভাষী আখ্যা দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, মাহমুদুর রহমান এক সাহসী সংগঠনের নাম। যিনি কখনও অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি, আপোস করেননি।
সভাপতির বক্তব্যে মাহমুদুর রহমান বলেছেন, অনেকে বলে থাকে, আমরা ৪৬ বছরের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু আমি বলবো সক্ষমতা হারাইনি, আমরা স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেছি। বাংলাদেশ আজকে স্বাধীন দেশ নয়। আমি সেই স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন দেখি এবং আমাদের যে লড়াই সেটা ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই ও ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই। কাজেই এই দুই লড়াইকে আমাদের এক করতে হবে। বাংলাদেশে হিন্দুত্ববাদের সরকারের যে প্রেতাত্মা ভর করেছে তার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করতে হবে।
অনু্ষ্ঠানে পুলিশ জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগে আটকের ভয় দেখিয়ে বেসুমার চাঁদাবাজি করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির এ মহাসচিব। ফখরুল বলেন, সরকারের নতুন অস্ত্র জঙ্গিবাদ। এই সরকার প্রায় ছয়শ নেতাকর্মীকে গুম করেছে। নেতাকর্মীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এখন আবার নতুন অস্ত্র বের হয়েছে জঙ্গি। যার কাছে টাকা পাবে না তাকে জঙ্গি বলে গ্রেপ্তার করা হবে। কি ভয়াবহ অবস্থা। এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এর পেছনে ভারতের ইন্ধন আছে বলেও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আজ বাংলাদেশে যে জঙ্গি সমস্যা তার মূল কারণ ভারত। তারা বলছে ১০ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে ভিসা দেবে। তাহলে একাত্তরে কি ১০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ছিল? তিনি বলেন, বিএনপি সঠিক আন্দোলন গড়ে তুলতে পারলে দেশে অবশ্যই সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, দেশের স্বার্থে তরুণদের মাঠে নামতে হবে, আর চুপচাপ থাকা যাবে না। জাতীয়তাবাদী শক্তিকে নতুন উদ্যোগে জেগে উঠতে হবে।
ফরহাদ মজহার বলেন, দেশের বর্তমান সংকটের সমাধান চাইলে শেখ হাসিনাকে সুষ্ঠু নির্বাচন অবশ্যই করতে হবে।
সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ ও রুহুল আমীন গাজী, বিএনপি নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাইফুল আলম নীরব, শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের জুয়েল, আবদুস শহীদ, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, ইলিয়াস খান, কাদের গনি চৌধুরী প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি আবদুল হাই শিকদার। সূচনা বক্তব্য দেন আমার দেশ-এর নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ। অনুষ্ঠানে ইঞ্জিনিয়ার আ ন হ আখতার হোসেন, অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক জেড এন তাহমিদা বেগম, অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, বিএফইউজের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, বাকের হোসাইন প্রমুখ পেশাজীবী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা অবিলম্বে আমার দেশ ছাপাখানা খুলে দিয়ে পত্রিকা প্রকাশের দাবি জানিয়ে বলেন, তারা আমার দেশ পড়তে চান। দেশের প্রকৃত খবর জানতে চান। তারা আমার দেশের পাঁচ শতাধিক সাংবাদিক কর্মচারী যাতে কাজের সুযোগ পান, তার জন্যও আমার দেশ প্রকাশ হওয়া জরুরি বলে উল্লেখ করেন।
সরকারবিরোধী আন্দোলনে আগে বিএনপিকে দল গুছিয়ে মাঠে নামার পরামর্শ দেন বিশিষ্টজনরা।
পাঠকের মতামত: