তুষার তুহিন, কক্সবাজার :
২০১৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর কক্সবাজারের মেরিণ ড্রাইভ সড়কে প্রেমিকের সাথে বেড়াতে গিয়ে নিহত হয় ঢাকার ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজের একাদশ শ্রেনীর ছাত্রী সুদীপ্তা চৌধুরী ইমু। ওই ঘটনার পরদিন সুদীপ্তা’র বাবা সঞ্জিব চৌধুরী প্রকাশ ঝুলণ চৌধুরী বাদী হয়ে রামু থানায় ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ এনে প্রেমিক জেকি কে অভিযুক্ত করে একটি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু ময়নাতদšত্ম ও হিস্টোপ্যাথলজী প্রতিবেদেনে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মস্তিস্কে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এবং মাথার আঘাতের কারণে সুদীপ্তার মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর আগে তাকে ধর্ষণ করেছে এমন কোন আলামত পাওয়া যায়নি।এটি একটি দূর্ঘটনা জনিত মৃত্যু। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের ডাক্তার মোহাম্মদ রাজিব হাসান সহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৫ জন চিকিৎসক স্বাক্ষরিত এমন একটি প্রতিবেদন ১৭ এপ্রিল কক্সবাজার জেলা জজ আদালতে উপস্থাপিত হয়েছে।
এ বিষয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক শাহীন মোহাম্মদ আবদুর রহমান চৌধুরী বলেন, আমরা আমাদের মতামত আদালতকে জানিয়েছি। মৃত্যুর আগে সুদীপ্তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে এমন কোন আলামত আমরা পাইনি। এছাড়া এটি একটি দূর্ঘটনা জনিত মৃত্যু বলে ময়না তদন্তে জানা গেছে।
তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্যাথোলজি বিভাগের মাইক্রোস্কোপিক প্রধান ডাক্তার শারমিনের মতামতের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরিকারী কক্সবাজার সদর হাসপাতালের চিকিৎসক রাজিব হাসান জানান, নিহত সুদীপ্তার জরায়ুতে মাংসের গঠনের কোন পরিবর্তন বা প্রশমিত হওয়ার আলামত পাওয়া যায়নি। মস্তিষ্কে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এবং মাথার আঘাতের কারণে সুদীপ্তার মৃত্যু হয়েছে। এখানে ধর্ষণের কোন আলামত পাওয়া যায়নি। অনুবিক্ষণিক যন্ত্রের মাধ্যমে এ পরিক্ষা চালানো হয়। এটি একটি দূর্ঘটনাজনিত মৃত্যু।
এদিকে দূর্ঘটনার প্রত্যেক্ষদর্শী ও মারমেইড সুপার শপের কর্মচারী ফোরকান বলেন, সেদিনের মোটর সাইকেল দূর্ঘটনা আমার সামনে ঘটে। চলন্ত মোটর সাইকেল হতে সুদীপ্তা পড়ে গিয়ে আহত হন। তখন আমরা তাকে উদ্ধার করে সিএনজি যোগে উখিয়াতে পাঠাই।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, জেকি’ই সুদীপ্তাকে উদ্ধার করে প্রথমে উখিয়া এবং পরে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। সেদিন সুদীপ্তার মৃতদেহের পাশ থেকে কান্নারত অবস্থায় জেকিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনে কক্সবাজার সদর থানা পুলিশ। পরে তাকে আটক দেখানো হয়।
এ বিষয়ে তৎকালীন কক্সবাজার সদর থানার ওসি রনজিৎ কুমার বড়ুয়া বলেন, সুদীপ্তা’র মৃত্যুর পর লাশের পাশ থেকেই পুলিশ জেকিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থানায় আনে। প্রাথমিক তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছিলাম জেকি ও সুদীপ্তার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তারা লং ড্রাইভে গেলে সেখানে দূর্ঘটনা ঘটে।
এবিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও রামু থানার ওসি তদন্ত মিজানুর রহমান বলেন, দূর্ঘটনা স্থলের লোকজন, প্রত্যক্ষদর্শী, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সহ অনেকের সাথে কথা বলেছি। স্বাক্ষ্য প্রমান গ্রহন শেষ। হিস্টো প্যাথলজী ও ময়না তদন্ত রিপোর্ট হাতে আছে। খুব শ্রীঘই আদালতে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, চূড়ান্ত প্রতিবেদন নাকি চার্জশীট দিব তা এই মুহুর্তে বলা সম্ভব নয়। তবে স্বাক্ষ্য প্রমান ও কাগজপত্রের উপর ভিত্তি করেই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হবে।
মামলার অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবি প্রতিভা দাশ বলেন, আমি নিশ্চিত এটি দূর্ঘটনা। স্বাক্ষ্য প্রমান ও দালিলিক কাগজপত্র একই কথা বলে। অথচ এমন একটি দূর্ঘটনা হত্যা দাবী করে বাদী পক্ষের দায়ের করা মামলায় জেকি ৪ মাস যাবৎ কারাবন্দী।
আর নিহত সুদীপ্তার চাচা এডভোকেট শ্যামল চৌধুরী বলেন, শুনেছি হিস্ট্রো প্যাথলজী রিপোর্ট আদালতে জমা হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসকরা এখনো ময়না তদন্ত প্রতিবেদন দেয়নি।
আর বাদী পক্ষের আইনজীবি দীলিপ দাশ বলেন, একটি মামলা যে ধারায় লিপিবদ্ধ হয় সে ধারায় যে চার্জশীট কিংবা প্রতিবেদন হবে এমন কোন কথা নেই। এটি একটি চলমান মামলা। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্বাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে এর সমাধান হবে। সুত্র: দৈনিক কক্সবাজার
পাঠকের মতামত: