ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

দেশের ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে কক্সবাজারে ১১৫১ জন

কক্সবাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে সারাদেশের ইয়াবার আগ্রাসন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব

চকরিয়া নিউজ ডেস্ক ::

ইয়াবার উত্সভূমি হিসেবে পরিচিত মিয়ানমার। আর বাংলাদেশে ইয়াবা পাচারের প্রধান রুট কক্সবাজার। সারাদেশের ইয়াবার ৮০ ভাগ সরবরাহ হয় টেকনাথ থেকে। নেশার ভয়ানক ছোবল ক্রেজি ড্রাগ হিসেবে পরিচিত ছোট্ট আকারের এই বড়ি ব্যবসায় কক্সবাজারের ১১৫১ জন জড়িত। এদের মধ্যে ৬০ জন গডফাদার। ২০১৮ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ইয়াবাসহ মাদকের গডফাদার ও ব্যবসায়ীদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী ৪টি সংস্থা মাদক পাচার ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের তালিকা আপডেটের কাজ করছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতি মাসে মাদকের ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ সদস্য দপ্তর ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সুস্পষ্টভাবে বলেন, কক্সবাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে সারাদেশের ইয়াবার আগ্রাসন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। জানা গেছে, ইয়াবার ৬০ জন গডফাদার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করেন এবং ইয়াবা পাচারের রুটগুলো সুরক্ষিত রাখতে ভূমিকা রাখছেন। সব জায়গায় তাদের প্রভাব রয়েছে। কেউ গ্রেফতার হলে তার জামিনও তারা পাইয়ে দেন। এই গডফাদারের মাধ্যমেই দেশে আসে ইয়াবা। এই গডফাদারের মাধ্যমে কোটি কোটি ডলারের মাধ্যমে পেমেন্ট মিয়ানমারে পাঠানো হয়। গডফাদারের তালিকায় ওয়ার্ড থেকে সংসদ সদস্য পর্যন্ত জনপ্রতিনিধি আছেন। তবে নতুন তালিকায় একজন আলোচিত গডফাদারের নাম বাদ পড়েছে। তবে তার পুরো পরিবার ব্যবসায় জড়িত। কক্সবাজার থেকে নৌপথে দক্ষিণাঞ্চলে পিরোজপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঢাকা, খুলনার মংলা বন্দর, নোয়াখালী যায় ইয়াবা। এছাড়া স্থল পথেও ইয়াবা দেশের বিভিন্ন যাচ্ছে পৌঁছে যায়।
কক্সবাজারে মোট ৮টি থানার মধ্যে টেকনাফে ৯১২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী আছেন। এছাড়া কক্সবাজার সদর থানায় ৪৩ জন, রামুতে ৩৪ জন, কুতুবদিয়ায় ৪৮ জন, উখিয়ায় ৭ জন, মহেশখালীতে ৩০ জন এবং পেকুয়ায় ২২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী রয়েছেন। মূলত টেকনাথে পরিবারকেন্দ্রিকভাবে ইয়াবা ব্যবসা চলছে। মা-বাবা, স্ত্রীসহ অনেক পরিবারের প্রায় সবাই ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত। এদিকে মাদক ব্যবসায় জড়িত অধিকাংশের নামে ১০/১৫টি মামলা রয়েছে। কিন্তু ৬৫ ভাগ আসামি জামিনে থেকে দেদারসে ইয়াবা ব্যবসা করে যাচ্ছেন। বাকিদের মধ্যে কেউ পলাতক আবার কেউ গ্রেফতার হননি। উল্লেখযোগ্য ব্যবসায়ীদের মধ্যে রয়েছেন টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা রফিক উদ্দিন ও তার ভাই বাশপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাওলানা আজিজ উদ্দিন, টেকনাথ সদর ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়া প্রমুখ। এদের মধ্যে মাওলানা আজিজ উদ্দিন ও তার ভাই রফিক উদ্দিন এবং শাহজাহান মিয়া নৌপথ নিয়ন্ত্রণ করেন। বড় চালান আসে সাগর পথে।
সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে দেশের সব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইয়াবা প্রতিরোধে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করলেও অধিকাংশ গডফাদার ধরাছোয়ার বাইরে থাকায় দিন দিন ইয়াবা সরবরাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কক্সবাজারের কোথাও না কোথাও প্রতিদিন ইয়াবার বড় বড় চালান ধরা পড়ছে। আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিজিবি এসব চালানের সাথে যাদের গ্রেফতার করছে তারা বহনকারী। কিন্তু নেপথ্যেই থেকে যাচ্ছে ইয়াবা নামক মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত এই গডফাদাররা।

এসব গডফাদাররা দীর্ঘদিন ধরে ধরাছোয়ার বাইরে। আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, বরাবরই গডফাদাররা রক্ষা পাওয়ায় দেশে ইয়াবা ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা কক্সবাজার জেলায় ইয়াবা পাচারকারীদের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যায়। ব্যবসায়ী জড়িত কর্মকর্তাদের মোটা অঙ্কের উেকাচ দিয়ে থাকে। অপরদিকে চট্টগ্রাম রেঞ্জ কিংবা কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও থানাসমূহে বদলি হয়ে আসতে অধিকাংশ কর্মকর্তাকে মোটা অঙ্কের উেকাচ দিতে হয়। এই সকল প্রশাসনের সঙ্গে ৬০ গডফাদাদের সখ্যতা রয়েছে। ওই সব প্রশাসন কিংবা থানায় এক বছর চাকরি করলে তার দুই পুরুষের আর অর্থের প্রয়োজন হয় না। এমন বক্তব্য বিভিন্ন কর্মকর্তাদের মুখে শোনা যায়। শহর কিংবা গ্রাম দেশের এমন কোন জায়গা নেই যেখানে ইয়াবা পাওয়া যায় না। ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত গডফাদারা ধরা না পড়ায় এর বিস্তার রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে একাধিকবার ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত গডফাদারের নতুন নতুন তালিকা তৈরি করা হলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয় অপারেশন কার্যক্রম নেই। এরই মধ্যে কক্সবাজারে ইয়াবা ব্যবসায়ের সঙ্গে যুক্ত ৬০ জন গডফাদারের তালিকা রয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় র্যাব, পুলিশ, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, কোস্টগার্ড, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে ইয়াবা গডফাদারের তালিকা তৈরি করা হয়।
কক্সাবাজার জেলার টেকনাফসহ ৮টি উপজেলা নিয়ন্ত্রণকারী ৬০ গডফাদার হলেন, টেকনাফের ওলিয়াবাদ এলাকার আব্দুল শুকুর, আব্দুল আলিম, মারুফ বিন খলিল ওরফে বাবু, বাজারপাড়ার সাবেক পুলিশ ইন্সপেক্টর আবদুর রহামনের ছেলে সায়েদুর রহমান নিপু, নিপুর মা শামছুন্নার, চৌধুরীপাড়ায় পৌর কাউন্সিলর মৌলভী মজিবুর রহমান, মো. শফিক, মো. ফয়সাল, আলির ডেলের আক্তার কামাল ও তার সহদর শাহেদ কামাল, খানকারপাড়ার কামরুল হাসান রাসেল, শিলবনিয়াপাড়ার হাজী সাইফুল করিম, সাইফুল ইসলাম, আচারবনিয়ার আবুল কালাম, পশ্চিম লেদার ইউপি সদস্য নুরুল হুদা, টেকনাফ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাফর আহমেদ, তার ছেলে মোস্তাক মিয়া, দিদার মিয়া, সদর ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান, ডেলপাড়ার মো. আমিন, তার ভাই নুরুল আমিন, নাজিরপাড়ার ইউপি সদস্য এনামুল হক, মৌলভীপাড়ার একরাম হোসেন, আব্দুর রহমান, নাজিরপাড়ার সৈয়দ মেম্বার, নয়াপাড়ার শামসুল আলম মারকিন, বাহারচরার ইউপি চেয়ারম্যান মৌলভী আজিজ উদ্দিন, শ্যামলাপুরের হাবিবুল্লাহ, কচুবনিয়ার মৌলভী বসিরউদ্দিন ওরফে ডাইলা, খানকারপাড়ার মৌলভী বোরহান, পুরান ফোরলানপাড়ার শাহ আলম, নাজিরপাড়ার জিয়াউর রহমান, তার ভাই আব্দুর রহমান, মধ্যম জালিয়াপাড়ার মোজাম্মেল হক, দক্ষিণ জালিয়াপাড়ার জোবায়ের হোসেন, কাউন্সিলর কুলালপাড়ার নুরুল বশত ওরফে নুসরাত, পুরান ফোরলানপাড়ার আব্দুল হাকিম ওরফে ডাকাত আব্দুল হাকিম, হাতিয়ারগোনার মো. আব্দুল্লাহ, জালিয়ারপাড়ার জাফর আলম ওরফে টিটি জাফর, গোদারবিলের আলি আহমেদ চেয়ারম্যানের ছেলে আব্দুর রহমান, তার পুত্র জিয়াউর রহমান, গোলারবিলের চেয়ারম্যান নুরুল আলম, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর দুই ছেলে মো. রাশেদ, মাহবুব মোর্শেদ, বাজারপাড়ার মো. শাহ মালু, নির্মল ধর, পশ্চিম লেদার নুরুল কবির, বড় হাবিবপাড়ার ইউসুফ জালাল বাহাদুর, নাইটেংপাড়ার ইউনুস, উলুমচামুরীর আব্দুল হামিদ, পশ্চিম শিকদারপাড়ার সৈয়দ আহমদ ছৈয়তু, রঙ্গিখালীর হেলাল আহমেদ, জাদিমুরার হাসান আব্দুল্লাহ, উত্তর জালিয়াপাড়ার মোস্তাক আহমেদ ওরফে মুছু, কুলালপাড়ার মৃত রশিদ চেয়ারম্যানে তিন পুত্র মোশাররফ হোসেন চৌধুরী, দেলোয়ার হোসেন টিটু, আলমগীর হোসেন, শাবপুরিরদিন শাবরং ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হামিদুর রহমান, নয়াপাড়ার রোহিঙ্গা শিবিরের নেতা মো. আলম ওরফে মাত আলম, মঠপাড়ার আব্দুল জব্বার ও তার ভাই মো. আফসার। সুত্র, ইত্তেফাক

পাঠকের মতামত: