ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

দেশের উন্নয়নে নাগরিক সংগঠনগুলোর অবদানের স্বীকৃতি দাবি করলো বিডিসিএসও

ইমাম খাইর, কক্সবাজার ::
বাংলাদেশের উন্নয়নকে অধিকতর কার্যকর এবং টেকসই করতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নাগরিক সমাজ সংগঠনগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ অপরিহার্য বলে মত প্রকাশ করেছেন নাগরিক সমাজ।
শনিবার (২৩ অক্টোবর) বাংলাদেশ এনজিও-সিএসও কো-অর্ডিনেশন প্রসেস (বিডিসিএসও প্রসেস)-এর বার্ষিক সম্মেলনে বক্তাগণ এসব কথা বলেন।
স্থানীয় ও জাতীয় প্রায় ৬০০ এনজিও-সিএসও-এর এই নেটওয়ার্কটি আজ থেকে তিনদিনব্যাপী বার্ষিক সম্মেলন শুরু করেছে।
সম্মেলনের প্রথম দিন আয়োজিত অধিবেশনের শিরোনাম ছিলো, ‘স্থানীয় নাগরিক সমাজ: কেন এবং কিভাবে তৃতীয় একটি খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে?’
অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ।
কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক কে এম তারিকুল ইসলাম।
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন- অর্থ মন্ত্রণালয়ের ডেভেলপমেন্ট ইফেকটিভনেস উইং এর উপসচিব আবুল কালাম আজাদ, ইউএনডিপি’র সুদিপ্ত মুখার্জি এবং ক্রিশ্চিয়ান এইড’র মিশেল মৌসুলম্যান।
অনুষ্ঠানে নির্ধারিত আলোচক হিসেবে আরও বক্তৃতা করেন- এনআরডিএস ও সুপ্র’র আবদুল আওয়াল, বিইউপি’র ফয়জুল্লাহ চৌধুরী, দুর্যোগ ফোরামের নাইম গওহর ওয়াহরা, রূপান্তরের রফিকুল ইসলাম খোকন, উদয়ন বাংলাদেশের শেখ আসাদুজ্জামান, ইমলএলএমএ’র জেসমিন সুলতানা পারু।
কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ বলেন, উন্নয়ন কিন্তু হয় স্থানীয় পর্যায়ে। স্থানীয় প্রশাসন স্থানীয় সরকারের পাশাপাশি তাই সেই উন্নয়নকে টেকসই করতে স্থানীয় নাগরিক সমাজকে সম্পৃক্ত করতে হবে। স্থানীয় এনজিও-সিএসওগুলো কিন্তু স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতার সঙ্গে কাজ করছেন, কিন্তু এক্ষেত্রে আমাদের আরও অনেক কিছু কাজ করতে হবে। শুধু নিজের প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের কথা চিন্তা না করে, সবার মর্যাদাপূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
কে এম তরিকুল ইসলাম বলেন, অনেক সীমাবদ্ধতা থাকা স্বত্ত্বেও বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায়ে প্রান্তিক মানুষের উন্নয়নে এনজিওগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সরকারের পাশাপাশি এনজিও-সিএসওগুলো উন্নয়নের ক্ষেত্রে পরিপূরক ভূমিকা পালন করছে। নাগরিক সমাজ একদিকে যেমন নাগরিকের কাছে সরকারের বার্তা পেঁঝ̌ছাবে, অন্যদিকে নাগরিকের কথাগুলোও সরকারের কাছে তুলে ধরবে। নাগরিক সমাজেরও নিজেদেরকে যথেষ্ট প্রস্তুতি নিতে হবে, গড়ে তুলতে হবে সক্ষমতা।

মাইকেল মসুলম্যান বলেন, স্থানীয় নাগরিক সমাজ কাজ করেন স্থানীয় মানুষের সঙ্গে, স্থানীয় মানুষের কাছেই স্থানীয় সংগঠনগুলো জবাবদিহি করে। তাই স্থানীয় সংগঠন স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কথাগুলো তুলে ধরতে এবং এভাবে সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। একে আজাদ বলেন, আমরা অর্থ সহায়তার কার্যকারিতা থেকে উন্নয়নের কার্যকারিতার যুগে প্রবেশ করেছি। বাংলাদেশ সরকার উন্নয়ন কার্যকর করতে বিশ্বব্যাপী নেতৃত্ব দিচ্ছে, নাগরিক সমাজের জন্য উন্নয়ন কার্যক্রম নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করার বিষয়ে সরকার এ আস্তরিক। সুদীপ্ত মুখার্জি বলেন, বাংলাদেশে নাগরিক সমাজের ভূমিকা বিশ্বজুড়ে প্রশংসনীয়। উন্নয়নকে টেকসই করতে হলে তাকে নির্ভর করতে হয় স্থানীয় শক্তির উপর, আর এক্ষেত্রে স্থানীয় সংগঠনগুলো স্থানীয় মানুষকে সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। স্থানীয় সংগঠনের দক্ষতা বৃদ্ধিতে আসলে দীর্ঘমেয়াদী অর্থ বরাদ্দ এবং সহযোগিতা প্রয়োজন, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য সেটা আসলে পাওয়া যায় না।

আব্দুল আওয়াল বলেন, যাদের জন্য উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হবে, তাদেরকে উন্নয়ন কৌশলে সম্পৃক্ত করলে উন্নয়নের সুফলকে স্থায়িত্বশীল করা যায়। কেউ যেন উন্নয়ন যাত্রায় বাদ পড়ে না যায়, সেটা নিশ্চিত করতে নাগরিক সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। রফিকুল ইসলাম বলেন, নাগরিক সমাজ সংগঠনের সবচেয়ে বড় স্বীকৃতিটা আসলে আসে যাদের জন্য আমরা কাজ করি, সেই তৃণমূল জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে। জেসমিন সুলতানা পারু বলেন, মুক্তিযুদ্ধে সময় এবং যুদ্ধপরবর্তী দেশ পুনর্গঠনে নাগরিক সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমান সময়েও দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি উন্নয়র লক্ষ্যমাত্রা পূরণ, দুর্যোগ মোকাবেলায় নাগরিক সংগঠন সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। তাই সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকেই এই তৃণমূলের সংগঠনগুলোর বিকাশে সহযোগিতা করতে হবে।

রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ সরকারের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পৃক্ততার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে চেতনা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। আর তাই এই অবদানগুলোর আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রয়োজন।

পাঠকের মতামত: